কাইয়ুম আহমেদ

  ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

ভোটের আগে নৌকার পালে যোগদানের হাওয়া

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে বিএনপির ৫ সহস্র্রাধিক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে এসেছেন। এদের মধ্যে আছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরামর্শকদের অন্যতম ইনাম আহমেদ চৌধুরী। দলটিতে এসেছেন সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও। ভোটের আগে এই যোগদানকে বিজয় দেখছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

নভেম্বর মাস থেকে শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ও সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ৫২০০ জনের মতো আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। তারা সবাই আসন্ন নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। সর্বশেষ গত শুক্রবার নড়াইল সদর উপজেলার গোবরা বাজার কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিএনপি নেতা মো. সুলতান মোল্যাসহ শতাধিক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুকের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে তারা যোগ দেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় গণভবনে ৮৮ জন অবসরপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির প্রতি সংহতি ও সমর্থন জানিয়েছেন। ইনাম আহমেদ চৌধুরী গত বুধবার সন্ধ্যায় গণভবনে শেখ হাসিনার হাতে ফুল দিয়ে দলটিতে যোগ দেন। ২০০১ সালে বিএনপি সরকারের আমলে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।

গতকাল বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় বিএনপির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। এরা হলেন উপজেলা সদরের দক্ষিণ গোবর্দ্ধন গ্রামের বিএনপি নেতা মো. শাহজাহান হাওলাদার, বিএনপি নেতা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, মো. লিয়াকত হোসেন সরদার, পৌর শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুম সরদার, পৌরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সভাপতি মো. জালাল সরদারসহ পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী। আগের দিন শেরপুরের শ্রীবরদীতে বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে এসেছেন। তারা হলেন ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ইনতাছ আলী, সদস্য সুলতান নুরী, লাভলু সরকার, ইদ্রিস আলী, ধলা মিয়া, নাজমুল মিয়া, শহিদ আলম, সাইফুল ইসলামসহ প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী।

আর মানিকগঞ্জের ঘিওরের বড়টিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদ হোসেন বাবরের নেতৃত্বে ১১ ইউপি সদস্যসহ ৫ শতাধিক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে এসেছেন। ইউপি সদস্যরা হলেন রমজান আলী, সরফ আলী, দুলাল মিয়া, মো. শহিমুদ্দিন, শাহিনুর রহমান, আবদুল বাতেন, আবুল হাশেম, সৈকত মিয়া, আবদুর রহিম, চপলা বেগম ও হেলেনা আক্তার।

গত বৃহস্পতিবার সংহতি ও সমর্থন জানানো অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে একজন পিএসপি কর্মকর্তা, সাবেক আইজিপি ১৫ জন, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি ১৫ জন, সাবেক ডিআইজি ২৪ জন, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি তিনজন, সাবেক এআইজি ও পুলিশ সুপার ১১ জন, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ১৫ জন।

সাবেক পিএসপি কর্মকর্তা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক আইজিপি এ টি আহাম্মেদুল হক চৌধুরী, সাবেক সচিব ও পুলিশ কর্মকর্তা মো. মমিনউল্লাহ পাটওয়ারী, সাবেক আইজিপি কুতবুর রহমান, মো. শামসের আলম, এ কে এম এনায়েতউল্লাহ দেওয়ান, মো. আবদুর রউফ, মো. আওলাদ হোসেন মিয়া, কাজী বজলুর রহমান, মো. আবদুল হাননান, মো. রুহুল আমিন, মুহ. আবদুল হাননান খান, এম সানাউল হক, মো. নুরুল আনোয়ার, এ কে এম শহীদুল হক।

সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মো. সরওয়ার হোসেন, মোহাম্মদ আবদুর রহিম খান, মো. নুরুল আলম, মো. আলী ইমাম চৌধুরী, মো. ফজলুল হক, মো. আবদুর রহিম, খন্দকার মোজাম্মেল হক, গোলাম মোস্তফা, মো. লুতফর রহমান মিয়া, মো. মতিউর রহমান, মো. আবদুল মান্নান, মো. আবদুল মাবুদ, আমূল্য ভূষণ বড়ুয়া, মো. নাজমুল হক, ফাতেমা বেগম, বিনয় কৃষ্ণ বালা, নওশের আলী।

সাবেক ডিআইজি মো. আবু হানিফ, দেওয়ান হাবিবুল্লাহ, মো. সফিক উল্লাহ, খন্দকার সাহেব আলী, কাজী নজরুল ইসলাম, মো. মোখলেসুর রহমান, শাহ আলম সিকদার, পি আর বড়ুয়া, মো. তোফাজ্জল হোসেন, মো. ওয়ালিউর রহমান, নিরাবরণ কুমার চন্দ, মোস্তফা জামাল উদ্দিন আল আজাদ, কাজী আনোয়ার হোসেন, মো. আলতাফ হোসেন মোল্লা, চৌধুরী আহসানুল কবীর, মো. সাজ্জাদ হোসেন, মোস্তাক হোসেন খান, সফিকুর রহমান, মকবুল হোসেন ভূঁইয়া।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. গিয়াস উদ্দিন, গোলাম মোস্তফা, মীর নওশের আলী, মো. সিরাজুল ইসলাম, আওরঙ্গজেব খান লেনিন, নূর মোহাম্মদ। একইদিন হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে বিএনপি নেতা হাজী রমজান মিয়ার নেতৃত্বে চার শতাধিক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। নগর গ্রামে সংসদ সদস্য মজিদ খানের হাতে ফুল দিয়ে তারা আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

সাতক্ষীরার আশাশুনিতেও বিএনপির শতাধিক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। খাজরা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন মাস্টারের নেতৃত্বে ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াছ হোসেন, কৃষক দলের সভাপতি শাহিনুর রহমান, শ্রমিক দলের সভাপতি ছাইফুল ইসলাম, বিএনপি নেতা ছাইফুল ইসলাম বাচ্চু, আবদুল মজিদ, ইউনিয়নের প্রত্যেক ওয়ার্ডের সভাপতি, সম্পাদক মিলে প্রায় শতাধিক নেতাকর্মী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপির হাতে নৌকা তুলে দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

গত সোমবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে পাহাড়িয়াকান্দি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৫ শতাধিক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। স্থানীয় সংসদ ও বর্তমান প্রার্থী ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলামের হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন বিএনপি নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার, শামসুদ্দিন কালা মিয়া, বোয়ালী মিয়া ও মনির হোসেন প্রমুখ।

জামালপুরে গত শনিবার বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। তারা হলেন জামালপুর শহর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আশরাফুল ইসলাম সিদ্দিকী মামিম, শহর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফুরকানুল ইসলাম রিপন, ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, আজিজুর রহমান আজিজ, হাজী মোস্তফাসহ অর্ধশত নেতাকর্মী।

এদিকে, এক যুগ পর দেশে ফিরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন আফ্রিকা প্রবাসী বিএনপি নেতা মুক্তার হোসেন। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- দেখে তিনি বিএনপি ছেড়েছেন বলে জানিয়েছেন।

বুধবার (১২ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগ যোগ দিয়েছেন পঞ্চগড় বিএনপির নেতাকর্মীদের একাংশ। এদের মধ্যে রয়েছেন দেবীডুবা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ইউপি সদস্য মজিবর রহমান ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবদুল মজিদ সরকারের নেতৃত্বে দলটির শতাধিক নেতাকর্মী। পঞ্চগড়-২ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরুল ইসলাম সুজন তাদের বরণ করে নেন।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বিএনপি থেকে চারবার নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান সাজেদুর হক লিটনও আওয়ামী লীগে এসেছেন। ১৩ ডিসেম্বর পছন্দের প্রার্থী না পেয়ে বরগুনার পাথরঘাটায় বিএনপির নেতাকর্মীরা দলে দলে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। তাদের মতে, উপজেলার অন্তত এক হাজার নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। বিএনপি নেতা মো. শাহ আলম ও কালমেঘা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আনোয়ার হোসেন পল্টুর নেতৃত্বে দলের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগে যোগ দেন।

আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ১৪৭ জন কর্মকর্তা। ২৭ নভেম্বর বিকেলে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে তারা শেখ হাসিনার সরকার ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।

সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক ওই কর্মকর্তাদের মধ্যে ১০৯ জন সেনাবাহিনীর, ১৮ জন বিমান বাহিনীর এবং ১৯ জন নৌ বাহিনীর। সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল তিনজন, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ১৮ জন, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ১৯ জন, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ৭ জন, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল ২০ জন। এছাড়াও অবসরপ্রাপ্ত মেজর রয়েছেন ৩৫ জন।

তাছাড়া ক্যাপ্টেন ও লেফটেন্যান্ট পদমর্যাদার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও রয়েছেন। নৌবাহিনীর মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার অ্যাডমিরাল ২ জন, অবসরপ্রাপ্ত কমডোর ৭ জন, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ৬ জন, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কমান্ডার ১ জন, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ৩ জন। বিমান বাহিনীর মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত এয়ার ভাইস মার্শাল ১ জন, অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমডোর ২ জন, অবসরপ্রাপ্ত গ্রুপ ক্যাপ্টেন ৮ জন, অবসরপ্রাপ্ত উইং কমান্ডার ৭ জন।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আওয়ামী লীগ,আ.লীগে যোগ,নৌকা,একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close