প্রতীক ইজাজ

  ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

সহিংসতা ও নির্বাচন বানচালে ষড়যন্ত্র

ভোটের মাঠে সজাগ আ.লীগ-বিএনপি

নির্বাচনে যেকোনো ধরনের সংঘাত এড়াতে ও ষড়যন্ত্র প্রতিরোধে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করেছে আওয়ামী লীগ। এ ব্যাপারে সজাগ থাকতেও বলা হয়েছে। নির্বাচন ঘিরে ষড়যন্ত্র হতে পারেÑ এমন আভাস পেয়ে প্রায় এক বছর আগেই বিশেষ কৌশল নির্ধারণ করে রেখেছিল দলটি। এ জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে বিশেষ টিম ও ভোটকেন্দ্রভিত্তিক টিম গঠন করা হয়। গত সোমবার থেকে প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর গত কয়েক দিনে নির্বাচনী সংঘাত দেখা দেওয়ায় এখন সেই টিমগুলোকেই নতুন করে সতর্ক করেছে আওয়ামী লীগ। সজাগ থাকতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে বার্তা পাঠানো হয়েছে।

দলের নীতিনির্ধারক নেতারা জানান, কেন্দ্র থেকে দলীয় প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। সংঘাত এড়িয়ে সতর্ক অবস্থান নিতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে কয়েক দিন ধরেই কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূলে কথা বলছেন। কেউ যাতে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে, সে জন্য দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সজাগ ও সংযত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেন কিছুতেই কোনো পক্ষ ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে, সে জন্য সজাগ থাকার জন্য কেন্দ্র থেকে তৃণমূলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

দলের নেতারা মনে করছেন, বিএনপিকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করছে। এ কারণে ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নেতারা নানা ধরনের ইস্যু খুঁজছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিজেরা ইস্যু তৈরি করছে। ভোটের পরিবেশ নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করতে চায় তারা।

দলীয় সূত্রগুলো আরো জানায়, আওয়ামী লীগের পাশাপাশি সংঘাত এড়াতে ও ষড়যন্ত্র বানচাল করতে সরকারেরও বিশেষ প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিশেষভাবে সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালন করার নির্দেশনা দিয়েছে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে জিরো টলারেন্স অবস্থানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীর সমন্বয়ে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখার নির্দেশনাও দিয়েছে সংস্থাটি। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনের আগে ও পরে মিলে ১০ দিনের জন্য মাঠে নামছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

এমনকি সুষ্ঠু নির্বাচনে ইসির এমন নির্দেশনা পালনে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট সতর্ক থাকবে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রধানরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র মতে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যেকোনো ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে পুলিশ। নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় তারা বিশেষ গুরুত্ব দেবে। কেউ নির্বাচন ঘিরে সহিংসতায় জড়ালে এবং ফৌজদারি মামলার যেকোনো আসামিকে আইনের আওতায় নিতে তৎপর থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ব্লক রেইড ও অভিযান জোরদার করা হবে। নির্বাচন ঘিরে সংখ্যালঘু ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে বলেও জানান কর্মকর্তারা।

পুলিশের উচ্চপদস্থ একাধিক কর্মকর্তা আরো জানান, গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি ও দাগি অপরাধীদের গ্রেফতার করতে অভিযান চলছে। নতুন করে কেউ যাতে বেআইনি কাজে সংঘবদ্ধ হতে না পারে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা নির্বিঘœ রাখতে পুলিশ সর্বোচ্চ তৎপর।

নির্বাচনে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করার কথা পুনর্ব্যক্ত করছেন ক্ষমতাসীনরা। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা যতদূর সম্ভব দল ও অ্যালায়েন্সকে সতর্ক থাকতে বলেছি। যাতে দেশে স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট না হয়। এ ব্যাপারে আমাদের নেতাকর্মীদের সতর্ক করেছি এবং যেই জায়গাগুলো ভায়োলেন্সপ্রবণ সেসব জায়গায় বিশেষভাবে আমাদের নেতাকর্মীদের সংযত থাকার নির্দেশ দিয়েছি। তিনি এমনও বলেন, নির্বাচনে সরকার কোনো রকম হস্তক্ষেপ করবে না। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের প্রার্থীদের ওপর হামলা হচ্ছে। সরকার হিসেবে সহিংসতাকে আমরা এড়িয়ে চলেছি যথাসাধ্য। সার্কুলারের মাধ্যমে আমরা আমাদের সব শাখাকে সহিংসতা থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছি। যতটা সম্ভব ধৈর্য ধরতে বলেছি।

দলীয় সূত্রগুলো বলছে, এবার যেকোনো মূল্যে সুষ্ঠু নির্বাচন চায় আওয়ামী লীগ। মাঠের ভোটে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসতে চায়। কোনো পক্ষই যেন কোনো ইস্যু তৈরি করে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা চালাতে না পারে সে জন্য কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

দলের নেতারা মনে করেন, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো এবারও বিএনপি ও তাদের জোট শরিকরা নির্বাচন বানচালে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিতে পারে। সেবার জ্বালাও-পোড়াও করেছে। হরতাল-অবরোধ ডেকে দেশে বড় ধরনের একটা অচলাবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা সফল হয়নি। এবারও নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনে ঐক্যফ্রন্টকে নিয়ে সেই পুরনো ষড়যন্ত্রে নেমেছে। নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। তবে নির্বাচন বানচাল করার জন্য কোনো ধরনের নাশকতা সৃষ্টি করতে চাইলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করা হবে বলেও জানান দলের নীতিনির্ধারকরা।

দলীয় সূত্র মতে, মাঠের ভোট নিশ্চিত করতে ভোটকেন্দ্রভিত্তিক ৪০ সহস্রাধিক কমিটি গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া আসনভিত্তিক নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা টিম কাজ চালাচ্ছে। সেখানে যুক্ত করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের এবং সরকার সমর্থক বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীদের। প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে দেশের আলোচিত বরেণ্য সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী তারা নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সারা দেশে ৪০ সহস্রাধিক ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার দায়িত্ব পালন করছেন। কেউ বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিহত করবে।

এ ব্যাপারে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, বিএনপি ‘মিথ্যাচার’ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করছে। দলের প্রার্থীদের প্রচারে বাধার ব্যাপারে মিথ্যা অভিযোগ করছে। এটা বিএনপির পুরোনো অভ্যাস। তারা এই মিথ্যাচার নির্বাচনের দিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত করবে।

নির্বাচনী প্রচারে বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষ ও হত্যার ঘটনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, হত্যার রাজনীতি আওয়ামী লীগ করে না। যারা হত্যার রাজনীতি করে তারা অতীতেও (২০১৪ সালে) জ্বালাও-পোড়াও করে নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। তারাই আজ এসব হামলা চালাচ্ছে। জনগণ আমাদের সঙ্গে রয়েছে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে রয়েছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী অতন্ত দক্ষ। তারা যেকোনো হামলা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। এসব হামলার ঘটনায় যারাই দায়ী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনবেন।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সজাগ,ভোটের মাঠ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close