বিশেষ প্রতিনিধি

  ৩১ জানুয়ারি, ২০১৮

নির্বাচনী হাওয়া গতি পেল

প্রতীকী ছবি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র এক বছরের মতো বাকি। ডিসেম্বরেই নির্বাচন করতে চায় নির্বাচন কমিশন। এরই মধ্যে রাজনীতিতে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। নির্বাচনকে ঘিরে নানা আলোচনা চলছে। শুরু হয়েছে নির্বাচনী হিসাবনিকাশ। নানা ইস্যুতে বাগবিতণ্ডা ও তর্কবিতর্ক যতই থাক, ভেতরে ভেতরে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলো। বিশেষ করে দুই প্রধান দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির এখন মূল নজরই নির্বাচনের দিকে।

এমন হালচালের মধ্যে গতকাল প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সিলেট সফরের মধ্য দিয়ে আরো গতি পেল নির্বাচনী হাওয়ায়। ভোটের বছরের শুরুতে শুরু হলো আওয়ামী লীগের প্রাক নির্বাচনী প্রচারও। এই সফরের মধ্য দিয়ে আরো বেশি আলোচনায় এলো নির্বাচনী রাজনীতি। ডিসেম্বরের নির্বাচনের দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ভোট প্রার্থনার মধ্য দিয়ে নির্বাচন নিয়ে নতুন করে স্বস্তি দেখা দিল দেশে। বিশেষ করে সব দলকে নিয়ে সরকারের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সদিচ্ছা আরো স্পষ্ট হলো বলে মনে করা হচ্ছে।

গতকাল সিলেটে তিন আউলিয়ার মাজার জিয়ারত করে এক জনসভায় ভাষণের মধ্য দিয়ে এই নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন শেখ হাসিনা। তিনি নিজে নির্বাচনী প্রচার শুরু বলে জনসভায় ঘোষণা দেন। জনসভায় নৌকা মার্কায় ভোট চান। তার আহ্বানে মাঠভর্তি মানুষ হাত তুলে নৌকায় মার্কায় ভোট দেওয়ার ওয়াদা করে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী সরকারি ২০টি প্রকল্প উদ্বোধন এবং ১৮টির ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা শেখ হাসিনার প্রাক নির্বাচনী সফরকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, এর মধ্য দিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে সরকারের সদিচ্ছা প্রকাশ পেল। দেশে ইতিবাচক নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি হলো। নির্বাচনী আমেজ দেখা দিল। এতে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের ব্যাপারে আরো উৎসাহিত হবে। নির্বাচনী প্রচারণায় নামবে।

বিশেষ করে বিরোধীপক্ষের সরকার একতরফা নির্বাচন চায় প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের প্রধানের নির্বাচনী সফর শুরুর মধ্য দিয়ে সেই অভিযোগ প্রশ্নের মুখে পড়ল। বিশ্লেষকদের মতে, শুরু থেকেই শেখ হাসিনা বলে আসছেন, এবার নির্বাচন হবে সব দলের অংশগ্রহণে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। এজন্য তিনি আগে থেকেই দলকে সতর্ক করে দিয়েছেন ও সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। আগাম প্রচারণা শুরুর মধ্য দিয়ে নিজের দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও সেই সতর্কবার্তা দিলেন।

