এস.এইচ.এম. তরিকুল, রাজশাহী

  ০৯ জুলাই, ২০১৮

রাসিক নির্বাচন : বিধি লঙ্ঘন করে প্রচার কার্যক্রমে বড় দু’দল

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে এখনো প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ হয়নি। কিন্তু বিধি লঙ্ঘন করে প্রচার কার্যক্রমে এক ধাপ এগিয়ে বড় দু’দল প্রতীকের প্রার্থীরা। বিধি লঙ্ঘন করে প্রথম দফায় প্রচারপত্র ছাপানোর কাজ ইতিমধ্যেই শেষ করেছেন সরকার দলীয় নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী এ.এইচ.এম. খায়রুজ্জামান লিটন ও বিএনপির ধানের শীষ প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। এমনকি, বৃষ্টিতে ভিজে প্রচারপত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র মেয়র পদপ্রার্থীরা পোস্টার লেমিনেটিং করছেন।

মেয়র পদপ্রার্থী অন্যান্যদের দাবি, আমরা নির্বাচনী বিধি মানতে গিয়ে প্রচারপত্র ছাপানোর কাজ এখনো শুরু করিনি, করবোও না। তাদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের আশ্রয় প্রশ্রয়ের কারণেই বড় দু’দলের প্রার্থীরা একের পর এক বিধি লঙ্ঘন করে চলেছে। এ বিষয়ে অভিযোগ করলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না নির্বাচন কমিশন।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নওশের আলীর মালিকানাধীন নিউমার্কেট গৌরহাঙ্গা এলাকার বিকল্প অফসেট প্রেসে ছাপা হচ্ছে নৌকার পোস্টার ও হ্যান্ডবিল। সেখানে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নৌকা প্রতীকের দেড় লাখ পোস্টার, এক লাখ লিফলেট এবং ১৫ লাখ হ্যান্ডবিল ছাপার কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এছাড়া বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের ৬০ হাজার পোস্টার, ১০ লাখ লিফলেট ও ৩ লাখ হ্যান্ডবিল ছাপছে নগর ভবন সংলগ্ন গৌরহাঙ্গা গ্রেটাররোড এলাকার প্রভাত প্রিন্টিং প্রেস অ্যান্ড পাকলিকেশন্সে।

নির্বাচনী বিধি মোতাবেক একজন মেয়র প্রার্থী সর্বসাকুল্যে ১৫ লাখ টাকা নির্বাচনী কাজে ব্যয় করতে পারবেন বলে প্রতিদিনের সংবাদকে জানিয়েছেন রাজশাহী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি নির্বাচনের সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান। আর নাম প্রকাশ না করার সর্তে গতকাল সোমবার নগরীর দুইজন প্রেস কর্মচারী ও একজন ডিজিটাল প্রেস মালিক প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, এখন পযর্ন্ত মেয়র পদের দুই প্রার্থীর যে অর্ডার আছে তাতে পোস্টার, হ্যান্ডবিল ছাপানো ও লেমেনেটিং এবং ডিজিটাল ব্যানার ও বাইন্ডিং কাজে প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে। প্রতীক বরাদ্দের আগে মেয়র প্রার্থীদের প্রচারপত্রের পেছনেই এমন ব্যয় হওয়ায় বিধি মোতাবেক তারা কিভাবে নির্বাচন কাজ শেষ করবেন তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী (কাঠাল) মো. হাবিবুর রহমান প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন থেকে অদ্যবদি পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনারদের কাছে অনেকবার আচরণ বিধি অমান্য করার বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি, নেবে বলেও মনে হয়না। কারণ, নির্বাচন কমিশনের আশ্রয় প্রশ্রয়ের কারণেই বড় দু’দলের প্রার্থীরা একের পর এক বিধি লঙ্ঘন করে চলেছে। যে কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন হাবিবুর রহমান।

রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, প্রচারপত্র ছাপানো হলেও প্রতীক বরাদ্দের আগে জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে না। রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের মতো কোন কর্মকা- বিএনপি প্রার্থী বুলবুল করেননি। বিধি মেনেই প্রচারপত্র ছাপানো ও প্রচারকাজ পরিচালনা করা হবে। আমরা এগুলো বিষয়ে নয়, চিন্তিত সরকারী দলের প্রার্থীর নিয়োগকৃত ক্যাডার ও প্রশাসনের হাত থেকে কিভাবে ভোট ডাকাতি ঠেকাবো তা নিয়ে।

এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর রাজশাহীর আঞ্চলিক সমম্বয়কারী সুব্রত পাল প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, নির্ধারিত ব্যয় সীমার মধ্যে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালিত হলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এছাড়া অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হলে কালোটাকার বিস্তার ঘটবে। নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় সব প্রার্থীর সমান সুযোগ নিশ্চিত করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। আচরণ বিধি ভেঙ্গে নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা করলে প্রশ্নবিদ্ধ হবে কমিশন। সকল প্রার্থী প্রচারণায় সমান সুযোগ না পেলে নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠবে এটাই স্বাভাবিক। যে কারণেই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকেই।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সিটি নির্বাচনের সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, প্রতীক বরাদ্দ হবে কাল (আজ) মঙ্গলবার। এরপরেই প্রচার কাজে নামতে পারবেন প্রার্থীরা। প্রার্থীরা প্রচার পত্র ছাপিয়েছেন এমন তথ্য পায়নি। প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কে কি করছে সেটা দেখা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কেউ ছাপালেও প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনও ধরণের প্রচার-প্রচারণা করতে পারবেনা।

তিনি জানান, প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন সোমবার পযর্ন্ত মেয়র পদে জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী ওয়াসিউর রহমান দোলন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৮ জন প্রার্থী তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। আগামী ৩০ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবার রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে ৩০টি সাধারণ ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন। এবারো ভোট কেন্দ্র করা হয়েছে ১৩৭টি।

পিডিএসও/রানা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রচার কার্যক্রম,রাসিক নির্বাচন,বিধি লঙ্ঘন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist