reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০৭ মার্চ, ২০১৮

ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে পারে না : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, তাঁর সংগ্রামী জীবনের অবদানকে মুছে ফেলার সব ধরনের চেষ্টা করেছে সব সরকারই। এসব সরকারের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, জাতির পিতার নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। বিকৃত ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছিল। ইতিহাস কেউ মুছে ফেলতে পারে না। নিশ্চিহ্ন করতে পারে না। আজ তা প্রমাণিত হয়েছে। সুদীর্ঘ ৪৭ বছরে আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের যে জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে তাঁর বাবা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন, ঠিক সেখানে দাঁড়িয়েই আজ বুধবার বিকেলে তিনি এই দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহ্বান জানান।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের সেই অমর ভাষণ এখন বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। এবারের ৭ মার্চ তাই এক ভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল। সেই ভাষণ উপলক্ষে আজ বুধবারের সভার আয়োজনেও ছিল বড় প্রস্তুতি। সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ধরে নানা জায়গা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল আসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এসব মিছিলে ছিল সভা উপলক্ষে তৈরি নানা প্রতিকৃতি ও পোস্টার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিবাহী পোস্টার ও প্রতিকৃতি ছিল অনেকের হাতে। বেলা দুইটার মধ্যে জনসমুদ্রে পরিণত হয় পুরো উদ্যান এলাকা।

আজকের সভার সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বেলা ৪টা ৪০ মিনিটে ভাষণ শুরু করেন। ৪০ মিনিটের ভাষণ তিনি বাংলাদেশের স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিবৃত্ত, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট থেকে শুরু করে জেলহত্যার ঘটনা, পরের বাংলাদেশের রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরেন। শেখ হাসিনার ভাষণের বড় অংশজুড়ে ছিল উন্নয়নের পথে এগিয়ে আসার আহ্বান। তিনি বলেন, এই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদক যেন যুবসমাজকে নষ্ট করতে না পারে। আজকে আপনারা বিবেচনা করে দেখেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হয়। অন্যরা স্বাধীনতায় বিশ্বাসই করত না, তাই দেশের উন্নতি হয়নি, নিজেদের উন্নতি করেছে। দেশের মানুষের উন্নতি হয়নি। আজকে সারা দেশের মানুষ স্বাধীনতার সুফল ভোগ করছে।

৭ মার্চের ভাষণ উদ্যাপনে আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় বেলা ২টা ৩০ মিনিটে। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠান শুরুর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ। তাকে সহযোগিতা করেন দলের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। এরপর বেলা ৩ টার দিকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশস্থলে এসে পৌঁছান। এ সময় সমাবেশে আসা নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান।

৭ মার্চের জনসভা উপলক্ষে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার লোক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হতে থাকে। সমাবেশে আসা লোকজনের অনেকেই বিভিন্ন ধরনের প্ল্যাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। যদিও নিরাপত্তার কারণে কেউই এসব ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশস্থলে যেতে পারেননি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগের অনেকে লাল-সবুজ রঙের টি-শার্ট পরে মাথায় লাল-সবুজ টুপি পরে সমাবেশে যোগ দেন। অনেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি-সংবলিত সাদা টি-শার্ট পরেও জনসভায় যোগ দেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের কর্মীরা বাদ্যযন্ত্র বাজাতে বাজাতে সমাবেশে যোগ দেন।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে। বেলা আড়াইটার দিকে সমাবেশের সামনের জায়গা লোকজনে ভরে যায়। এরপর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পূর্ব দিক থেকে শুরু করে মাঠের বিভিন্ন জায়গায় লোকজন ছড়িয়ে পড়ে। তবে এই সমাবেশ ঘিরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল, সে তুলনায় লোক সমাবেশ আশানুরূপ হয়নি। সমাবেশ উপলক্ষে উদ্যানের ঝিলে বিভিন্ন ধরনের নৌকা ভাসানো হয়। এসব নৌকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের খ-িতাংশসহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান লেখা ছিল। সমাবেশে কবি নির্মলেন্দু গুণ তার রচিত ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ কবিতাটি পাঠ করেন।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সভাপতিম-লীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ, সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন এবং যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমা আক্তার।

শেখ হাসিনা বললেন, গ্রামগঞ্জের মানুষের কাছে উন্নয়নের কথা জানাতে হবে। আমাদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আগামী মাসেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হবে। বাংলাদেশ যেন কারও কাছে ভিক্ষা করে না চলে, তার ব্যবস্থা করছি। বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। তিনি আহ্বান জানান, যুদ্ধাপরাধী ও খুনিরা যেন আর কখনো বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসতে না পারে। তিনি আরও বলেন, যারা এতিমের টাকা চুরি করে, যারা আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়, যারা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে, তারা যেন দেশকে আর ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে না পারে। এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করে, গণহত্যা করে, লুটপাট, দুর্নীতি করে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে, যারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়, তারা যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে। তিনি বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি- তাঁরা সতর্ক থাকবেন।

পিডিএসও/মুস্তাফিজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রধানমন্ত্রী,ইতিহাস,বঙ্গবন্ধু,ঐতিহাসিক ৭ মার্চ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist