বদরুল আলম মজুমদার

  ২৪ অক্টোবর, ২০১৮

ঘুরেফিরে মহাজোটই এরশাদের ঠিকানা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে শুরু হয়েছে দুই জোটের নতুন হিসাব-নিকাশ। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি শুরু করেছে। সেক্ষেত্রে বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনে এককভাবে নির্বাচনের কথা বললেও তাদের ঠিকানা ঘুরেফিরে সেই মহাজোটই বলে মনে করা হচ্ছে। দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বিরোধী দলীয় নেতা এবং জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ নেতাকর্মীদের সেই অনুযায়ী নির্দেশ দিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, গত শনিবারের সমাবেশে এরশাদ যাই বলুক—জাতীয় পার্টির শেষ ঠিকানা মহাজোটই। যেহেতু নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে সে কারণে মহাজোটের বিকল্প নেই জাতীয় পার্টির সামনে। সমাবেশে এরশাদ যা বলেছেন, তা মূলত মহাজোটে নিজের কদর বাড়ানোর জন্যই। তাছাড়া এককভাবে জাতীয় পার্টি মোটেই ভালো করতে পারবে না। কারণ জানতে চাইলে এ নেতা বলেন, ‘সত্য বলতে দ্বিধা নেই, সারা দেশে দলের সাংগঠনিক অবস্থা ভালো নয়।’

দলীয় সূত্র জানায়, এরই মধ্যে আসন বণ্টন নিয়ে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। আর তৃতীয় আরেকটি জোটেও নেতৃত্বের সুযোগ পেতে পারে এরশাদের দল। গত শনিবারের সমাবেশের পর থেকে ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন এরশাদ। নির্বাচন যে দল বা জোটই জিতুক সেখানে কিং মেকার হতে চান এরশাদ। তবে সেটি এখনো দুঃস্বপ্ন বলেও মনে করেন জাতীয় পার্টির মাঠ পর্যায়ের নেতারা।

সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে মহাজোট থেকেই জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন করতে হবে। আর বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে জোট সমীকরণ ভিন্ন হবে। তখন জাতীয় পার্টিকে হয়তো এককভাবেই নির্বাচন করতে হবে। তবে এককভাবে নির্বাচন করলে দলটি পাঁচ সিটও পাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে খোদ দলটির নেতাকর্মীদের। তারা মনে করেন, সত্যিকারের বিরোধী দলের অবস্থান পেয়েও যে পার্টির শীর্ষ নেতারা মন্ত্রিত্বের লোভ ত্যাগ করতে পারেন না, ক্ষমতার লোভে তারাই দলের বারোটা বাজাচ্ছেন। আর পার্টির চেয়ারম্যান এখনো তা টের পাচ্ছেন না। নির্বাচনের পর হাড়ে হাড়ে টের পাবেন।

অপরদিকে, গত নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের হয়ে অংশ নেয় এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। জোটবদ্ধভাবে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য ভেতরে ভেতরে সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। অতীতে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে এরশাদ ঐকমত্যের সরকার থেকে নিজেসহ দলের তিন নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মুজিবুল হক চুন্নু, মশিউর রহমান রাঙ্গা বেরিয়ে যাবেন বলেও একাধিকবার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই ঘোষণা আর কখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

এদিকে, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি মরিয়া হয়েই লড়বে—এমন ধারণায় ১৪ দলীয় জোটের পরিধি বাড়ানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। জোটের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সম্প্রতি সমমনাদের নিয়ে জোট বৃদ্ধির কথা জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এবারও ‘সমঝোতার নির্বাচন’ করার প্রস্তাব দিয়েছেন এরশাদকে।

আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি যে একটি বড় ফ্যাক্টর হবে তা বুঝে এখন থেকেই দলটির সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলও। সুযোগ বুঝে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে ৭৫টি আসনের প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, জোটের মাধ্যমে জাতীয় পার্টি অংশ নিলে কমপক্ষে ৪০টি আসনে ফয়সালা হতে পারে। এছাড়া বিভিন্ন সভা সমাবেশে এরশাদ বলেছেন, জাতীয় পার্টি এখন রাজনীতিতে বড় ফ্যাক্টর। আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জাতীয় পার্টি প্রস্তুত। আমরা এখন ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। মানুষের ভালোবাসা আছে, সরকারও গঠন করবে জাতীয় পার্টি।

এদিকে, ভোটের রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির গুরুত্ব বাড়াতে ৫৮ দলীয় জোট গঠন করেছেন এরশাদ। আর মহাজোটের অন্তর্ভুক্ত হতে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি ও আসন ভাগাভাগিতে কোনো ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হবে না জানিয়ে দলটির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী লীগের কাছে আমাদের দাবি থাকবে প্রায় শতাধিক আসনের। সেজন্য আমাদের দলের নেতারা কাজ করে যাচ্ছেন।

পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, জাতীয় পার্টি সব সময় একটি নির্বাচনমুখী দল। আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে এককভাবে প্রার্থী দিতে জাতীয় পার্টি প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। তবে মহাজোটের অংশ হয়ে নির্বাচন করবে কিনা সে বিষয়ে তিনি কিছুই বলেননি এ প্রতিবেদকের কাছে।

জাতীয় পার্টির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, বিএনপির নেতারা প্রকাশ্যে কিছু না বললেও আড়ালে তাদের অধীনে ২০ দলীয় জোটে ভেড়ার নানা টোপ দিচ্ছেন। বিএনপির অধিকাংশ নেতা গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকায় এই প্রস্তাব সরাসরি এরশাদ পর্যন্ত পৌঁছানো যাচ্ছে না। দলটির এক সাংগঠনিক সম্পাদক বলেছেন, টোপ দেওয়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তবে এর বাস্তবতা এখনো দৃশ্যমান নয়। দুই দফা এরশাদের সিঙ্গাপুর যাওয়ার ঘটনায় রাজনীতিতে এরশাদ আবারও ডিগবাজি খাওয়ার গুঞ্জনও আছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে সেই গুঞ্জন সত্য হয় কিনা তাও এখন দেখার বিষয়।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সংসদ নির্বাচন,জাতীয় পার্টি,মহাজোট,হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close