বদরুল আলম মজুমদার

  ০৫ অক্টোবর, ২০১৮

মনোনয়ন তালিকা নিয়ে এরশাদ-রওশন দ্বন্দ্ব

মনোনয়নের তালিকা নিয়ে জাতীয় পার্টির দুই নেতার দ্বন্দ্ব এখন চরমে। পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সম্মতিতে শতাধিক আসনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। যা শিগগিরই আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর হাতে তুলে দেবেন এরশাদ। তবে এই তালিকা তৈরির বিষয়ে কিছুই জানেন না সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ।

তাকে না জানিয়ে গোপনেই তালিকাটি তৈরি করা হয়েছে। নেতাকে না জানিয়ে এ তালিকা প্রস্তুত করায় অনেকটা কোণঠাসা রওশনপন্থীরা। তাই করণীয় নির্ধারণে শিগগিরই বৈঠকে মিলিত হবেন তারা। সরকারি দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচনের যাওয়ার চিন্তায় এমন তালিকা প্রস্তুত করা হয় বলে দলটির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়।

সূত্র মতে, ১০০ জনের গোপন এ তালিকায় দলের অনেক সিনিয়র নেতাসহ রওশনপন্থী অনেকেই জায়গা পাননি। বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যেও অনেকে বাদ পড়েছেন। তবে তালিকায় এমন অনেক নাম এসেছে যাদের জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে সংশ্লিষ্টতা নেই। বিতর্কিত ব্যক্তিদের এ তালিকা দেখে চরম ক্ষুব্ধ রওশন। জাতীয় পার্টির একাধিক সিনিয়র

নেতা জানান, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি এলে মহাজোটের অংশীদার হয়ে নির্বাচন করবেন এরশাদ। এ জন্য তিনি আগে ভাগেই নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রাথমিকভাবে ১০০ আসন চাইবেন। তবে শেষ পর্যন্ত ৫০টি আসনে দফারফা করতে পারেন এরশাদ। এছাড়া মহাজোট সরকার গঠন করলে ছয়জন মন্ত্রী বানানোর দাবি থাকছে এরশাদের। তবে সরকারি দল এরশাদের স্ত্রী রওশনের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করছে।

রওশন অংশের নেতারা জানান, এরশাদের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না আওয়ামী লীগ। চেয়ারম্যানের মতি-গতি কখন কোন দিকে যায় তা বুঝা খুবই মুশকিল। তাই বাধ্য হয়েই রওশনকে কাছে রাখছে সরকারি দল। এর প্রমাণও পাওয়া যায় রওশনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলাদা বৈঠক থেকে। প্রথমে এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু প্রথম বৈঠকে রওশনকে না নেওয়ায় আলাদা তার সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। তবে রওশনের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করায় এরশাদ খুশি হননি। যার ফলে মনোনয়ন তালিকা প্রস্তুতে কোনো পরামর্শ নেননি রওশনের।

জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে, নানা নাটকীয়তার কারণে গত নির্বাচনে জাতীয় পার্টিতে এরশাদ ছিলেন কতৃত্বহীন। স্ত্রী রওশন এরশাদের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনে অংশ নেয় জাতীয় পার্টি। সে সময় দলের সব মনোনয়নও চূড়ান্ত করেন রওশন। এতে এরশাদের পছন্দের অনেক প্রার্থীকে সুযোগ দেওয়া হয়নি। এমপি হয়ে যান রওশন-ঘনিষ্ঠ বেশ কিছু নেতা। নির্বাচন শেষে বিরোধী দলের নেতাও হন রওশন। বিষয়টি তিনি মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। এজন্য তিনি রওশনের ওপর ভেতরে ভেতরে ভীষণ ক্ষুব্ধ ছিলেন। এবার নিজ হাতেই করতে চান সব। এসব বিষয়ে স্বামী- স্ত্রীর দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের। উপায় না দেখে মাঝে মাঝে স্ত্রীর সঙ্গে গলা মেলালেও তার ওপর বরাবরই নাখোশ ছিলেন এরশাদ।

সূত্র আরো জানায়, একাদশ নির্বাচন এরশাদের জীবনের শেষ নির্বাচন। শেষ জীবনে রওশনকে সরিয়ে জাতীয় পার্টিতে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চান সাবেক এই সেনা শাসক। নির্বাচনী কৌশলসহ প্রার্থী মনোনয়নের কাজগুলো একাই করতে চান এরশাদ। এমন ভাবনা থেকেই এরশাদ জাতীয় পার্টিতে নিজের একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া। এসব কারণেই শতাধিক প্রার্থীর তালিকা তৈরি করেন এরশাদ।

তালিকা তৈরির বিষয়ে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, তালিকার ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। এসব চেয়ারম্যান জানেন। তবে সরকারের সঙ্গে নির্বাচনে গেলে অবশ্যই আমাদের একটি তালিকা সরকারকে দিতে হবে। সেই প্রেক্ষাপটে হয়তো এমন তালিকা হয়ে থাকতে পারে।

