বদরুল আলম মজুমদার

  ০১ নভেম্বর, ২০১৮

সংলাপ

আশাবাদী না হলেও হতাশ নয় বিএনপি

সংলাপে বিএনপি খুব বেশি আশাবাদী না হলেও, এখনই হতাশ নয়। সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরপাকড়, হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে দিগুণ করা, হাইকোর্টের এক নির্দেশে ইসিকে বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ থেকে বিরত রাখাÑসব মিলিয়ে বিএনপি ক্ষুব্ধ। এসব কর্মকা- দেখে দলের নেতারা সংলাপ নিয়ে আশার কিছু দেখছেন না। তবে সংলাপ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত দু-একজন নেতা এখনই হতাশ হতেও রাজি নন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা দ্বিগুণ হওয়ার প্রেক্ষাপটে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে সংলাপ ফলপ্রসূ হবে না। এতে সরকারের সংলাপের আন্তরিকতা প্রমাণ করে না। তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়াকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক লাখা হয়েছে। জামিন পেলেও তাকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। সেই মামলায় সাজা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রবীণ আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, সংলাপের ফলাফল নিয়ে আগে থেকে সন্দেহ পোষণ করা ঠিক হবে না। আমাদের ধরে নিতে হবে, সরকারের আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান করার একটা সদিচ্ছা আছে। সে জন্য আগে থেকে যদি আমরা সন্দেহ করা শুরু করি বা অবিশ্বাস করি, তাহলে তো আমরা ফলপ্রসূ কিছু অর্জন করতে পারব না।

এদিকে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সবচেয়ে বড় দল হচ্ছে বিএনপি। বিএনপির কয়েক নেতা এরই মধ্যে সংলাপের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তবে সংলাপের বিষয়ে যারা সংশয় প্রকাশ করছেন, এটা তাদের ব্যক্তিগত মত বলেই মনে করছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। তারা মনে করছেন, সবার যে একই মত হবে তা তো নয়। অনেকে বিশ্বাস করতে চাচ্ছেন না। অনেকে মনে করেন সরকার এটাকে ধূ¤্রজাল সৃষ্টি করার জন্য করেছে। এ ধরনের মতামত থাকতে পারে। তবে সংলাপের সঙ্গে যুক্ত নেতারা এখনই মানা না মানার জায়গায় যেতে চান না। সংলাপ নিয়ে নেতিবাচক ধারণা থাকতে পারে। তবে আশাবাদী না হয়ে তো কিছু করার নেই। তাই সংলাপরে সঙ্গে যুক্ত নেতারা বলছেন, শুরুতেই নিরাশ হওয়া যাবে না। তাহলে তো আর এ সংলাপের কোনো প্রয়োজনই পড়ে না। সংলাপে নেতারা খোলা মনে অংশগ্রহণ করবেন এবং সেখানে তাদের বক্তব্য তুলে ধরবেন। অবশ্যই ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা নিয়েই আলোচনা হবে। কারণ আমাদের চিঠিতে সাত দফার কথাই বলেছি।

এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি ঘরানার সুশীলসমাজের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, একদিকে সংলাপ আয়োজন, অন্যদিকে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানোর বিষয়টি খুব অনাখাক্সিক্ষত ছিল ফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপির জন্য। এর ফলে ঐক্যফ্রন্টের ও বিএনপি ওপর এক ধরনের চাপ বেড়েছে। যেহেতু সাত দফার প্রথমটি হচ্ছে খালেদার মুক্তির প্রসঙ্গ। আর এখানেই তৈরি হলো নতুন জটিলতা। সংলাপে নেতারা খালেদা জিয়ার বিষয়টি নিয়ে খুব বেশিদূর এগোতে না পারারই কথা। তারপরও বিএনপি নেতারা এটিকে গুরুত্ব দিতে চাইবে। অন্যদিকে সংলাপের পাশাপাশি এক মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়ার কারণে বিএনপিতে একটি অংশ বিষয়টিকে ইস্যু করার সুযোগ পেয়েছে। গতকাল বিএনপি আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে অনেক নেতাই খালেদা ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়, দাবি তুলে বক্তব্য দিয়েছেন। এই অংশটি বরাবরই বলে এসেছে, খালেদা জিয়াকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। এতে একাদশ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপিতে দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, খালেদা জিয়ার মামলা ও রায়ের বিষয়টি যে রাজনৈতিক, তা দেশের মানুষ জানে। ব্যাপারটি যেহেতু রাজনৈতিক, তাই এর সমাধানও খুঁজতে হবে রাজনৈতিকভাবেই। তবে এ বিষয়টিকে আলোচনা করে আমরা সমঝোতার দিকে যাব।

দলীয় একটি সূত্র জানায়, সংলাপে সফলতা নিয়ে বিএনপির বড় একটি অংশ সন্দেহ ও সংশয়ে আছে। বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যের দেওয়া সাত দফা দাবি আদায় করার জন্য দলটি আন্দোলনের বিকল্প কিছু দেখছে না। সংলাপকে তারা সরকারের সময়ক্ষেপণ কৌশল বলেই মনে করছে।

এ কারণে আন্দোলনকেই তারা দাবি আদায়ের হাতিয়ার হিসেবে নিতে চায়। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই লাগাতার কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে কর্মসূচি কী হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সূত্র জানায়, লাগাতার অসহযোগ ও হরতালের মতো কর্মসূচি আসতে পারে। দলটির কয়েক স্তরের নেতাদের আন্দোনের বার্তা ইতোমধ্যে পৌঁছানো হয়েছে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, শুধু সংলাপের ওপর ভরসা করে আমরা বসে থাকব না। দাবি আদায়ে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রাজপথে কর্মসূচি দিতে প্রস্তুত রয়েছে।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আশাবাদী,হতাশ নয়,বিএনপি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close