অবশ্য নির্বাচনের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দলকে এবার অনেক বেশি সতর্ক ও মনোযোগী বলে মনে করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সূত্র মতে, টানা তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতায় আসতে ইতোমধ্যেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে দলটি। এবারের প্রচারণায় বর্তমান সরকারের উন্নয়ণমূলক কাজ ও বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনকে প্রচারণার অংশ হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে সিলেট থেকে জাতীয় নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করল আওয়ামী লীগ। সিলেট সফরের পর আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী বরিশালে যাবেন। এছাড়া ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত রাজশাহী, খুলনা, গাজীপুর, রংপুর সফর করবেন তিনি। এরপর জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকটি জেলায় সফরে যাবেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই দলের ১৫টি সাংগঠনিক টিম মাঠে নেমেছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে গঠিত এ টিমের সদস্যরা ২৬ জানুয়ারি থেকে সারা দেশে সফর শুরু করেছেন। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে মূলত তারা দলকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করতেই মাঠে নেমেছেন। এ সফরের মধ্য দিয়ে তারা বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় দলীয় কোন্দল নিরসন ও কর্মীদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করছেন। আওয়ামী লীগের ৭৬টি সাংগঠনিক জেলা সফর করবে এ ১৫ টিম।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও হিসাব-নিকাশের নির্বাচন বলে মনে করছেন দলের নেতারা। তাদের মতে, জাতীয় স্বার্থে শেখ হাসিনাকে পুনরায় নির্বাচিত করতে হবে। সরকার চায় একটা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হোক। তাই এবার নির্বাচন দলের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। কোনো অবস্থাতেই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রাখা যাবে না।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম মুখপাত্র ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ২৬ জানুয়ারি থেকে সাংগঠনিক সফর শুরু হয়েছে। এই টিম আগামী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত সারা দেশে জনমত গঠনের জন্য কাজ করবে। সাংগঠনিক সফরগুলোতে স্থানীয়ভাবে যে সভা সমাবেশ হবে তাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে যে উন্নয়ন অগ্রগতি হয়েছে তার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হবে। এর পাশাপাশি বিএনপি জনগণের বিরুদ্ধে অতীতে যে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি করেছে সেটা জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে।

হাছান মাহমুদ আরো বলেন, যেখানে যেখানে দলের মধ্যে বিরোধ আছে তা চিহ্নিত করে সমাধান করা হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এই সফরে এটা বেশি প্রাধান্য পাবে। তা ছাড়া নির্বাচনী কাজে যাতে নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে কাজ করে সেই জন্য কাজ করা হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট থেকে শুরু হওয়া প্রাক-নির্বাচনী সফরকে নির্বাচনের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তবে তারা অন্যান্য রাজনৈতিক দলকেও সমানভাবে নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। তাদের মতে, সমান সুযোগ পেলে নির্বাচনী আবহ অব্যাহত থাকবে।

এ ব্যাপারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, নির্বাচনের আগের বছর রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী প্রচারণা করবেন, এটা নতুন কিছু নয়। আগেও হয়েছে। দেশের নির্বাচনী সংস্কৃতি। এ সময় পরবর্তী নির্বাচনের দলের প্রতি সমর্থন চাইতেই পারে। এটি ভারতসহ অন্যান্য দেশেও প্রচলিত। এটা নির্বাচনী রেওয়াজ।

‘তবে অন্য কেউ নির্বাচনী প্রচারণা বা সমাবেশ করতে চাইলে যেন সেই সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে’- বলেও মত দেন তিনি। তারমতে, এখনো নির্বাচনের এক বছর বাকি। সুতরাং, প্রচারণা চালানোর আইনগত জটিলতা নেই। তবে তফসিল ঘোষণার পর সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কোনো ধরনের প্রচারণা চালাতে পারবেন না। তখন তিনি দলীয় প্রধান হিসেবে প্রচারণা চালাতে পারবেন।

‘প্রধানমন্ত্রীর সিলেট সফরের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী আবহ তৈরি হলো। অন্যান্য দলও আওয়ামী লীগকে অনুসরণ করবে। নির্বাচনী প্রচারণায় নামবে। এমনকি বিএনপি প্রকাশ্যে নির্বাচন নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু না বললেও ভেতরে ভেতরে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে। ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার মামলার রায় দেখে তারাও নির্বাচনী প্রচারণায় নামবে বলে আমার বিশ্বাস’—উল্লেখ করেন অধ্যাপক মিজানুর রহমান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট সফরের ফলে দেশে এক ধরনের নির্বাচনী আবহ তৈরি হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মিজানুর রহমান শেলী। ‘তবে এই আবহ তখনই অব্যাহত থাকবে, যদি সরকার প্রতিপক্ষের মধ্যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে আস্থা তৈরি করতে পারে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে হবে। সবাইকে প্রচারণার সমান সুযোগ দিতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। সরকার চাইলে তা পারে’—উল্লেখ করেন এই সাবেক মন্ত্রী।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি,জাতীয় সংসদ নির্বাচন,নির্বাচনী প্রচারণা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist