বদরুল আলম মজুমদার

  ০৬ অক্টোবর, ২০১৮

ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে আন্দোলনে যেতে চায় বিএনপি

বিএনপি ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া যৌথভাবে আন্দোলনে নামবে, না পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করবে— এখনো বিষয়গুলো পরিষ্কার করতে পারেনি দলগুলো। তবে বিএনপি চাইছে যৌথভাবে রাজপথে থেকে সামনের কর্মসূচিগুলো এগিয়ে নিয়ে দাবি আদায় করতে। এমন চিন্তা থেকে দলটি আগামী ১০ অক্টোবর গ্রেনেড হামলা মামলার রায় নেতিবাচক হলেও তার প্রতিবাদে কঠোর কোনো কর্মসূচিতে যাবে না। গ্রেনেড মামলার রায় নিয়ে মাঠে নামলে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে জোট গঠনে বাধা তৈরি হতে পারে বলে মনে করে দলটি এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে বলে একটি সূত্র দাবি করেছে।

সূত্র জানায়, ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যৌথ কর্মসূচি পালন করার জন্য যুক্তফ্রন্ট ও ড. কামাল হোসেনের গণফোরামের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে, যুক্তফ্রন্টও তাদের পক্ষ কথা বলার জন্য প্রতিনিধি ঠিক করেছে। এক্ষেত্রে বিএনপির একটি পক্ষ এতদিন যোগাযোগ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিলেও গত বৃহস্পতিবারের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের চারজন সিনিয়র নেতাকে ঐক্যের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে এবার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাই কথা বলবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়।

জানা যায়, বিএনপির সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট থেকে আলোচনার জন্য একটি প্যানেল তৈরি করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে এ প্যানেল ঠিক করা হয়। প্যানেলে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে আছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জেএসডি সভাপতি আ স ম রব, বিকল্প ধারা মহাসচিব মেজর (অব.) মান্নান। এদিকে, বিএনপির পক্ষ থেকে করেছেন মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ ও নজরুল ইসলাম খান।

আগামী দু-একদিনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ও বিএনপির প্যানেল আলোচকদের মধ্যে বৈঠক হতে পারে। বৈঠকে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোটবদ্ধ আন্দোলন, কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হবে। অন্যদিকে, গণফোরাম থেকে আলোচনা এগিয়ে নিতে এরই মাঝে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আছেন নির্বাহী সভাপতি এড. সুব্রত চৌধুরী।

বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহের শুরু দিকে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরবেন ড. কামাল হোসেন। তিনি ফেরার পর বিএনপির প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বৈঠকে মিলিত হতে পারেন। তার সঙ্গে আলোচনা করেই পরবর্তী কর্মসূচির গতি প্রকৃতি নির্ধারিত হতে পারে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে আলোচনার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ড. কামাল হোসেন দেশে ফেরা ছাড়া ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা কি করবেন তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা মনে করি, বিএনপির দাবি আর ঐক্যের দাবি দাওয়াগুলো অধিকাংশ মিলে যাওয়ায় অন্দোলনের গতিপথ একই হতে পারে। তবে শেষ কথা বলার সময় এখনো আসেনি।

বিএনপি সূত্র জানায়, দলের নতুন কর্মসূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে আবারও বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশসহ নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। এভাবে তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত দলটি মাঠে কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করতে শিগগিরই জ্যেষ্ঠ নেতারা বৈঠক করবেন। সেখানেই নতুন কর্মসূচি ঠিক করা হতে পারে।

সূত্র জানায়, ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের দিন ১০ অক্টোবর ধার্য আছে। আলোচিত এই মামলায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অন্যতম আসামি। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা এই মামলায় নেতিবাচক রায়ের আশঙ্কা করছেন। নতুন কর্মসূচি দেওয়ার ক্ষেত্রে এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হবে, যাতে সরকার ২১ আগস্ট মামলার রায়ের সঙ্গে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিকে গুলিয়ে ফেলতে না পারে।

যুক্তফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যে এখন পর্যন্ত অনেকগুলো সমস্যা রয়ে গেছে। এসব সমস্যা আলোচনার মধ্য দিয়ে দূর করা সম্ভব বলেও মনে করেন নেতারা। তবে এ ক্ষেত্রে বিএনপিকে এগিয়ে আসতে হবে। যুক্তফ্রন্ট চায় বিএনপির সঙ্গে ঐক্য বাস্তবায়ন করার আগে আগামী নির্বাচনে প্রার্থিতা, সরকার গঠনে ভারসাম্য সৃষ্টির লক্ষ্যে লিখিত ঐকমত্য। এই ভারসাম্যের বিষয়ে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সমাবেশে বিএনপি তাদের অবস্থান প্রকাশ করলেও বিষয়টিকে আরো পরিষ্কার করতে চায় যুক্তফ্রন্ট।

যুক্তফ্রন্টের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা ক্ষমতার ভারসাম্য চাই। আগামী দিনে বাংলাদেশের ক্ষমতায় এক স্বৈরাচার গিয়ে আরেক স্বৈরাচার যেন না আসে, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ যেন নির্মাণ করতে পারি, এই লক্ষ্যে পরস্পরের সঙ্গে বোঝাপড়ার আলোচনা শুরু করেছি।’

উল্লেখ্য, গত ২ অক্টোবর যুক্তফ্রন্টের পক্ষে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার জন্য দায়িত্ব পেয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে মতপার্থক্য এখনো দূর না হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে ঐক্যের মাধ্যমে কর্মসূচির প্রণয়নের জোর চেষ্টা রয়েছে। দলটির অধিকাংশ নেতা ঐক্যের মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে বদ্ধপরিকর। এক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে হলেও বিএনপি ঐক্যর পথে এগিয়ে যাবে। সামনের কর্মসূচিগুলোও যৌথভাবে দেওয়ার চেষ্টা করবে। গতকাল সেগুন বাগিচায় এক আলোচনায় সভায় এমন আভাসই দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমেই আন্দোলনের উপযুক্ত কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেন, পাঁচটা দাবিতে দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এই জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই উপযুক্ত কর্মসূচি দেওয়া হবে। এমন কর্মসূচি দেওয়া হবে যে কর্মসূচির মাধ্যমে এই সরকারের পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। পরিস্থিতি বলে দেবে কী ধরনের কর্মসূচি দিতে হবে? গণমাধ্যমের অনেক বন্ধু জিজ্ঞাসা করেন কী ধরনের কর্মসূচি দেবেন কখন দেবেন? আমি বলতে চাই এগুলোর সময় নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। আগামী এক মাসেই আপনারা অনেক পরিবর্তন দেখতে পারবেন। তারা একতরফাভাবে যতই প্রচারণা করুক না কেনো, কোনো লাভ নেই।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঐক্য প্রক্রিয়া,বিএনপি,জাতীয় ঐক্য,একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close