গাজী শাহনেওয়াজ

  ০৬ নভেম্বর, ২০১৮

খালেদা-তারেক দলের শীর্ষ পদ হারাচ্ছেন

সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের গড়া দল বিএনপির শীর্ষ পদে থাকতে পারছেন না তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ছেলে তারেক রহমান (মা-ছেলে)। দলীয় গঠনতন্ত্র সংশোধনের বিষয়ে আদালতের দেওয়া নির্দেশনায় শীর্ষপদ হারাচ্ছেন তারা। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) করণীয় কিছু নেই বলে দলটিকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আদালতের নির্দেশনার বাইরে তাদের যাওয়ার সুযোগ নেই, বিষয়টি উল্লেখ করে আজ কিংবা আগামীকালের মধ্যে চিঠি দিতে যাচ্ছে ইসি। এরই মধ্যে কমিশন নথিতে অনুমোদন দিয়েছে। খবর নির্ভরযোগ্য সূত্রের।

জানা গেছে, বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধন বিষয়ে আদালতে একটি রিট দায়ের হয়। গত ৩১ অক্টোবর বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মাদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেয়। কাউন্সিলে আনা ওই সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে মোজাম্মেল হোসেন নামের এক ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনে একটি আবেদন করেছিলেন। ওই আবেদন এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলেছেন হাইকোর্ট। আর ওই আবেদনের নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই রিটের আদেশে বলা হয়, গঠনতন্ত্রের ৭ নম্বর ধারা বাতিল করে সংশোধিত যে গঠনতন্ত্র নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে বিএনপি, সেটি গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন উচ্চ আদালত। ৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী আদালতে দণ্ডিত কারো দলের সদস্যপদ থাকার যোগ্যতা থাকবে না। আদালতে রিটকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন মেহেদী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমি। এ রায় নিয়ে ক্ষমতসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি স্ববিরোধী অবস্থান নেয়।

রায়কে আওয়ামী লীগ স্বাগত জানালেও বিএনপির দাবি এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গঠনতন্ত্রের সংশোধন নিয়ে প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হতে পারেন বুঝেই এই ধারাটি সংশোধন করেছে বিএনপি। এর মাধ্যমেই প্রমাণ হয় বিএনপি দুর্নীতিবাজের দল। অবশ্য বিএনপির দাবি, এই গঠনতন্ত্র সংশোধনী হঠাৎ করে হয়নি। ২০১৬ সালের মার্চে দলের জাতীয় সম্মেলনেই সেটা অনুমোদন দেওয়া হয়। সেটি নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছে পরে।

এদিকে, আদালতের নির্দেশনা পেয়ে নড়েচড়ে বসে ইসি। কমিশনের আইন শাখা দীর্ঘ পর্যালোচনা করে আদালতের নির্দেশনা নিয়ে। কিন্তু নির্দেশনার বিষয়ে আদালতের বিএনপি পক্ষ হয়ে নিষ্পত্তি না করলে কমিশনের করার কিছু নেই বলে তারা একমত হয়। ফলে ৭ নম্বর ধারাটি বাতিল না হলে এরই মধ্যে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান বিএনপির নেতৃত্বে থাকতে পারবেন না বলে ইসি মনে করছে। কারণ দলটির গঠনতন্ত্রে বলা আছে, দণ্ডিতরা পদে থাকতে পারবেন না। এর আগে বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধনীতে বাদ দেওয়া বিধান কেন বেআইনি ও সংবিধানের ৬৬ (ঘ)-এর পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবকে এক মাসের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। কারণ খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান দুইজনই একাধিক মামলায় দণ্ডিত। দুইজনই দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছর করে কারাদণ্ড পেয়েছেন। এছাড়া ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমান যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেয়েছেন।

আদালতের নির্দেশনার আলোকে ইসি নথিতে সিদ্ধান্তে উল্লেখ করেছে, মাননীয় হাইকোর্টের উক্ত আদেশটি প্রতিপালন করার আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই উক্ত বিষয়টি নির্বাচন সহায়তা ও সরবরাহ অধিশাখা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। ৩(খ) অনুচ্ছেদে বর্ণিত বিষয়টি বিএনপিকে জানিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কাউন্সিলের দ্বিতীয় পর্বে কাউন্সিলরদের ভোটে কয়েকটি ধারা বাতিল হয়। কাউন্সিলে উত্থাপিত হওয়ার আগে গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটি ৭ ধারাটি বাতিল করার প্রস্তাব করে। এ প্রস্তাব স্থায়ী কমিটিতে অনুমোদন পায়। পরে কাউন্সিলে সেটি পাস হয়। কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির প্রধান নজরুল ইসলাম খান ধারাগুলো সম্পূর্ণ না পড়ে শুধু নম্বর উল্লেখ করে তা বাতিল করে, এতে কাউন্সিলরদের সম্মতি আছে কিনা জানতে চান। কাউন্সিলররা হাত তুলে সম্মতি জানান। দীর্ঘদিন পর চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনে সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা দেয় বিএনপি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাজনীতি,বিএনপি,পদ,খালেদা-তারেক
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close