reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৩ আগস্ট, ২০১৭

সেপ্টেম্বরে বসছে পদ্মা সেতুর স্প্যান

পদ্মা নদীর তলদেশে মাটির স্তরের গঠন নিয়ে জটিলতা রয়েই গেছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বর্ষায় নদীর প্রবল স্রোত। এসব প্রতিকূলতা জয় করে মূল সেতুর পাইলিংয়ের কাজ চলছে পদ্মার দুই পাড়ে (মাওয়া ও জাজিরা)। জাজিরা অংশে সব পিলারের পাইলিংয়ের মাটি পরীক্ষার কাজও শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ।

নদীর দুই পাড়জুড়ে দেশি-বিদেশি শ্রমিক-প্রকৌশলীরা সেতু নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তদারকিতে যুক্ত রয়েছে সেনা বাহিনীর বিশেষজ্ঞ দল। চলতি বছরের জুনের শেষ দিকে এই সেতু দৃশ্যমান করতে স্প্যান বসানোর কথা থাকলেও নানা ধরনের টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে তা হয়ে ওঠেনি।

অতি বৃষ্টি ও প্রবল পানির স্রোতের কারণে মূল নদীতে এই মুহূর্তে কাজ বন্ধ থাকলেও ব্যাপক কাজ চলছে অন্যত্র। লক্ষ্য একটাই। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া। টেকনিক্যাল কাজগুলো শেষ না হওয়ায়, স্প্যান বসানোর কাজ চলতি মাসেও সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন সেতু সংশ্লিষ্টরা। তবে সেপ্টেম্বরে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান করতে দুই পিলারের মধ্যে স্প্যান বসানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম।

পদ্মা সেতু প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এমন কর্মকর্তারা জানান, বিশ্বের অন্যতম খরস্রোতা নদীগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পদ্মা অন্যতম। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার সেতু প্রকল্প অংশে পদ্মা আরও তীব্র খরস্রোতা। গত ৩০ জুনের মধ্যে স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা ছিল। তবে তীব্র স্রোতের কারণে তা হয়নি।

প্রকল্প পরিচালক জানান, প্রবল বৃষ্টি, নদীতে পানির প্রবল স্রোত। তাই এই মুহূর্তে মূল নদীতে কাজ করা যাচ্ছে না। এ কারণে মূল নদী বাদ দিয়ে অন্য এলাকায় কাজগুলো পুরো দমে চলছে। দিন-ক্ষণ ঠিক হয়নি। সেপ্টেম্বরের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে স্প্যান বসানোর কাজ শুরু করার প্রস্তুতি চলছে। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থেকেই জাজিরা পয়েন্টে স্থাপিত দু’টি পিলারের ওপর পদ্মা সেতুর স্প্যান বসানোর কাজ শুরু করবেন বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে ইঙ্গিত পাওয়া গেলেও বিষয়টি জানা নেই বলে জানিয়ছেন পদ্মা প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম।

সংশ্লিষ্ট সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, পদ্মার অন্যপ্রান্ত জাজিরা পয়েন্টে চলছে পাইল ড্রাইভ, মাওয়া পারে ট্রাস ফেব্রিকেশন ইয়ার্ডে চলছে স্টিলের কাঠামো ও স্প্যান জোড়া দেওয়ার কাজ। পিলারের ওপরে গাড়ি চলাচলের জন্য বসানো হবে এই স্প্যানগুলো। দেখা গেছে, মাওয়া চৌরাস্তার দক্ষিণে বিস্তৃত প্রকল্প এলাকার ট্রান্স ফেব্রিকেশন ইয়ার্ডে চলছে প্রায় তিন হাজার টনের একেকটি স্প্যান তৈরির কাজ।

