মহান বিজয় দিবস আগামীকাল
আগামীকাল ১৬ ডিসেম্বর শনিবার, মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন; বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন দেশের অভ্যূদয়ের দিন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃতে দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্রর মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের এই দিনে বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। যে অস্ত্র দিয়ে বর্বর পাকবাহিনী ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করেছে, ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছে সেই অস্ত্র পায়ের কাছে নামিয়ে রেখে এক রাশ হতাশা এবং অপমানের গ্লানি নিয়ে লড়াকু বাঙালির কাছে পরাজয় মেনে নেয় তারা। সেই থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালিত হয়ে আসছে। এবার জাতি ৪৭তম বিজয় উদযাপন করবে।
দেশের শ্রেষ্ঠসন্তান বুদ্ধিজীবী এবং একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে এই স্বস্তি নিয়ে কৃতজ্ঞ জাতি সশ্রদ্ধ বেদনায় স্মরণ করবে দেশের পরাধীনতার গ্লানি মোচনে প্রাণ উৎসর্গ করা বীর সন্তানদের। দিবসটি পালন শুরু হবে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে। মহান বিজয় দিবসে উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
এবারের বিজয় দিবস পালিত হবে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। শোক আর রক্তের ঋণ শোধ করার গর্ব নিয়ে উজ্জীবিত জাতি দিবসটি পালন করবে অন্যরকম অনুভূতি নিয়ে। অফুরন্ত আত্মত্যাগ এবং রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই মহান বিজয়ের ৪৬ বছর পূর্ণ হয়েছে। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জনতার ঢল নামবে। শ্রদ্ধার সঙ্গে তারা শহীদদের উদ্দেশে নিবেদন করবেন পুষ্পাঞ্জলি। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সব প্রান্তের মানুষ অংশ নেবে বিজয় দিবসে। বঙ্গবন্ধুর বজ্র নিনাদ ভাষণ আর মুক্তিযুদ্ধের সময়ের জাগরণী গানে আকাশ-বাতাস হবে মুখরিত।
মহান বিজয় দিবস সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হবে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হবে আলোকসজ্জা। হাসপাতাল, কারাগার ও এতিমখানাগুলোতে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে। সংবাদপত্র বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে, বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘যার যা কিছু আছে’ তা নিয়েই স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। পরে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালিরা অস্ত্র হাতে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই মুক্তিযুদ্ধে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, ভুটান, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সাহায্য-সহযোগিতা করে। অবশেষে বাঙালি দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে বুকের উষ্ণ রক্তে রাঙিয়ে রাতের বৃন্ত থেকে ছিনিয়ে আনে ফুটন্ত সকাল।
বিজয়ের এই ৪৬ বছর অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়েছে জাতি। কখনো সামনে এগিয়েছে, আবার পিছিয়ে গেছে নানা রাজনৈতিক টানাপড়নে। তবুও হতোদ্যম হয়নি জাতি। বিলম্বে হলেও শুরু হয়েছে ইতিহাসের দায়-মোচনের প্রচেষ্টা। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার সম্পন্ন হয়েছে, চলছে একাত্তরের মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। এছাড়া হার না মানা বাঙালি অর্থনৈতিক-সামাজিক এবং ক্রীড়াতেও উড়াচ্ছে বিজয় নিশান।পিডিএসও/মুস্তাফিজ