প্রতীক ইজাজ

  ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

নির্বাচনী ইশতেহার

আ.লীগ প্রাধান্য দিচ্ছে গ্রাম এবং গ্রামীণ তরুণ জনগোষ্ঠীকে

আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রার্থীদের প্রচারে সরব দেশ। সেই প্রচারণায় এবার নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে নতুন করে মাঠে নামছে রাজনৈতিক দলগুলো। আজ ইশতেহার ঘোষণা করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সাত অধ্যায়ের এই ইশতেহারে প্রাধান্য পেয়েছে ২১ বিষয়।

ভোটারদের পাশাপাশি দেশ ও দেশের মানুষের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে বিশেষ নির্বাচনী ইশতেহার দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আজ সকাল ১০টায় রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইশতেহার ঘোষণা করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক ইশতেহারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের গত দুই মেয়াদের সাফল্য তুলে ধরে আগামীর পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।

এতে ২০২১, ২০৩০, ২০৪০, ২০৭১ এবং ২১০০ এ রকম কয়েকটি ধাপে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় থাকবে, তার পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। ইশতেহারের অন্যতম দিক ডেল্টা পরিকল্পনা, ব্লু ইকোনমি ও তরুণদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা। ডেল্টাপ্ল্যানে আগামী ২১০০ সালে বাংলাদেশ কোথায় অবস্থান করবে, সেই লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এবারের ইশতেহার কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি বিশেষজ্ঞ দল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ইশতেহার তৈরি করেছেন।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এই ইশতেহার হবে সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশের রোডম্যাপ। ইশতেহার প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, ২১ বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে ইশতেহারে। এগুলো হলো আমার গ্রাম- আমার শহর : প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ; তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি: তরুণ-যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা; দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ; নারীর ক্ষমতায়ন; লিঙ্গসমতা ও শিশুকল্যাণ; পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা; সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ নির্মূল; মেগা প্রজেক্টগুলোর দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন; গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা; সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি; দারিদ্র্য নির্মূল; সর্বস্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি; সর্বস্তরে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা; বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা; সার্বিক উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার; আধুনিক কৃষিব্যবস্থা; দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন; ব্লু-ইকোনমি তথা সমুদ্রসম্পদ উন্নয়ন; নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা; প্রবাসী কল্যাণ কর্মসূচি এবং টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন।

দলীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারে রয়েছে সাতটি অধ্যায়। প্রথম অধ্যায়ে রয়েছে ইশতেহারের অঙ্গীকার, দ্বিতীয় অধ্যায়ে রয়েছে পটভূমি, তৃতীয় অধ্যায়ে রয়েছে গত দুই মেয়াদে সরকারের সাফল্য ও আগামী মেয়াদের জন্য পরিকল্পনা, চতুর্থ অধ্যায়ে দেশের অর্থনীতির চিত্র, পঞ্চম অধ্যায়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব, ষষ্ঠ অধ্যায়ে ভবিষ্যৎ দিকদর্শন এবং সপ্তম অধ্যায়ে রয়েছে দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান। এসব অধ্যায়ের মধ্যে আবার উপ-অধ্যায়ে ভাগ করে তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন বিষয়।

আওয়ামী লীগের ইশতেহারে দেশের তরুণ এবং গ্রাম ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্য এই জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জীবনমানের উন্নয়ন ও সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি। বিশেষ করে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর যে ৭৭ শতাংশ মানুষ গ্রামের; সেই জনগোষ্ঠীর সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি থাকছে এই ইশতেহারে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্্যাপানের ঘোষণাও থাকবে ইশতেহারে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমরা যে অঙ্গীকারগুলো করেছিলাম সেই অঙ্গীকারের প্রায় ৯৫ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে। আর কিছু কাজ চলমান। তা জনগণকে জানানো হবে। ইশতেহারে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমাদের অঙ্গীকারের সুস্পষ্ট চিত্র থাকবে। আগামী ১০০ বছরে বাংলাদেশ কেমন হবে, এর একটা সুস্পষ্ট চিত্র থাকবে। এর বাইরে তরুণদের জন্য সুস্পষ্ট অঙ্গীকার থাকবে।

দলীয় সূত্রগুলো জানায়, তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য ইশতেহারে নানা প্রতিশ্রুতি থাকছে। এর মধ্যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বেকার ভাতা প্রদান, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানো, আধুনিক নানা সুযোগ-সুবিধার নিশ্চয়তার ঘোষণা উল্লেখযোগ্য। থাকছে নারীর ক্ষমতায়ন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান, মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে কঠোর অবস্থানের ঘোষণাও।

ইশতেহারে গ্রামগুলোয় শহরের মতো নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। দ্বিতীয় পদ্মা সেতু ও দ্বিতীয় যমুনা সেতু নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু-২ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণসহ নানা ঘোষণা থাকছে। এতে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রস্তাব যেমন থাকবে, তেমনি গত নির্বাচনে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অগ্রগতি নাগরিকদের কাছে তুলে ধরা হবে।

এ ছাড়া সুশাসনকেও প্রাধান্য দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে এর বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা এবং সুশাসন নিশ্চিত করার অঙ্গীকার থাকছে এ ইশতেহারে। প্রশাসন এবং পুলিশ বাহিনীকে আরো আধুনিক ও জনহিতৈষী করে গড়ে তোলার কথা থাকবে। গত ১০ বছরে দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে। এখন শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং শিক্ষাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবেÑ এমনটাই জানান দলের নেতারা।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি রোধে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থার উল্লেখ থাকছে ইশতেহারে। জিডিপি, বিনিয়োগ কীভাবে বাড়ানো যায়, কীভাবে মুদ্রাস্ফীতি কমানো যাবে, সে বিষয়গুলো থাকবে। ইনস্যুরেন্স ব্যবস্থা কী হবে এবং ইনস্যুরেন্স কীভাবে ভূমিকা রাখবে, সে বিষয়ে ইশতেহারে উল্লেখ থাকবে। ব্লু ইকোনমি (সমুদ্র অর্থনীতি) অর্জনে ইশতেহারে দিকনির্দেশনা থাকবে। ভারত ও মিয়ানমারের কাছ থেকে সমুদ্রসীমা বিজয়ের পর বিশাল জলরাশি বাংলাদেশের হয়েছে। এ সমুদ্রসীমায় যে সম্পদ রয়েছে, সেটা কীভাবে আহরণ করে অর্থনৈতিক উন্নতি করা হবে, সে ব্যাপারে ঘোষণা থাকবে।

দলের শীর্ষ নেতারা আরো জানান, ভিশন-২০২১ ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ উন্নয়নশীল ও মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। আগামীতে লক্ষ্য, উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা। ইতোমধ্যেই ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে অগ্রসর করে নিয়ে তা গ্রামপর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া হবে। গ্রামকে পরিণত করা হবে শহরে। ৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ এবং আগামী ২১০০ সালে অর্থাৎ ৮০ বছর পর বাংলাদেশ কেমন হবে ইশতেহারে সে ঘোষণা দেওয়া হবে। এর জন্য ১০০ বছরের ডেল্টাপ্ল্যান তুলে ধরা হবে ইশতেহারে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আ.লীগ,নির্বাচনী ইশতেহার,একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন,আওয়ামী লীগ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close