খন্দকার রবিউল ইসলাম, রাজবাড়ী

  ১০ অক্টোবর, ২০১৮

২ দলেই প্রতিপক্ষ নিজেরা

দখল রাখতে মরিয়া আ.লীগ, বিএনপিতে কোন্দলই বড় বাধা

আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচন কেন্দ্র করে সংসদীয় আসন-২০৯ রাজবাড়ীতে ঝুলছে রংবেরঙের পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজের নামে শুভেচ্ছা বার্তার মাধ্যমে জানান দিচ্ছেন জাতীয় নির্বাচনের খুব বেশি দিন বাকি নেই। রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজবাড়ী-১ আসন। এ আসনে মাঠে নেমেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। নির্বাচনের কয়েক মাস বাকি থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় শীর্ষ নেতারা নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে মাঠে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এ আসনে মনোনয়ন পেতে আ.লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা সবচেয়ে এগিয়ে বলে জানা গেছে। এবারের নির্বাচনে আ.লীগ চাইছে এ আসন ধরে রাখতে আর বিএনপি চাইছে কীভাবে হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করা যায়।

জেলার রাজনীতিতে আওয়ামী লীগে অতীতের তুলনায় গ্রুপিং তীব্র থাকলেও খুব একটা প্রকাশ্য নয়। রাজবাড়ী-২ আসনকে ‘কাজী-চৌধুরী’ পরিবারের প্রেস্টিজ ইস্যু হিসেবেই বিবেচনা করছেন দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মী। দলের একাধিক নেতা বলছেন, ‘কাজী’ ও ‘চৌধুরী’ এ দুই পরিবার মূলত জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে। একে অন্যকে ঠেকাতেই ভিন্ন রাজনীতি করছেন এ পরিবারের সদস্যরা।

অন্যদিকে বিএনপিতে রয়েছে আন্তবিরোধ। কমিটি নিয়ে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে দুই গ্রুপ। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে খালেক গ্রুপ ও খৈয়ম গ্রুপের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরাও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এরপরও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীও মাঠে নেমেছেন।

আওয়ামী লীগ : বর্তমানে এ আসনে আ.লীগ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন বর্তমান এমপি কাজী কেরামত আলী, সংরক্ষিত মহিলা এমপি কামরুন্নাহার চৌধুরী লাভলী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল জব্বার, জেলা আ.লীগের জেষ্ঠ্য সহসভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক আকবর আলী মর্জি, জেলার যুগ্ম সম্পাদক ও রাজবাড়ী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি কাজী ইরাদত আলী, পৌর মেয়র মহম্মদ আলী চৌধুরী এবং সদর উপজেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতি এস এম নওয়াব আলী।

নিজের প্রার্থিতা নিয়ে জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী বলেন, ‘রাজবাড়ীতে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। সুখে-দুঃখে নেতাকর্মীদের পাশে থেকে জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, কাউকে অবমূল্যায়ন করিনি। দল যদি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয়, সেক্ষেত্রে দলের সিদ্ধান্ত মেনে আমি তার জন্য কাজ করব। তবে আমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী আমাকে আবারও মনোনয়ন দেবেন এবং আমি আমার নির্বাচনী এলাকার জনগণের ভোটে পুনরায় এমপি নির্বাচিত হব।’

সংরক্ষিত মহিলা এমপি কামরুন্নাহার চৌধুরী লাভলী বলেন, তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার পর দলের অবহেলিত নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার কোন চাওয়া-পাওয়া নেই, আমি জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, কাজের মূল্যায়ন জনগণ করবে। রাজবাড়ী-১ আসন থেকে আমি মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করি।’

জেলা আ.লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও রাজবাড়ী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি কাজী ইরাদত আলী মনে করেন অতীতের তুলনায় রাজবাড়ী জেলা আ.লীগ এখন অনেকটা শক্তিশালী। তিনি বলেন, ‘আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আগামী নির্বাচনে যদি নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়ে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেন তাহলে আমি রাজবাড়ী-১ আসন থেকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করতে পারব।’ তিনি আরো জানান, রাজবাড়ীর জনগণের কথা চিন্তা করে ইতোমধ্যে একটি ঝুট মিল নির্মাণ করেছেন। যেখানে দুই হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তাছাড়া নিজ জমিতে তার বাবার নামে একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নিজ বসতভিটায় গড়ে তুলেছন একটি এতিমখানা। এ ছাড়াও তার বিভিন্ন এলাকার মসজিদ মাদরাসাসহ অসংখ্য তার অনুদান রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজবাড়ীর সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কাজী ইরাদত আলীর রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। ইউনিয়ন ও ২ পৌরসভার ওয়ার্ডগুলো কমিটির করে দিয়েছেন নিজ হাতে। তৃণমূলের একাধিক নেতা বলেন, ‘নেত্রী যদি কাজী ইরাদত আলীকে মনোনয়ন দেন, আমরা তার বিজয়ের জন্য আমাদের সবকিছু দিয়ে তাকেই নৌকার মাঝি বানাব। কারণ যার কাছে সব বিপদ-আপদে আশ্রয় পাই আমারা।’

নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয়ে আলাপকালে জানতে চাইলে জেলা আ.লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ফকির আব্দুল জব্বার বলেন, ‘আমি একজন আওয়ামী লীগার আমার। রক্তে বঙ্গবন্ধুর আমার আদর্শ, শেখ হাসিনা। আমি একজন মজিবের আদর্শে সৈনিক রাজনীতির পাগল। আমি গোয়ালন্দ উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলাম এবং বর্তমানে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হয়েছি। নেত্রী আমাকে ভালোবেসে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বানিয়েছেন। আমার যাওয়ার কিছু নেই। তবে নেত্রী যদি আমাকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন দেন, আমি নির্বাচন করব এবং আশা করি এই বিপুল ভোটে জয়লাভ করতে পারব বলে আমি আশা করি।’

গোয়ালন্দ উপজেলা যুবলীগের সম্পাদক নজরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, ‘কাজী কেরামত আলী বিনয়ী ও ভদ্র নেতা হিসেবে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তাছাড়াও আমরা যারা গোয়ালন্দ উপজেলাবাসী আওয়ামী লীগকে ভালোবাসি, তারা মনে করেন, নেত্রী মনোনয়ন দিলে কাজী পরিবারের মধ্যেই দেবেন। আমরা কাজী পরিবারের সঙ্গে আছি, আগামীতেও থাকব।’

বিএনপি : বিএনপির জেলা কমিটি ঘোষণাকে ঘিরে পুরনো গ্রুপিং নতুনভাবে বেড়েছে। নতুন কমিটি নিয়ে একাধিক সংবাদ সম্মেলন করেছে দুটি গ্রুপ। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তৃণমূল বিএনপি নেতা সাবেক এমপি ও বর্তমান সভাপতি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম, অপরটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলের সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ।

নেতাদের অভিযোগ, দুঃসময়ে যারা আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন তাদেরকে কমিটিতে না রেখে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। তাদের দাবি, বর্তমান সদর উপজেলার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এম এ খালেক বিএনপি প্রার্থী হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে সেভাবে থাকেন না। অথচ অতীতে এ আসনটিতে বিএনপি প্রার্থী প্রয়াত নেতা গোলাম মোস্তফা নির্বাচিত হলেও ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবং ১৯৯২ সালের উপনির্বাচনে অ্যাডভোকেট এম এ খালেক বিএনপি প্রার্থী হয়েও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আ.লীগ প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। কিন্তু পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপিদলীয় সভানেত্রীর আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ও তিনবার নির্বাচিত রাজবাড়ী পৌর মেয়র আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়মকে মনোনয়ন দিলে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন সাবেক এমপি জেলা বিএনপির সভাপতি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম। এ ছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ খালেক, সহসভাপতি অধ্যক্ষ মঞ্জুরুল আলম দুলাল, সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আসলাম মিয়া, সহসভাপতি মো. আফছার আলী সরদার।

গ্রুপিং বিষয়ে সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সভাপতি আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম বলেন, ‘দেশে বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল, এ দলে নেতা অনেক। ফলে কিছু দ্বিমত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে নির্বাচনের প্রশ্নে আমরা এক আছি। এ বিষয়ে আমাদের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামীপন্থি বিশ্বাসঘাতকদের কোনো ছাড় নেই।’ তিনি আরো বলেন, ‘দলের দুঃসময় থেকেই আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের চাঙা করে রেখেছি। দলকে সামনে এগিয়ে নিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমি তিনবার পৌর মেয়র ও একবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি। রাজবাড়ী-১ আসনে আমার জনপ্রিয়তা আছে। তাই দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হলে মানুষ ভোট দিয়ে পুনরায় আমাকেই এমপি নির্বাচিত করবে—এটা আমার বিশ্বাস।’

আ.লীগ ও বিএনপির বাইরেও জাতীয় পার্টি রাজবাড়ী-১ আসনে সভাপতি অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান বাচ্চু মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামী, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ ও অন্যান্য দল জোট-মহাজোটের সঙ্গে একীভূত হয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছে বলে জানা গেছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কোন্দল,প্রতিপক্ষ,দখল,বিএনপি,আ.লীগ,রাজবাড়ী,সংসদ নির্বাচন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MySQL server version for the right syntax to use near 'WHERE news_id=143671' at line 3
Error!: SQLSTATE[23000]: Integrity constraint violation: 1062 Duplicate entry '143671' for key 'news_hits_counter.news_id'