এরশাদের তালিকায় উল্লেখযোগ্য যারা স্থান করে নিয়েছেন তারা হলেন ঢাকা-১ আসনের অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, ঢাকা-৪ আসনে সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা-৬ আসনে কাজী ফিরোজ রশীদ ও ঢাকা-১৭ আসনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, নরসিংদী-২ আজম খান, নরসিংদী-৪ নেওয়াজ আলী ভূঁইয়া, মানিকগঞ্জ-২ সৈয়দ আবদুল মান্নান, ময়মনসিংহ-৪ রওশন এরশাদ, ময়মনসিংহ-৫ সালাউদ্দিন আহমেদ মুক্তি, ময়মনসিংহ-৮ ফখরুল ইমাম, ময়মনসিংহ-১০ কারী হাবিবুল্লাহ বেলালী, কিশোরগঞ্জ-৩ মজিবুল হক চুন্নু, নারায়ণগঞ্জ-১ সাইফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ-৩ লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ-৫ সেলিম ওসমান, টাঙ্গাইল-৫ পীরজাদা শফিউল্লাহ আল মনির, রাজবাড়ী-১ অ্যাডভোকেট খন্দকার হাবিবুর রহমান বাচ্চু, ফরিদপুর-৩ এস এম ইয়াহিয়া, জামালপুর-৩ এম এ সাত্তার, জামালপুর-৪ ইঞ্জিনিয়ার মামুনূর রশিদ, শেরপুর-১ মো. ইলিয়াস, নেত্রকোনা-৩ মো. জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া। চট্টগ্রাম-৩ এম এ ছালাম, চট্টগ্রাম-৫ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৯ জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, চট্টগ্রাম-১৬ মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, কক্সবাজার-১ মৌলভী মো. ইলিয়াস, কক্সবাজার-২ আলহাজ মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ।

নোয়াখালী-২ ফজলে এলাহী সোহাগ, নোয়াখালী-৪ মোবারক হোসেন আজাদ, লক্ষ্মীপুর-২ মোহাম্মদ নোমান, ফেনী-৩ রিন্টু আনোয়ার, কুমিল্লা-৮ অধ্যাপক নূরুল ইসলাম মিলন, কুমিল্লা-১১ এইচ এন এম শফিকুর রহমান, চাঁদপুর-১ এমদাদুল হক রুমন, চাঁদপুর-২ মো. এমরান হোসেন মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ জিয়াউল হক মৃধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, রংপুর-১ মশিউর রহমান রাঙ্গা, রংপুর-২ অধ্যাপক আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলু, রংপুর-৩ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, রংপুর-৪ মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল, রংপুর-৫ ফকরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, রংপুর-৬ নুরে আলম জাদু, কুড়িগ্রাম-১ মোস্তাফিজুর রহমান, কুড়িগ্রাম-২ পনির উদ্দিন আহমেদ, কুড়িগ্রাম-৩ ডা. আক্কাস আলী, কুড়িগ্রাম-৪ অধ্যাপক মো. ইউনুছ আলী, লালমনিরহাট-১ মেজর (অব.) খালেদ আখতার, লালমনিরহাট-২ রোকন উদ্দিন বাবুল, লালমনিরহাট-৩ গোলাম মোহাম্মদ কাদের, নীলফামারী-১ জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, নীলফামারী-২ মো. সাজ্জাদ পারভেজ, নীলফামারী-৪ মো. শওকত চৌধুরী, গাইবান্ধা-১ ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, গাইবান্ধা-২ আবদুর রশিদ সরকার, গাইবান্ধা-৩ ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার, রাজশাহী-৩ শাহবুদ্দিন বাচ্চু, নওগাঁ-৩ অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন, নাটোর-২ মজিবুর রহমান সেন্টু, নাটোর-৪ অধ্যাপক আলাউদ্দিন মৃধা, সিরাজগঞ্জ-২ আমিনুল ইসলাম ঝন্টু, পাবনা-২ মকুল হোসেন সন্টু, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ মো. ইসমাইল আজাদ, বগুড়া-২ শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৬ নুরুল ইসলাম ওমর, জয়পুরহাট-২ কাজী আবুল কাশেম রিপন, ঠাকুরগাঁও-১ রেজাউর রাজি স্বপন চৌধুরী, ঠাকুরগাঁও-৩ মো. হাফিজউদ্দিন, দিনাজপুর-৬ মো. দেলোয়ার হোসেন।

সিলেট-১ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সিলেট-২ ইয়াহহিয়া চৌধুরী, সিলেট-৩ উসমান আলী চেয়ারম্যান, সিলেট-৪ এ টি ইউ তাজ রহমান, সিলেট-৫ মো. সেলিম উদ্দিন, সুনামগঞ্জ-৪ পীর ফজলুর রমান মিজবাহ, সুনামগঞ্জ-৫ আলহাজ জাহাঙ্গীর আলম, হবিগঞ্জ-১ আবদুল মুনিম চৌধুরী বাবু, হবিগঞ্জ-৩ আতিকুর রহমান আতিক, বরিশাল-৩ গোলাম কিবরিয়া টিপু, বরিশাল-৬ নাসরিন জাহান রত্না, পটুয়াখালী-১ এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, পিরোজপুর-১ আলহাজ নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-৩ ডা. রুস্তম আলী ফরাজী। খুলনা-১ সুনীল শুভ রায়, খুলনা-৩ শফিকুল ইসলাম মধু, সাতক্ষীরা-১ সৈয়দ দিদার বখত, কুষ্টিয়া-১ শাহরিয়ার জামিল জুয়েল, চুয়াডাঙ্গা-১ অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন, যশোর-৪ লে. কমান্ডার (অব.) সাব্বির আহমেদ।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জাপা,জাতীয় পার্টি,এইচ এম এরশাদ,এরশাদ ও রওশন,মনোনয়ন তালিকা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close