বদরুল আলম মজুমদার

  ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

জনগণেই আস্থা ঐক্যফ্রন্টের

সব গুঞ্জনের অবসান

বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন করতে পারে—দুই দিন ধরেই এমন গুঞ্জন চলে আসছিল। ঐক্যফ্রন্টের হাইপ্রোফাইল মিটিংয়ের পর বিষয়টি পরিষ্কার করার কথা ছিল। নির্বাচনে থাকা না থাকা নিয়ে যখন জোর গুঞ্জন মাঠে, ঠিক তখনই ঐক্যফ্রন্ট থেকে জানানো হয়—৩০ তারিখের ভোটের মাধ্যমেই নির্বাচন কমিশন, সরকার ও পুলিশ বাহিনীর একতরফা আচরণের জবাব দিতে চান নেতারা। এজন্য ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন গতকাল এক বিশেষ বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে দেশবাসীকে ভোটের মাধ্যমে বিপ্লব ঘটানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সারা দেশে নিজেদের প্রার্থীদের মাঠে নামতে না দেওয়ার অভিযোগ করে আসছে ঐক্যফ্রন্ট। সরকারি দলের কর্মী-সমর্থকদের হাতে জোটের বহু প্রার্থী আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিএনপির প্রায় ৫ হাজার নেতাকর্মীকে আটক এবং নতুন করে ৪০০টির অধিক মামলা দেওয়া হয়েছে। প্রচারণার শেষ দিনেও শতাধিক প্রার্থী মাঠেই নামতে পারেননি। তা ছাড়া তফসিল ঘোষণার পর এ জোটের প্রায় ১৭ প্রার্থীকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এ অবস্থায় দলের অধিকাংশ প্রার্থী ভোটের মাঠে থেকে নির্বাচন করতে পারার ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করেছেন দলের হাইকমান্ডের কাছে। এরপরই ভোটের মাঠে খবর চাউর হয় বিএনপি জোট ভোটে থাকছে না। কট্টর অংশটি বর্তমান কাঠামোয় নির্বাচন না করতে একাট্টা ছিলেন বরাবরই। তবে দলের উদারপন্থিরা যেকোনোভাবেই নির্বাচনে থাকার পক্ষে আছেন।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের প্রার্থী শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী গতকাল অভিযোগ করে গণমাধ্যমকে বলেছেন, নির্বাচন করার কোনো পরিবেশই তার এলাকায় নেই। সেখানে পুলিশ ও প্রশাসনের সহায়তায় শাসক দলের পেটোয়া বাহিনী সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিনেও তিনি প্রচারে অংশ নিতে পারেননি। এ অবস্থায় কেন্দ্র চাইলে নির্বাচন বর্জনকে স্বাগত জানানোর কথা বলেন কেন্দ্রীয় এই নেতা।

সূত্র জানায়, মূলত কট্টর অংশের নেতারাই নির্বাচনের আগে ভোট বর্জনের একটি বার্তা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছড়িয়ে দেয়। এমন গুজবে সরকারের পক্ষ থেকেও প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও শোনা যায়। বিশেষ করে বিএনপি ভোট বর্জন করতে পারে এমন খবরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ হঠাৎ দেশে ফিরে আসেন। দেশে এসেই তিনি ঢাকা-১৭ আসন থেকে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। এরশাদের এমন অবস্থান নেওয়ার পেছনে বিএনপির ভোট বর্জনের খবরের গুজবও কাজ করেছে বলে জানা গেছে। যদিও জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টিকে কিছু জানেন না বলে প্রতিবেদককে জানান।

ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক সূত্র জানায়, ভোটের মাঠে থেকেই বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলার পক্ষে মত দিয়েছেন অধিকাংশ নেতা। তবে বিএনপি মহাসচিবসহ বেশ কয়েকজন নেতা নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে কথা বললেও শেষ পর্যন্ত তারাও নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে মোকাবিলা করার কথা জানিয়েছেন। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি দূতাবাস থেকেও বিএনপিকে ভোটে থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলার পরামর্শ দেওয়া হয়। গতকাল বিজয়নগরে ঐক্যফ্রন্টের অস্থায়ী কার্যালয়ে গণফোরামের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন অভিযোগ করেছেন, নির্বাচন কমিশনের ‘নির্লজ্জ’ পক্ষপাতমূলক আচরণের পর তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সংসদ নির্বাচনে মোতায়েন করা সেনাবাহিনীর কাছ থেকে কার্যকর ভূমিকা আশা করা দুরূহ। এর পরও ৩০ ডিসেম্বর দেশের মানুষ যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তা নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে একটি লিখিত বক্তব্যে ড. কামাল বলেন, দেশের ঐক্যবদ্ধ জনগণ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের যেকোনো গণবিরোধী নীলনকশা রুখে দেব। তিনি বলেন, জনগণের প্রতি আমাদের আহ্বান, আগামী ৩০ ডিসেম্বর নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোটকেন্দ্রে যান। পছন্দের মার্কায় ভোট দিয়ে নিজেদের মালিকানা নিশ্চিত করুন এবং হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করুন।

সেনাবাহিনী মাঠে নামার বিষয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, জনগণের প্রত্যাশা ছিল দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য মাঠে নামলে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হবে। কিন্তু নির্বাচনে মোতায়েন করা সেনাবাহিনী সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। নির্বাচনের বাকি আর দুই দিন। এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দৃশ্যমান হয়নি। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য আমেরিকাসহ বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমতি দিলেও ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্বের কৌশল নিয়েছে।

তবে দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পক্ষের সুস্পষ্ট ইঙ্গিতের কারণেই বিএনপি ভোটের মাঠে থাকতে চায় শেষ পর্যন্ত। বিশেষ করে গতকালই জাতিসংঘ মহাসচিবের বিবৃতিকে বিশেষ গুরুত্বে সঙ্গে নিয়েছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। জাতিসংঘ মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেস বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভয়ভীতিহীন ও দমন-পীড়নহীন পরিবেশ নিশ্চিত করতে সবপক্ষের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হয়, তা নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান। গতকাল বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের মহাসচিবের পক্ষ থেকে তার মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এ বিবৃতি দেন।

এ ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকেও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বজায় রাখতে সরকার নির্বাচন কমিশন ও বিরোধী পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার বলেছেন, ৩০ ডিসেম্বরে ভোটের দিন সহিংসতার আশঙ্কা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ভোটের দিন অধিকমাত্রায় সহিংসতার আশঙ্কা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য ব্যবস্থা নিতে ইসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঐক্যফ্রন্ট,জনগণ,আস্থা,গুঞ্জন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close