বিশেষ প্রতিনিধি

  ০৩ অক্টোবর, ২০১৮

এক মঞ্চ থেকে কর্মসূচির ভাবনা জাতীয় ঐক্যের

ছবি : সংগৃহীত

মাঠে নেমেছে যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরাম নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া। গত ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকার মহানগর নাট্যমঞ্চে প্রথম নাগরিক সমাবেশ করে তারা। সেখান থেকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনসহ ৫ দফা দাবি মেনে নিতে সরকারকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। দাবি না মানলে ১ অক্টোবর থেকে কর্মসূচি দেয়ারও ঘোষণা দেন জোট নেতারা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসব দাবি মেনে না নেওয়ায় আগামী ৭ অক্টোবর রোববার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিকাল ৪টায় নতুন কর্মসূচি হিসেবে মানববন্ধন করবে জোট। এ ব্যাপারে ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক আ ব ম মোস্তফা আমীন বলেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের উদ্যোগ নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তাই আমরা নতুন কর্মসূচি দিয়েছি।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে একই দাবিতে কর্মসূচি পালন করছে যুক্তফ্রন্ট। সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারা, আ স ম আবদুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি ও মাহমুদুর রহমান মান্না নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য পৃথক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে রয়েছে। এ দলগুলোর কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নিচ্ছেন।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া সূত্র মতে, ঐক্য প্রক্রিয়া ও যুক্তফ্রন্টের উদ্যোগে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ার যে চেষ্টা চলছে চলতি মাসেই এর সফলতা আসতে পারে। এজন্য বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। কয়েক দিনের মধ্যেই বৃহত্তর ঐক্যের রূপরেখা চূড়ান্ত করতে দলগুলোর প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে একটি স্টিয়ারিং কমিটি গঠন হবে বলেও জানান নেতারা। এ কমিটির মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যের দাবি ও লক্ষ্য চূড়ান্ত করে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা আরো জানিয়েছেন, অভিন্ন দাবিতে এক মঞ্চ থেকেই সামনে কর্মসূচি পালন করা হবে।

বিশেষ করে নির্বাচনী রাজনীতিতে এখন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ও যুক্তফ্রন্ট বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার কর্মসূচি এখন আলোচনার কেন্দ্রে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অভিন্ন দাবি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার। তফসিল ঘোষণার আগে সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবিও প্রায় অভিন্ন। এসব দাবি আর ইস্যুতে বৃহত্তর কর্মসূচির চিন্তা করছে দলগুলো। ঐক্য প্রক্রিয়া ঠিকঠাক মতো এগোলে ভবিষ্যতে এক মঞ্চ থেকে কর্মসূচি আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে গণজাগরণ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারকে দাবি পূরণে জোট বাধ্য করবে বলে নেতারা বলেছেন।

অবশ্য এই প্রক্রিয়ার ব্যাপারে খুবই সতর্ক অবস্থান সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে ঘোষিত দাবি কার্যকরে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে ১ অক্টোবর থেকে দেশজুড়ে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সভা-সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। এই আলটিমেটামকে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো গুরুত্ব দেওয়াই হয়নি। বরং বিএনপি, গণফোরাম, যুক্তফ্রন্ট, নাগরিক ঐক্যসহ বেশ কয়েকটি দল মিলে যে জোট হয়েছে, সেটিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। অক্টোবরে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী জোটের কর্মসূচিকেও ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে ১৪ দল। এমনকি এই ঐক্য প্রক্রিয়ার তৎপরতায় বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি নয় ক্ষমতাসীনরা। প্রয়োজনে তাদের প্রতিহত করার পক্ষেও সরকারি জোট।

ক্ষমতাসীনদের ধারণা, অক্টোবরে বিরোধী জোট নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মাঠে থাকবে। বিএনপি এসব জোটের সরকারবিরোধী তৎপরতায় উসকানি দিতে পারে। সম্প্রতি বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ বলেছেন, ‘রেডি হয়ে যান, ১ অক্টোবর থেকে রেডি হয়ে যান। ওই দিন থেকে সরকার পতনের কমর্সূচি পালন করতে হবে। জাতীয় ঐক্যের বিকল্প নেই।’ আর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশ থেকে বলা হয়েছে, অক্টোবর থেকে তারা সারা দেশে সমাবেশ করবেন।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা মনে করছেন, এককভাবে বিএনপির এখনো আন্দোলন করার সামর্থ্য নেই। সম্প্রতি জাতীয় ঐক্যের ব্যানারে বিএনপি যুক্ত হয়েছে। এতেই সন্দেহ বাড়ছে। এরই মধ্যে এদের ‘জাতির জন্য হুমকি’ আখ্যা দিয়ে প্রতিহতের জন্য মাঠে নামারও ঘোষণা দিয়েছে তারা।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যাপারে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘চিহ্নিত ব্যক্তিরা পরাজিত এবং হতাশ রাজনীতিকদের নিয়ে চক্রান্ত করেছে। আমি এখনই তাদের প্রতিহতের কথা বলব না। তবে জনগণকে নিয়ে নির্বাচনে লড়েই তাদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হতে হবে।’

তবে শক্ত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার আগেই জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার মধ্যে নানা ধরনের সন্দেহ দানা বেঁধে উঠেছে। বিশেষ করে বৃহত্তর ঐক্যের অন্যতম শরিক জোট যুক্তফ্রন্টের নেতৃত্বকারী দল বিকল্প ধারা ঐক্যে জামায়াতের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সংযুক্তি না রাখার বিষয়ে অনড় অবস্থান নেয়ায় বিষয়টিকে সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপি। আবার জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ না করার প্রশ্নে বিএনপির অনড় অবস্থানকে সহজভাবে নিচ্ছেন না যুক্তফ্রন্টের কোনো কোনো নেতা। যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান ও বিকল্প ধারার সভাপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বারিধারার বাড়িতে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর উপস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল স্বাধীনতাবিরোধী কোনো শক্তি বা দল বৃহত্তর ঐক্যে থাকতে পারবে না। এ ব্যাপারে বিএনপির সমাবেশের (রোববার অনুষ্ঠিত সমাবেশ) পর বিএনপি তাদের অবস্থান জানাবে বলেও ওইদিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সমাবেশ যেহেতু শেষ, এখন জামায়াতের বিষয়ে বিএনপি তাদের কী অবস্থান জানায় তা দেখার অপেক্ষায় আছে যুক্তফ্রন্ট।

এ ব্যাপারে অধ্যাপক বি. চৌধুরী বলেন, আমরা তো শুরু থেকেই বলে আসছি, স্বাধীনতাবিরোধী কেউ বৃহত্তর ঐক্যে থাকতে পারবে না। যারা আমাদের স্বাধীনতায় ও রক্তভেজা পতাকায় বিশ্বাস করে না, আমরা তাদের বিশ্বাস করব কেমন করে! তাছাড়া যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার মধ্যে ৫ দফার ভিত্তিতে যে লিখিত অঙ্গীকার হয়েছে সেখানেও পরিষ্কার লেখা আছে, স্বাধীনতাবিরোধীরা ঐক্যে থাকতে পারবে না। কাজেই লিখিত এই অঙ্গীকার থেকে কারো পেছনে যাওয়ার সুযোগ নেই।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সূত্র মতে, বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন চিকিৎসা শেষে থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফেরার পর বৃহত্তর ঐক্যের বৈঠক ডাকা হবে। সেখানে চলমান বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে। আলোচনা ফলপ্রসূ হলে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের সমন্বয়হীনতা কাটাতে একটি কেন্দ্রীয় লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হতে পারে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জাতীয় ঐক্য,নির্বাচনী রাজনীতি,কর্মসূচি,মঞ্চ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close