reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ভাসান চরে থাকবে রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারের রাখাইন থেকে প্রাণ নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আবাসস্থল হচ্ছে ভাসান চরে। ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এই তথ্য জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আমরা আশ্রয় দিয়েছি। মিয়ানমারে সেদেশের রাষ্ট্রীয় বাহিনী রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। অনেক ছোট ছোট বাচ্চা বাংলাদেশে চলে এসেছে। কেউ কেউ একাই চলে এসেছে। এতিম হয়ে অনেকে এখানে এসেছে। আমরা আশ্রয় দিয়ে তাদের সাহায্য করে যাচ্ছি। আমরা চাই আন্তর্জাতিক মহল যেন মিয়ানমারকে চাপ দেয়। মিয়ানমার যেন তাদের ফিরিয়ে নিয়ে পুনর্বাসন করে। নিরাপত্তা দেয়। একই সঙ্গে মিয়ানমার সরকার তার নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যথাযথ নিরাপত্তা দিয়ে রাখে সেই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতেও আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

রোহিঙ্গাদের বিশেষ এলাকায় নেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত অল্প জায়গায় এত মানুষ থাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে সেখানে। প্রচ- বৃষ্টি। আমরা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাদের কাছাকাছি একটি দ্বীপ আছে। নেভি সেটা দেখাশোনা করে। সেখানে আমরা যেন তাদের স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখতে পারি সেই ব্যবস্থা করছি। সেখানে সাইক্লোন সেন্টার হবে। স্কুল হবে। যত দিন তারা ফিরে না যায় তত দিন পর্যন্ত অস্থায়ী ভিত্তিতে তাদের থাকার ব্যবস্থা করব আমরা। তাদের পরিচয়পত্র দিয়ে দিচ্ছি। তাদের পরিচয়পত্র দিলে তাদের আইডেনটিফাই করতে সুবিধা হবে। ওই দ্বীপে ১০ লাখ লোক রাখা কোনো ব্যাপার না।

দ্বীপের নাম নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ বলে জালিয়ার চর। কেউ বলে ঠ্যাঙ্গার চর। কেউ বলে ভাসান চর। ভাসান চর নামটা বেশি সুন্দর বলে আমার কাছে মনে হয়। এ নামটাই আমি পছন্দ করেছি। কারণ ভাসমান লোকজনই ওখানে থাকবে। তারা আসবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা নিয়ে সু চির সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ হয়নি।

সাক্ষাৎকারে জঙ্গিবাদ নিরসনে তার সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপ, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করতে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে সে বিষয়সহ নানা প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। শেখ হাসিনা বলেন, কফি আনান কমিশনের রিপোর্ট যেন বাস্তবায়ন হয় সেটিও আমি জাতিসংঘের কাছে তুলে ধরেছি। তবে মিয়ানমারকে আমি বলতে চাই, কেউ যদি মিয়ানমারে সন্ত্রাসী কর্মকা- করে সে ক্ষেত্রে আমরা তাদের (মিয়ানমার সরকারকে) সহযোগিতা করব। তারা আমাদের তথ্য দিলে তাদের আমরা সহযোগিতা করব। কিন্তু তারা নিরীহ নিরপরাধ মানুষকে যেন হত্যা না করে। নির্যাতন না করে।

বাংলাদেশের নেতা বলেন, আন্তর্জাতিক মহলের প্রত্যেকেই আমাদের সহযোগিতা করছে। অনেক দেশ রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্য পাঠাচ্ছে। প্রত্যেকেই সহানুভূতিশীল। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারও সহযোগিতা করার কথা বলেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারাও সহযোগিতা করছে। চীনের পক্ষ থেকেও সহযোগিতা পাচ্ছি। জাতিসংঘ যা যা করার তাই তাই করবে বলে আমাকে জানানো হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কোনোভাবেই জঙ্গিবাদ সহ্য করব না। কারা এদের আশ্রয় দিচ্ছে। কারা অস্ত্র দিচ্ছে, অর্থ দিচ্ছে, সেটা খুঁজে বের করতে হবে। ওআইসিতেও আমি বলেছি। কোনো দেশের সঙ্গে সমস্যা থাকলে সেটা বসে আলোচনা করে সমাধান করেন। যুদ্ধ আমরা চাই না। আমরা শান্তি চাই। উত্তর কোরিয়া নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটা কথা আছে- রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলু খাগড়ার প্রাণ যায়। বড় বড় দেশগুলো শক্তির মহড়া দিচ্ছে। আমরা আমাদের দেশের মানুষকে দুবেলা খাবার কীভাবে দেব, অর্থনীতি কীভাবে বাড়াব, সেটি নিয়ে ব্যস্ত। আমরা যুদ্ধ চাই না।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর ক্ষমতা দখলের রাজনীতি শুরু হয়। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে। এরপর দল বানাল। সেই দল শিশু অবস্থায় জয়ী হলো। কীভাবে জয়ী হলো। ধীরে ধীরে আমরা এই দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলাম। এরপর আবার বিএনপি ক্ষমতায় আসে। আবার দীর্ঘ সাত বছর। এরপর আবার আমরা সংগ্রাম করলাম। মানুষ ভোটাধিকার ফিরে পেল। ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’- এই স্লোগান তো আমিই প্রথম দিয়েছি। আমার দলের অধীনে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে সবগুলো নিরপেক্ষ হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে কি বিএনপি জিততে পারত? পারত না।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জয়ী হননি। আমরা একটি কথাই বিশ্বাস করি- জনগণ ভোটের মালিক। এটা তার সাংবিধানিক অধিকার। সে তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিবে। সেটা আমি সর্বান্তকরণে বিশ্বাস করি। আমরা যে কাজ করেছি তাতে যদি জনগণ খুশি হয় ভোট দেবে, না হয় দেবে না। যা দেবে তাই আমরা মেনে নিব। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করেছি। কমিশনকে এখন টাকাও চাইতে হয় না। বাজেটে আলাদা করে তাদের টাকাও আমরা দিয়ে দেই। আগামী নির্বাচন অবশ্যই অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। আর নির্বাচনের আয়োজন করবে এই নির্বাচন কমিশনই।

পিডিএসও/মুস্তাফিজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ভাসান চর,রোহিঙ্গা,ভয়েস অব আমেরিকা,প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,একান্ত সাক্ষাৎকার
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist