গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৭

প্রবাসীদের ভোটার করতে নতুন উদ্যোগ

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের ভোটার করতে নতুন উদ্যমে তৎপর হয়ে উঠেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরআগে কয়েক দফা একই ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। ফের নতুন করে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে এই সাংবিধানিক সংস্থাটি। এবার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় (স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, প্রবাসী কল্যাণ, শ্রম ও কর্মসংস্থান), শ্রমিক পাঠানো সংগঠন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজটি সমাধান করতে চাইছে তারা। এর জন্য আগামী এক মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত একটি বড় পরিসরে সেমিনারের আয়োজন করতে যাচ্ছে কমিশন। এরআগে নির্বাচন কমিশনের মাঠ অফিসের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের নিয়ে আলাদা একটি সভার আয়োজন করা হবে। শিগগিরই সভাটি করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগ থেকে প্রবাসীদের ভোটার করার জন্য একটি খসড়া প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করে কমিশনে উত্থাপন করলে তা নাকচ হয়। খসড়া ওই প্রস্তাবনায় রয়েছে—বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোতে ইসির স্বতন্ত্র ডেস্ক খুলে সরাসরি ভোটার করা, দালিলিক প্রমাণ হিসেবে তাদের স্থায়ী ঠিকানা কিংবা পাসপোর্টের স্থায়ী ঠিকানা ধরে তালিকাভুক্ত করা, দূতাবাসে লোকাল সার্ভার স্টেশন স্থাপন করা, ছুটি ও অফটাইমগুলোকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা এবং পর্যাপ্ত শ্রমিক অধ্যুষিত মধ্যপ্রাচ্যসহ দক্ষিণ-এশিয়ার দেশগুলো দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু করা। এর জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে সৌদি আরব, কাতার ও মালয়েশিয়াকে বেছে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন উইংয়ের মহাপরিচালক ব্রি. জে. মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিষয়ে আমরা খুবই সচেতন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়ের ব্যাপার রয়েছে। কোনো পাইলট প্রকল্প করা হবে না, কারণ এনআইডির সবাই অভিজ্ঞ।’

ইসির যুগ্মসচিব এবং এনআইডির পরিচালক (অপারেশন) আবদুল বাতেন বলেন, প্রবাসীদের ভোটার করার জন্য একটি চূড়ান্ত খসড়ার প্রস্তাবনাটি গ্রহণ করা হয়নি। কারণ বিষয়টি কমিশনের একার পক্ষে সম্ভব নয়; অনেকগুলো মন্ত্রণালয় জড়িত। তাই প্রস্তাবিত খসড়া নিয়ে ইসির সচিবালয়সহ মাঠ অফিসের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি সভার আয়োজনের নির্দেশ রয়েছে কমিশনের; তাদের পরামর্শেই নতুন করে খসড়া প্রস্তাব তৈরি করা হবে। পাশাপাশি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, পাসপোর্ট অধিদফতর এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। তাদের দেওয়া সুপারিশ ও পরামর্শগুলো নিয়ে প্রবাসীদের ভোটার করার জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ইসির সূত্রমতে, সব নাগরিকের ভোটার জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার এখতিয়ার ইসির। প্রবাসীদের ক্ষেত্রে প্রদ্ধতিগত প্রক্রিয়ায় কোনো ভিন্নতা নেই। কিন্তু কমিশনের ডাটাবেজ ব্যবহার করে প্রবাসীদের ভোটার করার ইচ্ছা পোষণ করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে সৌদি দূতাবাসের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব কমিশনে আসে। কমিশন তাদের এই প্রস্তাবটি সরাসরি নাকচ করে দেয়।

এরআগে প্রবাসীদের ভোটার করার উদ্যোগটি নিয়েছিল বিদায়ী কাজী রকিব উদ্দীন আহমদ। তাদের প্রস্তাবে এনআইডির মাধ্যমে অনলাইনে বায়োমেট্রিক সংগ্রহের সিদ্ধান্ত ছিল। আগের প্রস্তাব বাদ দিয়ে প্রবাসীদের প্রবাসে থাকাবস্থায় ভোটার করার প্রস্তাব করা হয়েছে এবার। কিন্তু সে প্রস্তাবটিও কমিশন সরাসরি নাকচ করেছে। কারণ খান মো. নুরুল হুদার কমিশন চাইছে না নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে অগ্রজদের মতো আরেক দফা ব্যর্থ হতে। তাই একটু বিলম্ব হলেও প্রবাসীদের ভোটার করার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যতগুলো সেক্টর রয়েছে সবাইকে করার পক্ষে বর্তমান কমিশন।

তবে এনআইডির সার্ভার ব্যবহার করে অন্য কেউ এই কাজটি করতে চাইলে কমিশন তাতে সম্মতি দেবে না। সাংবিধানিক সংস্থাটির যুক্তি—সবার পরামর্শ ও সুপারিশ নিতে তাদের কোনো আপত্তি নেই; ভোটার করার চাবি তাদের হাতেই থাকতে হবে। কারণ দেশের ষোলো কোটি মানুষের তথ্যের গোপনীয় রক্ষার গুরুদায়িত্ব তাদের। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ অনেকেই কমিশনের ডাটাবেজে সরাসরি প্রবেশের অনুমতি চেয়েও পায়নি। এমনকি ফ্রান্সের ওবার্থু টেকনোলজি যারা স্মার্ট কার্ড মুদ্রণ ও বিতরণের দায়িত্বে ছিল তারাও এনআইডির ডাটাবেজে প্রবেশের অনুমতি পায়নি। এই স্পর্শকাতর ইস্যুতে তাদের সঙ্গে স্মার্ট কার্ড মুদ্রণ ও বিতরণ কার্যক্রম চুক্তির মেয়াদ নিয়মিত করেনি নির্বাচন কমিশন। এখন নিজস্ব উদ্যোগেই চলছে প্রযুক্তিনির্ভর এই কার্ডটির কার্যক্রম।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১৯৯৮ সালে দেশের উচ্চ আদালত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার সংবিধান স্বীকৃত বলে ঘোষণা দেন। দীর্ঘ ১৮ বছরেও সেই ঘোষণা বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। বিশ্বের ১৫৭টি দেশে কোটির উপরে প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। বর্তমান কমিশনের এই উদ্যোগে তাদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের অবসান হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা। এর আগে ১/১১ ড. শামসুল হুদা কমিশনের দুজন কমিশনার এ বিয়য়ে অভিজ্ঞতা নিতে যুক্তরাজ্য সফর করেছিলেন। এর পেছনে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় হয়েছিল। এ নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন সাবেক কমিশনাররা। সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহম্মদ ছহুল হোসাইন বলেন, প্রবাসীদের ভোটার করার উদ্যোগ আমরা নিয়েছিলাম। তবে বর্তমান কমিশনের উদ্যোগটি প্রশংসনীয়।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নির্বাচন কমিশন,ইসি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist