বদরুল আলম মজুমদার

  ২৭ মে, ২০১৮

সহসা মুক্তি পাচ্ছেন না খালেদা, আশা দেখছে না বিএনপিও

কারান্তরীণ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সহসা মুক্তি পাচ্ছেন না। সাজা হওয়া মামলায় জামিন পেলেও অন্য আরো ছয় মামলার পরোয়ানা ঝুলে আছে তার বিরুদ্ধে। কুমিল্লার দুইটি নাশকতার মামলায় হাইকোর্টের তিন দিনব্যাপী শুনানি শেষ হয়েছে। আজ রোববার আদেশ দিতে পারেন আদালত। আজকের আদেশে জামিন পেলেও খুব সহসা মুক্তি পাচ্ছেন না বিএনপি প্রধান।

অপরদিকে বিএনপি নেতারাও খালেদার সহসা মুক্তির সম্ভাবনা দেখছেন না। দলটির নেতারা প্রথম দিকে মনে করেছিলেন, খালেদার জেল জীবন অল্প কিছুদিনের হবে। তবে তাদের ভুল ভাঙতে বেশি সময় লাগেনি। নেতারা মনে করছেন, তীব্র আন্দোলন ছাড়া খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনার আর কোনো পথ খোলা নেই। মুখে মুখে নেত্রীর মুক্তির বিষয়ে আশার কথা শোনালেও বাস্তবতা ভিন্ন সেটি সহজেই বুঝতে পারছেন তারা। সরকার খালেদা জিয়াকে জেলে রেখেই আগামী নির্বাচন সেরে নিতে চায়। চেয়ারপারসনকে দীর্ঘদিন জেলে থাকতে হবে এমনটা নেতাদের ধারণাতেও ছিল না। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে জেল দীর্ঘায়িত হওয়ায় নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে বিএনপি নেতৃত্বকে। আর এমন উপলব্ধি সামনে রেখে আগামী নির্বাচনের আগে বেশ অগোছালোই থাকছে দল।

যদিও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, চেয়ারপারসনের জেল জীবন দীর্ঘ হওয়ার কোনো প্রশ্নই ছিল না। কিন্তু সরকার আইন ও বিচার প্রশাসনকে প্রভাবিত করছে বলেই আমাদের নেত্রী বের হতে পারছেন না। আসলে সরকার মুক্ত খালেদাকে দেখতে ভয় পায় বলেই নতুন নতুন ঠুনকো মামলাগুলো ব্যবহার করছে। আমি মনে করি শুধু আইন আদালতের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। রাজনৈতিক জেলকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য নজরুল ইসলাম খান গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের এক আলোচনায় বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমরা আন্দোলন করছি, তবে এভাবে আন্দোলন করে তাকে মুক্ত করা যাবে না। তাকে মুক্ত করতে হলে কঠোর আন্দোলনের প্রয়োজন। তাই প্রস্তুতি নিন, ঐক্যবদ্ধ হয়ে কার্যকর আন্দোলনের জন্য। আমাদের বক্তৃতায় খুব বেশি সাহসী হওয়ার চেয়ে কাজে বেশি সাহসী হতে হবে। এদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছর সশ্রম কারাদ- মাথায় নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে। এই মামলায় সর্বোচ্চ আদালত থেকে চার মাসের জামিন পেলেও তার কারামুক্তিতে অন্তত আরো ছয় মামলায় জামিন নিতে হবে। এরই মধ্যে পাঁচ মামলায় হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। তবে সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শুরু হওয়ার আগে এসব আবেদন নিষ্পত্তি করে বিএনপি চেয়ারপারসনের কারামুক্তি অনিশ্চিত বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা। তারা বলেন, এসব মামলায় হাইকোর্টে আদেশ যাই আসুক, চূড়ান্ত সুরাহার জন্য আপিল বিভাগ পর্যন্ত গড়াতে পারে। বলা চলে মামলার জালেই আটকে আছে খালেদা জিয়ার কারামুক্তির বিষয়টি।

এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আপিল বিভাগ থেকে জামিন পেলেও আরো কয়েকটি মামলায় শ্যোন অ্যারেস্টের কারণে মুক্তি পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, সরকার তাকে (খালেদা জিয়া) কারাগার থেকে বের হতে দেবে না। একের পর এক মামলা দিয়ে কারাগারে আটকে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য হাইকোর্টে দাখিল করা পাঁচটি আবেদনের মধ্যে তিন দিনে কুমিল্লার একটি নাশকতার মামলায় আংশিক শুনানি শেষ হয়েছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জানান, কুমিল্লায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা মামলায়ও জামিনের আবেদন করা হয়েছে হাইকোর্টে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কুমিল্লার নাশকতা মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেলের ইচ্ছাকৃত সময়ক্ষেপণে জামিন পেতে দেরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, যে মামলা ৩ ঘণ্টার বেশি সময় দরকার হয় না। সেই মামলা তিন দিন ধরে চলছে। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য।

এছাড়া ঢাকায় স্বাধীনতাবিরোধীদের মন্ত্রী করে জাতির মানহানি এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে জন্মদিন পালনের দুই মামলায় করা জামিন আবেদনের ওপর আগামী সোমবার হাইকোর্টে শুনানি হওয়ার কথা। সূত্র জানায়, আগামী ১ জুন থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে রমজান ও পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটি থাকবে। অবকাশ শুরু হওয়ার আগে আর মাত্র ছয় কার্যদিবস নিয়মিত বিচারিক কার্য পরিচালনা হবে উচ্চ আদালতে। জানা গেছে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা। এর মধ্যে পাঁচটি দুর্নীতির মামলা, তিনটি মানহানির অভিযোগে করা মামলা। আর বাকি ২৯টি মামলা ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে বিভিন্ন সময়ে করা মামলা। ৩৭টি মামলার মধ্যে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ১২টি মামলার কার্যক্রম বর্তমানে স্থগিত রয়েছে। আর তিনটি মামলা তদন্তাধীন। বাকি ২২টি মামলার বিচার চলছে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেন নিম্ন আদালত। এ মামলার অপর আসামি খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বাকি পাঁচজনকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা জরিমানাও করা হয়।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিএনপি,খালেদা জিয়া,দুর্নীতির মামলা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist