রোহিঙ্গা ঢুকেছে সোয়া ৪ লাখ
মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে এসে সোয়া ৪ লাখ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। গত ২৫ দিনে অনুপ্রবেশ করা এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে আন্তর্জাতিক সাহায্যে মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে রোহিঙ্গা পরিস্থিতির বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হেসেন চৌধুরী মায়া। সম্পূর্ণ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে এলেও শিগগিরিই মিয়ানমার তার নাগরিকদের ফেরত নেবে এটাই বাংলাদেশের প্রত্যাশা বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদসহ অন্যান্য কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
মায়া বলেন, গত ২৫ আগস্ট থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনিবন্ধিত মিয়ানমারের রোহিঙ্গার সংখ্যা ৪ লাখ ২৪ হাজার। তারা প্রতিনিয়ত স্থান পরিবর্তন এবং বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করায় প্রকৃত সংখ্যা কম-বেশি হতে পারে। এই পর্যন্ত বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের সংখ্যা ৫ হাজার ৫৭৫ জন। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে বিগত কয়েক বছর ধরে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব নাগরিক দেশের অভ্যন্তরে সম্পূর্ণ অবৈধভাব মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
মন্ত্রী বলেন, আমরা সম্পূর্ণ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করছি। এতো বিশাল সংখ্যক বিদেশি নাগরিকের আশ্রয়দান বাংলাদেশের জন্য কষ্টদায়ক হলেও এ মানবিক সংকটের সময় রোহিঙ্গাদের সাময়িক সময়ের জন্য সীমান্তবর্তী কুতুপালং ক্যাম্পের পাশে নতুন ক্যাম্প স্থাপন করে তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাদের জন্য বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব সব ধরনের মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, সম্পূর্ণ মানবিক কারণে আমরা মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের আশ্রয় দিয়েছি। অতি দ্রুত মিয়ানমার তার নাগরিকদের ফেরত নেবে এইটাই আমাদের প্রত্যাশা। রোহিঙ্গা সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের জন্য কূটনৈতিক পর্যায়ে সকল ধরনের যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। আমার বিশ্বাস বিশ্ববাসী একমত হবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য ওআইসিভুক্ত দেশসমূহকে আহ্বান জানিয়েছেন উল্লেখ করে মায়া বলেন, তাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে সকল দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, আজারবাইজান, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, মালয়েশয়া, মালদ্বীপসহ বিভিন্ন দেশ তাতে সমর্থন দিয়েছে। তিনি জানান, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং এবং টেকনাফ উপজেলার নয়াপাড়া ক্যাম্পে ৩৩ হাজার ৫৪২ জন নিবন্ধিত রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। বিগত ২৫ বছর ধরে এই নিবন্ধিত শরণার্থীদের কার্যক্রম ইউএনএইচসি আর, ডব্লিউএফপি এর সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় তত্ত্বাবধান করে আসছে।
বর্তমানে ১৪টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা বসবাস করে আসছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে ছড়িয়ে থাকা চার লক্ষাধিক মানুষকে খাদ্য, চিকিৎসা, নিরাপত্তাসহ প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে একটি স্থানে অস্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত জেলা প্রশাসন এবং ইউএনএইচসিআর, আইওএম, বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি, ইউএএফপিএ, ইউনিসেফ, এসিএফ-সহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা নতুন আগমনকারী রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা প্রদান করছে। এ পর্যন্ত দেশ-বদেশি সংস্থা থেকে প্রায় ২৫০ মেট্রিকটন চাল পাওয়া গেছে। এছাড়া ২০ মেট্রিকটন আটাসহ অন্যান্য ত্রাণ সামগ্রী পাওয়া গেছে।
ডব্লিউএফপি আগামী চার মাস চার লাখ পরিবারের খাবার সহায়তা করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইউএনএইচসিআর খাদ্য, চিকিৎসা, আশ্রয়সহ সার্বিক সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কুতুপালং এলাকায় প্রায় ২ হাজার একর জায়গায় ১৪ হাজার শেড নির্মাণের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। ত্রাণ বিতরণ সুষ্ঠু করতে ১৩টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছ। তবে বিচ্ছিন্নভাব যেন কেউ ত্রাণ না নেয় সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।পিডিএসও/মুস্তাফিজ