নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

কোন পথে ঐক্যফ্রন্ট বিএনপি

ভোটের মাঠে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোটের ভূমিকা শেষ পর্যন্ত কী হয় তা নিয়ে এখন জোর জল্পনা চলছে। ঐক্যফ্রন্ট এর আগে জানিয়েছিল ২৪ ডিসেম্বর সেনাবাহিনী নামার পর পরিস্থিতি পাল্টে যাবে এবং তারা নির্বাচনের শেষ পাঁচ দিন মাঠ দখল করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের সে পরিকল্পনা সফল হয়নি।

তারা অভিযোগ করেছেন, গত সোমবার সেনাবাহিনী নামার পরও পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে যায়নি। গত তিন দিন ধরে মাঠে আগের মতোই অওয়ামী লীগের প্রচার-প্রপাগান্ডার প্রভাব বেশ লক্ষণীয়। এই অবস্থায় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি ভোট বর্জনের ঘোষণা দিতে পারে বলে গত দুই দিন ধরে জোর জল্পনা চলছে রাজনীতির অঙ্গনে। অবশ্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, নির্বাচন থেকে আমরা সরে যাব না। ওরা যেন বলতে না পারে যে সরে গেছে। আমরা কেন সরে যাব? শেষ পর্যন্ত যদি অসম্ভব করে দেয় তখন মানুষ দেখবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও দলীয় নেতাকর্মীদের ভোট কেন্দ্রে ভোট দিয়ে ভোট গণনা শেষে বাড়িফেরার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল বগুড়ায় নিজের এলাকায় এক জনসভায় বলেছেন, সরকার তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে।

এদিকে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ঐক্যফ্রন্ট এবং বিএনপি ভোটের মাঠে থাকবে কি না এটা তাদের ব্যাপার। তবে যত বিতর্কই থাকুক না কেন শেষ পর্যন্ত বড় দুই দলের ওপরই গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। প্রত্যেক বড় দলেরই মনে রাখতে হবে দল কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় বরং জনগণের সম্পদ। শেষ মুহূর্তে এসে নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া নিয়ে চিন্তা-ভাবনা মোটেও সমীচীন নয়। কারণ তাদের প্রার্থীরা তো মাঠে আছেন। তারা এত দিন ধরে শ্রম ও অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। শেষ মুহূর্তে সরে গেলে প্রার্থীদের বিশাল ক্ষতি এবং হতাশার সৃষ্টি হবে। নির্বাচন থেকে সরে গেলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনো সমস্যা থাকলে আইনি দিক থেকে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ হারাবে বিএনপি।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে বেশি কিছু অর্জনের সুযোগ নেই। বরং নির্বাচনে অংশ নিলে এর মধ্যে কোনো ব্যত্যয় থাকলে তা তুলে ধরা যাবে। সেটাও কম নয়। কাজেই নির্বাচন বর্জন কোনো সমাধান হতে পারে না। লড়াইয়ে মাঠে একবার যখন কেউ নামে সেখান থেকে তার পিছু হটার সুযোগ নেই। সব বাধা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, দলটির রক্ষণশীল অংশ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে তাদের আপত্তির কথা এখনো বেশ জোরেই দলের ভেতরে প্রচার করছে। তবে বাস্তবতার আলোকে দলের উদারপন্থীরা মনে করছেন, প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। লড়াই-সংগ্রাম করে রাজনৈতিক ভিত্তি মজবুত করা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ারই একটি অংশ।

এদিকে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি শেষ মুহূর্তে ভোটের মাঠ থেকে সরে গেলে নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বে কি না এ ব্যাপারে নানা সমীকরণ চলছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি ভোট থেকে সরে দাঁড়ালে পক্ষান্তরে অওয়ামী লীগই লাভবান হবে। কেননা ব্যালটে বিএনপি এবং বিরোধীদের প্রতীক রয়েছে। ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে বলেই গণ্য হবে। তাছাড়া ১৪ দল ও মহাজোটের যেসব শরিক দল কোনো আসন পায়নি তারাও নিজেদের মতো করে কিছু প্রার্থী দিয়ে রেখেছে। এজন্য ১৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী শূন্য হয়ে যাওয়ার পরও বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় কারো জয়ী হওয়ার সুযোগ নেই। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমাদের একটি সুুস্পষ্ট কৌশল আছে। অন্যরা যদি সরেও যায় তাও এবার বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফাঁদ তৈরি করতে দেব না।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিএনপি,ঐক্যফ্রন্ট,নির্বাচন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close