সেতু প্রকল্পের প্রকৌশলীরা জানান, সেতুর মোট ৪২টি পিলারের মধ্যে এখন কাজ চলছে ১৬টির। পিলার বসবে পাইলের ওপর এবং মোট পাইল ২৪০টি। এর মধ্যে ৩০টি পাইলের কাজ পুরোপুরি এবং ৫৯টির কাজ অর্ধেক সম্পন্ন হয়েছে। পদ্মা সেতুতে মোট পিলারের সংখ্যা ৪২টি। এর মধ্যে মাওয়া প্রান্তে ২১টি ও জাজিরা প্রান্তে ২১টি। এসব পিলারের ওপর বসানো হবে স্প্যান। স্প্যানের ওপর ঢালাই দিয়ে গাড়ি চলাচলের জন্য উপযোগী করা হবে।

সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, জাজিরায় ৩৭ নম্বর পিলারের নিচে রড বেঁধে ক্যাপ লাগানো শুরু হয়েছে। জাজিরা প্রান্তে ৩৭ নম্বর থেকে শুরু হবে স্প্যান বসানোর কাজ। তা একে একে পাতা হবে ৪২ নম্বর পিলার পর্যন্ত। সেখানে শুরু হয়েছে কংক্রিট ফেলার কাজ। ৩৮ নম্বর পিলারে ক্যাপ লাগানোর কাজও শুরু হয়েছে। ৩৭ থেকে ৪২ নম্বর পিলার পর্যন্ত ক্যাপ লাগানো শেষ হলেই এসব পিলারের ওপর বসানো শুরু হবে স্প্যান। নির্মাণাধীন পিলারগুলোর ওপর প্রথম দফায় কমপক্ষে পাঁচটি স্প্যান (স্টিলের কাঠামো) বসানোর প্রস্তুতি চলছে।

এদিকে হ্যামার জটিলতায় প্রায় ২৫ দিন বন্ধ থাকার পর জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে পদ্মার তলদেশে পাইল বসানো শুরু হয়েছে। ৩৬ নম্বর পিলারের পাইল স্থাপন করেছে দুই হাজার ৪০০ কিলোজুল ক্ষমতার একটি হ্যামার। এই হ্যামার মেরামতের প্রয়োজনে পাইল বসানোয় সেতুর কাজ কয়েক দিন বন্ধ ছিল। জানা যায়, এ পর্যন্ত যে ক’টি পাইল বসানো হয়েছে, কয়েকটি বাদে এগুলোর সবই করা হয়েছে জার্মানির এই হ্যামার দিয়ে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এদিকে সেতুর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপরের লেয়ারে কংক্রিট দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। গত ২৩ জুলাই ৩৮ এবং ১৭ জুলাই ৩৭ নম্বর পিলারের বেইস কংক্রিটিং সম্পন্ন হয়। সম্প্রতি আরও এই পিলার দু’টির কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে। এরপরই সেপ্টেম্বরে পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যানটি (সুপার স্ট্রাকচার) স্থাপন করা সম্ভব হবে। এরই মধ্যে জাজিরা প্রান্তের ভায়াডাক্টের (সংযোগ সেতুর) ১৩৬টি পাইল স্থাপন হয়ে গেছে। আগস্টে মাওয়া প্রান্তের সংযোগ সেতুর এই কাজও শুরু হয়ে যাবে।

এদিকে পদ্মা সেতুর বাকি ১৪টি পিলারের চূড়ান্ত ডিজাইন নিয়ে ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানও কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির উচ্চপর্যায়ের তিনজন বিশেষজ্ঞ সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে গেছেন। এখন ডিজাইনের চূড়ান্ত কাজ চলছে। এ পর্যন্ত মূল সেতুর ৮০টি পাইল স্থাপন হয়েছে। এর মধ্যে নদীতে ৬৪টি টিউব পাইল এবং জাজিরা প্রান্তের তীরের সর্বশেষ ৪২ নম্বর পিলারের ১৬টি বোরেট পাইল। এসব পাইলের মধ্যে কংক্রিটিং হয়েছে ৩৪টি পাইল।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, ‘সংশ্লিষ্টরা কাজ করছে। কেউ তো আর বসে নেই। বিদ্যমান আবহাওয়াটা মাথায় রাখতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। আমি নিয়মিত কাজের অগ্রগতি তদারকি করছি। সময় পেলেই ছুটে যাচ্ছি প্রকল্প এলাকায়।’

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পদ্মা সেতু,স্প্যান
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist