গাজী শাহনেওয়াজ

  ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

নারী নেতৃত্ব : সর্বস্তরে ৩৩ শতাংশ রাখা চ্যালেঞ্জ

১০ শতাংশ ৯ বছর,দুই বছরে ২৩ শতাংশ | দলের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে নামছে ইসি | ৩ দলের নিবন্ধন হুমকিতে

দলের সর্বস্তরে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখা নিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। গত ৯ বছর ধরে গড়ে ১০ শতাংশ পূরণ করা হলেও বাকি ২৩ শতাংশ আগামী দুই বছরের মধ্যে পূরণ করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে শর্ত পূরণ না করা হলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন শর্ত ভঙ্গ হবে। এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো বড় দলগুলো সর্বস্তরে ১৫ শতাংশের বেশি নারী সদস্য রাখতে পারেনি।

পাশাপাশি, দেশের শীর্ষ তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির বাইরে অধিকাংশ দলের জেলা ও উপজেলায় অফিস বা প্রয়োজনীয় সদস্য নেই। নিবন্ধন পেয়েই তারা তাদের সাময়িক ভাড়া করা অফিস গুটিয়ে নেয়। দলের মধ্যে স্বচ্ছতা ফেরাতে দলের হালনাগাদ তথ্য জমা দেওয়া ৩৭ রাজনৈতিক দলের অফিস ও কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে ইসির বিশেষ টিম শিগগিরই মাঠে নামছে। এ বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত পেতে শিগগিরই সভা আহ্বান করা হচ্ছে; যার কার্যপত্রও তৈরি হয়েছে।

এদিকে, ৪০ দলের মধ্যে ড. কামাল হোসেনের গণফোরামসহ তিনটি রাজনৈতিক দল তাদের হালনাগাদ তথ্য কমিশনে জমা দেয়নি। এমনকি ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ইসিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সময় না চাইলেও গণফোরাম আগামী জুন পর্যন্ত তথ্য জমার জন্য সময় চেয়েছে, যা কমিশন হাস্যকর বলে মনে করছে। কমিশন সভায় এই তিনটি দলের নিবন্ধন বাতিল করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। খবর ইসির নির্ভরযোগ্য সূত্রের।

ইসির কর্মকর্তারা বলেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন দলের নিবন্ধন দেওয়ার বাইরে পুরনো দলগুলো নিবন্ধনের শর্ত পালন করে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছে কি না তা খতিয়ে দেখতে দলের হালনাগাদ তথ্য চেয়ে পত্র পাঠানো হয়। প্রথমে ১৫ কার্যদিবস সময়ে ৪০ দলের মধ্যে ২৮টি যথাসময়ে তথ্য দেয়। জমা না দেওয়া ১২টি দলের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না-ইসির এমন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আরো দুই দল তথ্য জমা দেয়। বাকি ১০ দলকে ৩০ কার্যদিবস সময় দিলে সাতটি দল তথ্য জমা দেয়। সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন-এই দলগুলো ইসিকে কোনো তথ্য দেয়নি। এসব দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে ইসি।

৩৭ দলের হালনাগাদ তথ্য সূত্রে জানা যায়, দলের সর্বস্তরে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখাতে দলগুলোর মধ্যে অনীহা দেখা গেছে। কত শতাংশ নারী সদস্য দলে স্থান দেওয়া হয়েছে তা উল্লেখ করেনি বেশিরভাগ দল। লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) বলেছে, তার দলের পক্ষে নারী সদস্য পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৯ বছরে ১ শতাংশ স্থান দিয়েছে; বাকি ৩২ শতাংশ দুই বছরে পূরণ করতে হবে দলটিকে। বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ৬ শতাংশ মহিলা কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

আওয়ামী লীগ ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ পূরণের অঙ্গীকার করেছে ইসির কাছে। জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ১২ শতাংশ ও জাতীয় পার্টি ২০ শতাংশ পূরণ করেছে এখন পর্যন্ত। তবে বিএনপি দলের সর্বস্তরে কত শতাংশ মহিলা সদস্য রেখেছে তা উল্লেখ নেই হালনাগাদ তথ্যে। ইসলামী দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন বলছে, দলের সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ ও খেলাফত মজলিশও একই কথা বলেছে ইসিকে।

জাতীয় পার্টি-জেপির দলে কোনো শিক্ষক বা ছাত্র, অনুমোদিত শ্রমিক সংগঠন নেই। নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে দলের কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টারি বোর্ড কর্তৃক বিভিন্ন কমিটির সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে প্রদান করা হয় বলে ইসিকে জানিয়েছে তারা। আর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বলেছে, ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল তাদের অঙ্গ-সংগঠন নয়, সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু এই দল তাদের ছাত্র সংগঠনগুলোকে সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

বিদেশে শাখা নেই বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএলের। পাশাপাশি এ দুটি দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন হিসেবে শিক্ষক, ছাত্র কিংবা শ্রমিক সংগঠন নেই। আর তৃণমূলের নির্বাচিত প্যানেল থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দেয় জাতীয় পার্টিসহ অনেক দল। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। দল যাকে পছন্দ করে কিংবা মোটা অংকের উৎকোচ পাওয়া যায় এমন প্রার্থীকে দল মনোনয়ন দিয়ে থাকে। এসব তথ্য ইসির কাছে থাকার পরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাজনৈতিক দল,৩৩ শতাংশ নারী সদস্য,নির্বাচন কমিশন,নারী সংসদ সদস্য
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist