প্রতীক ইজাজ

  ০৩ অক্টোবর, ২০১৮

শক্ত অবস্থান বজায় রাখতে চায় আওয়ামী লীগ

ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে কর্মী সমাবেশের মধ্য দিয়ে অক্টোবর থেকে তফশিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত মাঠ দখলে রাখার এই ঘোষণা দেয় দলটি। এ সময় নির্বাচনী প্রচারণা ও তৃণমূলে দলের যেকোনো দ্বন্দ্ব নিরসনের পাশাপাশি নির্বাচনী রাজনীতিতে নিজেদের শক্তির জানান দেবে ক্ষমতাসীনরা। বিশেষ করে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার পতন আন্দোলনের জন্য ১ অক্টোবর থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার যে ঘোষণা বিএনপি দিয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে পাল্টা জবাবে অক্টোবর থেকে মাঠ দখলে রাখার এই ঘোষণা দেয় ক্ষমতাসীনরা।

এছাড়া অক্টোবরেই বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় আওয়ামী লীগের সমাবেশের ওপর সংঘটিত বর্বরোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার রায় ঘোষণা হওয়ার কথা রয়েছে। এ মামলার আসামিদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন ও খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানসহ বিএনপির কয়েকজন নেতা ও ঘনিষ্ঠদের নাম রয়েছে। এ রায় ঘিরে বিএনপির কঠোর কর্মসূচির প্রস্তুতি রয়েছে। একইসঙ্গে এ মাসের শেষ সপ্তাহে গঠন হবে নির্বাচনকালীন সরকার। বিএনপি বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় সরকার গঠনের দাবি করে আসছে। কিন্তু সংবিধানের বাইরে যেতে নারাজ সরকার। ফলে এসব ইস্যু নিয়ে যাতে বিএনপি ও নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য সর্বশক্তি নিয়ে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ ও শরিক দলগুলো।

এজন্য গত শনিবার রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে ১৪ দল আয়োজিত কর্মী সমাবেশ থেকে অক্টোবরজুড়ে কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৯ অক্টোবর রাজশাহী, ১০ অক্টোবর নাটোর ও ১৩ অক্টোবর খুলনায় ১৪ দল সমাবেশ করবে। পরে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করে এই অক্টোবরেই ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে ক্ষমতাসীনরা। এমনকি বিএনপি অক্টোবর থেকে মাঠে থাকার যে ঘোষণা দিয়েছে, তাও চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। ডিসেম্বরে নির্বাচনের আগে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মাঠ গরম করার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।

পাশাপাশি সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও প্রস্তুত রেখেছে বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্রগুলো। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত তারা। বিশেষ করে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘিরে এখন থেকেই সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। নিরাপত্তায় কোনো রকম ঝুঁকি নেবে না আওয়ামী লীগ। এমনকি জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ওপরও সতর্ক নজর রাখছে আওয়ামী লীগ। ঐক্য প্রক্রিয়া যেন কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র বা উসকানিমূলক কিছু করতে না পারে সেজন্য সরকার ও দলীয় অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ সতর্ক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে ১৪ দলের মুখপাত্র ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আন্দোলনের নামে যারা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ১৪ দল প্রতিহত করবে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধরিয়ে দিতে মাঠে আমাদের নেতাকর্মীরা রয়েছেন। বিগত সময়ে বিএনপি রাজপথে নেমেই মানুষ হত্যা, জ্বালাও পোড়াও করে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তাদের কোনোভাবেই মাঠ দখলে নিতে দেওয়া হবে না। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সন্ত্রাস-সহিংসতা করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার বিপরীতে আওয়ামী লীগও জোট সম্প্রসারণ করবে বলে জানা গেছে। দলীয় সূত্র মতে, যদি বিএনপি নির্বাচনে যায় তাহলে জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে যাবে দল। সে লক্ষ্য থেকেই গতকাল দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রকাশ্যে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ (সিপিবি) বামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য চেয়েছেন। রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, আমরাও জাতীয় ঐক্য চাই। এ ঐক্য চাই সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার শত্রুদের বিরুদ্ধে। আমরা জাতীয় ঐক্য চাই নষ্ট রাজনীতির বিরুদ্ধে, দুর্নীতি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সর্বশেষ সম্পাদকমণ্ডলী ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে মাঠ দখলে রাখার বিশেষ নির্দেশান দেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয় ১ থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে গণসংযোগ করা হবে। এর পর আগামী ১০ অক্টোবর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণার দিন রয়েছে। সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে আলোচিত এ মামলার রায়ের আগে ও পরে আবার ২০১৩ ও ১৪ সালের মতো সারা দেশে নাশকতা হতে পারে। নাশকতা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সতর্কাবস্থায় থাকবেন। এজন্য আগামী ৭ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে।

এছাড়া আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সারা দেশে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। অক্টোবরের মধ্যেই কেন্দ্রভিত্তিক এসব কমিটি গঠন করা হবে। শুধু তাই নয়, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগে দেশের কিছু বিভাগীয় শহরে জনসভায় আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই অংশ নেবেন। জাতিসংঘ সফর থেকে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে এসব জেলা সফরের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে। আগামী দু-একদিনের মধ্যেই আওয়ামী লীগের সব সাংগঠনিক জেলায় দলের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিক বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত সরকারবিরোধী জোট যাতে সারা দেশে কোনো রকম সুবিধা করতে না পারে এবং রাজপথ থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার নিয়ন্ত্রণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাতে থাকে সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে ওই চিঠিতে।

দলীয় সূত্র মতে, বিএনপি, গণফোরাম, যুক্তফ্রন্ট, নাগরিক ঐক্যসহ বেশ কয়েকটি দল মিলে যে জোট হয়েছে, সেটিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ। অক্টোবরে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী জোটের কর্মসূচিকেও ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে ১৪ দল। সরকারবিরোধী জোটের সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে অক্টোবরের প্রথম দিন থেকেই মাঠে অবস্থান নিয়েছে দল। থাকবে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত। এ লক্ষ্যে ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়েছে দল।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, আগামী ১ থেকে ৭ অক্টোবরের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর আরো কর্মসূচি দিয়ে নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকবেন সারা দেশের নেতাকর্মীরা। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা নির্বাচনে অংশ নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চান বলে আমরা মনে করি না। তাদের কার্যক্রমে প্রমাণ হয়, তারা ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে চান। তাদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করব।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আওয়ামী লীগ,১৪ দল,কর্মসূচি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close