‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ...’ আজ সোমবার পবিত্র ঈদ-উল ফিতর। গতকাল রোববার পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় আজ বাংলাদেশের মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভা শেষে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান সাংবাদিকদের একথা জানান। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে গতকাল সন্ধ্যায় ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা শেষে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে সারাদেশে মুসলমানরা তাদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করবে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা পবিত্র রমজানের পুরো মাস রোজা পালনের পর এখন জামাতে ঈদের নামাজ আদায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন। ধনী-গরীব, বড়-ছোট সবাই এককাতারে দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ইতোমধ্যে সরকারী-বেসরকারি উদ্যোগে ঈদের জামাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

রাজধানীর সুপ্রীম কোর্ট প্রাঙ্গণস্থ জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের নামাজের সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নামাজ আদায়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও পুলিশসহ আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মুসল্লীদের নিরাপত্তায় নিয়েজিত থাকবেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে রাজধানীতে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। এতে ইমামতি করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান। বিকল্প ইমাম হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শায়খুল হাদীস মাওলানা সৈয়দ ওয়াহীদুয্যামান।

রাষ্ট্রপতি, বিচারপতিগণ, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবর্গ, ঢাকায় নিয়োজিত মুসলিম বিশ্বের কূটনীতিকবৃন্দ জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। জাতীয় ঈদগাহে মহিলাদের জন্য আলাদা নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় ঈদগাহে প্রধান জামাত অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন শনিবার দুপুরে জাতীয় ঈদগাহের সার্বিক প্রস্তুতি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেন, জাতীয় ঈদগাহের প্রধান জামাতে নামাজ আদায়ে মুসল্লীদের জন্য ডিএসসিসি সবধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তবে বাড়তি সর্তকতা হিসেবে এবার জাতীয ঈদগাহে বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

ঈদের প্রধান জামাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‌্যাব ও পুলিশসহ আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আজ রোববার থেকেই সার্বক্ষণিক নজরদারি বজায় রেখেছেন। সাদা পোশাকে র‌্যাব এবং পুলিশ সদস্যরাও তৎপর রয়েছেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া শনিবার জাতীয় ঈদগাহ মাঠ পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের জানান, ঈদের জামাত শান্তিপূর্নভাবে অনুষ্ঠানে ডিএমপি’র পক্ষ থেকে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে জায়নামাজ ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে মুসল্লীদের প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, জননিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাগ বা অন্য কিছু নয়, শুধু জায়নামাজ সাথে নিয়ে মুসল্লীরা জামাতে নামাজ আদায় করতে পারবেন। ব্যাগসহ ঈদগাহ ও জাতীয় মসজিদে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। রাজধানীর প্রায় ৫০০ স্থানে ছোট-বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। যেসব জায়গায় ঈদ জামাত হবে, সেসব স্থানে পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সব স্থানেই পোশাক পরা ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন বলে ডিএমপি কমিশনার জানিয়েছোন।

এছাড়া জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে এবারও ৫টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত হবে সকাল ৭টায়। এরপরে পর-পর আরো ৪টি জামাত হবে যথাক্রমে ৮টা, ৯টা, ১০টা ও সকাল পৌনে ১১টায়। বায়তুল মোকাররমের প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন এই মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী নদভী, দ্বিতীয়টিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস মাওলানা ওয়ালিয়ুর রহমান খান, তৃতীয়টিতে জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মহিউদ্দিন কাশেম, চতুর্থটিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির ধর্মীয় প্রশিক্ষক মাওলানা জাকির হোসেন এবং পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ইমামতি করবেন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিতব্য ঈদ জামাত দেশের প্রধান ঈদ জামাত হিসেবে গণ্য হবে। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল ৮টায় ঈদের জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ, জাতীয় সংসদের হুইপবৃন্দ, সংসদ সদস্যগণ ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকার মুসল্লীরা এই জামাতে অংশ নেবেন। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে উভয় কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডের মসজিদ, মাঠ ও ঈদগাহ মিলিয়ে মোট ৪০৮টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ডিএসসিসির ৫৭টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটিতে ৪টি করে ২২৮টি স্থানে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সমাজকল্যাণ অফিসার এনায়েত হোসেন জানান, উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৬টি ওয়ার্ডের প্রত্যেকটিতে ৫টি করে মোট ১৮০টি ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামিয়ায় ঈদের দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায় এবং দ্বিতীয় জামাত হবে সকাল ৯টায়। প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন মসজিদের সিনিয়র ইমাম খতিব ড. সৈয়দ মুহাম্মদ এমদাদ উদ্দীন এবং দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন মসজিদের ইমাম খতিব হাফেজ নাজীর মাহমুদ।

প্রতি বছরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে সেখানে ঈদ জামাতের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। গত বছর ঈদ-উল-ফিতরে জঙ্গি হামলার পরও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আজ রোববার পৃথক বাণী প্রদান করেছেন। অন্যদিকে ঈদ উপলক্ষ্যে ৩ দিনের সরকারি ছুটি আজ রোববার থেকে শুরু হয়েছে। অপরদিকে ঈদের দিন সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এই উপলক্ষে বনানীর ঢাকাগেট থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত প্রধান সড়ক এবং সড়ক দ্বীপসমূহে জাতীয় পতাকা এবং বাংলা ও আরবিতে ঈদ মোবারক লেখা ব্যানার ও ফেস্টুন দিয়ে সাজানোর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচারের ব্যবস্থা নিয়েছে। বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো ঈদ উপলক্ষে টানা ৭ দিন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা স¤প্রচারের ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়াও ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। ঈদের দিন দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয়কেন্দ্র, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।

এছাড়া ঈদেও জামাত শেষে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে রাষ্ট্রীয়নীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকেটে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সব শিশুপার্কে প্রবেশের সুযোগ এবং নগরী জুড়ে বিনোদন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহ জাতীয় কর্মসূচি ও নিজ নিজ কর্মসূচির আলোকে ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহে যথাযথ মর্যাদায় সরকারি কর্মসূচির আলোকে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। ঈদ উপলক্ষে মুসল্লীদের নিরাপত্তা এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজধানীসহ সারা দেশে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

পিডিএসও/মুস্তাফিজ