বদরুল আলম মজুমদার

  ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

নির্বাচনী রাজনীতি

শান্তিপূর্ণ পথেই এগোবে বিএনপি

ধাপে ধাপে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যেতে চায় বিএনপি। দলীয় প্রধানের কারা অন্তরীণের পর প্রথম দফা শেষে দ্বিতীয় দফা কর্মসূচি পালন করছে দলটি। গণস্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে শুরু করে গতকাল জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে বিএনপি। দ্বিতীয় দফার আন্দোলন আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ করে পরবর্তী কর্মসূচিতে যাবে বিএনপি। এভাবেই আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটি চলমান আন্দোলনকে শান্তিপূর্ণ রেখে আগামী আগস্ট পর্যন্ত যেতে চায়। আগস্টের পরই প্রয়োজনে এক দফার চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে হাঁটার পরিকল্পনা রয়েছে। এমন অবস্থায় খালেদা জিয়ার আপাতত পরিণতি যাই হোক না কেন এখনই কঠিন কোনো কর্মসূচি দিতে নারাজ দলটি। দলের শীর্ষ পর্যায়ে নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটিই জানা গেছে।

সাজা হওয়ার পর চেয়ারপারসনকে বের করে আনতে যে দীর্ঘসূত্রিতা শুরু হয়ে শেষ পর্যন্ত তা আরো জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ অবস্থায় চলমান আন্দোলন দিয়ে সরকারকে বাধ্য করার মতো পরিস্থিতি যেমন তৈরি করা যায়নি, তেমনি নেতাকর্মীদের ব্যাপক হারে আটকের মুখে পড়তে হচ্ছে। খালেদার জিয়াকে গ্রেফতারের পর সারা দেশে বিএনপির প্রায় ৫ হাজার নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এভাবে চলতে থাকলে দলের কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না নেতারা। তাই রাজপথে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা আরো বাড়াতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের বিকল্প দেখছে না বিএনপি। দলের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রগুলো এমনটাই আভাস দিয়েছে।

সাজানো কিছু ‘ডুকুমেন্ট’ দিয়ে খালেদাকে জেলে দেয়ায় সাধারণ মানুষের সহানুভূতি বিএনপির দিকেই বেশি বলে ধারণা নেতাদের। নেতারা মনে করেন, সরকার যে উদ্দেশ্য নিয়ে খালেদাকে সাজা দিয়েছে, তা দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে পরিষ্কার। এমন অবস্থায় সরকার বিএনপি প্রধানকে জেলখানায় নিয়ে বরং বেকায়দায় পড়েছেন। বিএনপিকে ভাঙার চিন্তায় আপাতত সফল না হলেও সরকার বেগম জিয়ার জেলকে অন্যভাবে কাজে লাগাতে চাইবে। তাই খালেদার মুক্তিকে ত্বরান্বিত করতে এবং একই সঙ্গে নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে কৌশলী আন্দোলনের চিন্তা করছে দলটি। সেসব কর্মসূচিতে শান্তিপূর্ণভাবে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি বাড়াতেও জোর দিচ্ছেন নেতারা। তাই নতুন কর্মসূচিতে কিছুটা চমকও থাকতে পারে বলে জানান তারা।

সূত্র জানায়, আপাতত আগামী ২২ ফেব্রুয়ারির সমাবেশ সফল করতে বেশ তৎপর বিএনপি নেতারা। খালেদাবিহীন এ সমাবেশ সফল করে সরকারকে বিএনপি দেখাতে চায় দল আগের চেয়েও ‘ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী’। খালেদাকে জেলে দিয়ে সরকার বিএনপিকে ভাঙা জন্য উঠে পড়ে লাগবে এমন তথ্য চেয়ারপারসন আগেই জানতেন। সেই অনুযায়ী তিনি দলের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার কঠোর নির্দেশনা দেন। তাছাড়া চেয়ারপারসনকে জেলে নেওয়ার ব্যপারে সরকারের কী কী সুবিধা বা অসুবিধা হয়েছে এ নিয়ে দলের মধ্যেও চলছে পর্যালোচনা। নেতারা মনে করেন, জেলখানায় খালেদাকে ডিভিশন না দেওয়ায় সিদ্ধান্তকে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাতে পেরেছে। খালেদাকে ডিভিশন না দেওয়ার বিষয়ে জেল সুপার, সরকার এবং বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে দেশব্যাপী বেশ আলোচিত ছিল। বিএনপি নেতারাও কৌশলী এমন প্রচারণা করে দেশের মানুষের সহানুভূতি নিতে সক্ষম হয়েছেন। খালেদার জেলযাত্রায় প্রাথমিক পদক্ষেপগুলোর সুফল বিএনপিরই বেশি।

বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, খালেদা কারাবন্দি হওয়ার পর গত ১০ থেকে ১২ দিনে বিএনপির সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখে বোঝা যাচ্ছে, দলের নেতারা চমৎকার বোঝাপড়ার মধ্য দিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। যেকোনো ইস্যুতে করণীয় নির্ধারণে পরস্পরের পরামর্শ নেয়া হচ্ছে। সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম চলছে খুব গোছালোভাবে। এখন পর্যন্ত কোনো বিষয়ে মনোমালিন্য বা দূরত্ব তৈরি হয়নি। তারেক রহমানের পরামর্শে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রয়োজনানুযায়ী সব ব্যবস্থা নিচ্ছেন। অন্য সিনিয়র নেতারা তাকে সহায়তাও করছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে বাইরে রাখতেই খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠিয়েছে সরকার। আদালতে পাঁচ বছরের সাজা হওয়ায় বিএনপি চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে অযোগ্য হতে পারেন। আর খালেদা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে বিএনপিও নির্বাচনে যাবে না। দলের এমন অবস্থানের কারণেই সরকার বেগম জিয়াকে সাজা দিয়েছে। এসবের লক্ষ্য গতবারের মতো একটি যেনতেন নির্বাচন করা। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিএনপিকে নির্বাচনে বাইরে রেখে দল ভাঙতে চেষ্টা করবে সরকার। আবার বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে দলটির ভাঙা অংশকে বিএনপি সাজিয়ে নির্বাচনে নেওয়ার যে কৌশল সরকার নিয়েছে, দলটির নেতারা সেটিকে উড়িয়ে দিচ্ছেন।

নেতারা মনে করেন, খালেদার জেল পরবর্তীতে দলটি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ। দলের নেতারা এও বলছেন, রায়ের সার্টিফাইড কপি হাতে পেলে আগামী সপ্তাহে মুক্ত হতে পারেন খালেদা জিয়া। এছাড়া সামনে আরো একটি মামলা চূড়ান্ত পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে সরকার। তাদের মতে, সেই মামলাতেও সরকারের ইচ্ছায় সাজা দিতে পারেন আদালত। এমন চিন্তায় মাথায় রেখে বিএনপিও পাল্টা হিসাব করতে শুরু করেছে। পরের মামলায় আবারও সাজা হলে বিএনপি রাজপথে শান্তিপূর্ণ অবস্থান আরো বাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। সেই সঙ্গে বিদেশি কূটনৈতিকদের সময় সময় আপডেট করবে দলটি। এরই মধ্যে খালেদার সাজার আগে পরে দুই দফা ব্রিফ করা হয়েছে বিদেশিদের। আর এভাবেই আগামী ৪ থেকে ৫ মাস পার করার চিন্তায় আছে বিএনপি। এ সময়ে সরকার কঠোর হলেও বিএনপি কোনোভাবেই রিএ্যাক্ট করবে না।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, বিএনপি এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ। ক্ষমতাসীনরা বিএনপিকে চাপে রাখতে কিংবা নেতৃত্বে ভাঙন ধরাতে দীর্ঘদিন ধরেই নানা কৌশল প্রয়োগ করে আসছে। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি, এবারো হবে না। মাঠের নেতাকর্মীরা ১১ বছর ধরে নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছেন কিন্তু কেউই দল ছেড়ে যাননি। এটিই বিএনপির সবচেয়ে বড় সফলতা।

এমনই কথাই বলছেন দলের স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি গতকাল এক অনুষ্ঠানে বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে। তাতে বিএনপির কি ক্ষতি হয়েছে? বরং আওয়ামী লীগের প্রতিহিংসার কারণে দেশবাসীর কাছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশনেত্রী থেকে ‘মা’ হয়ে গেছেন। তিনি এখন দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধার পাত্র। মরণকালে নাকি সবকিছুই ভুল হয়ে যায়। এ সরকারের মনে হয় এমনটাই হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করেছিল খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানোর পর বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে গাড়ি ভাঙচুর করবে। আর সেই সুযোগে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা রাজপথে নাশকতা করবে গাড়িতে আগুন দেবে আর দোষ দেবে বিএনপির। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় তারা প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বিএনপি,শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি,নির্বাচনী রাজনীতি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist