reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০২ এপ্রিল, ২০২০

মশক নিধন ও ডেঙ্গু মোকাবিলায় সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে : স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

​সম্ভাব্য ডেঙ্গু মোকাবিলায় সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। মন্ত্রীর নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থার দায়িত্বশীল প্রতিনিধিগণের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী জাতীয়/স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হবে। ডেঙ্গু মোকাবেলায় প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগের করনীয় নির্ধারণ করে মাননীয় মন্ত্রীর স্বাক্ষরে একটি আধা সরকারি পত্র প্রেরণ করা হবে।

সম্মিলীত উদ্যোগের অংশ হিসাবে দুই সিটি কর্পোরেশন, ক্যান্টনমেন্ট এলাকা, বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ একযোগে মশক নিধন অভিযান শুরু করবেন। স্থানীয় সরকার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সময়সীমা নির্ধারণ করে দিবেন।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে মশক নিধন ও ডেঙ্গু প্রতিরোধ সংক্রান্ত এক আন্তঃ সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এতে সভাপতিত্ব করেন।

মন্ত্রী বলেন, সরকারি ভবন, লেক, পার্ক, খাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর বা কর্তৃপক্ষ কিন্তু মশা মারার কাজ করবে সিটি কর্পোরেশন।

দীর্ঘ ছুটির সময় বন্ধ থাকা সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলো থেকে এডিস মশার উৎপত্তি যেন না হয় তা নিশ্চিত করারও নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গত ৩০ মার্চ করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে ৬৪টি জেলায় ভিডিও কনফারেন্স করেন। এসময় তিনি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি মশক নিধন এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী এবং সিটি কর্পোরেশনের মেয়রগণকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা প্রদান করেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ হতে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মশক নিধনে সর্বাত্বক উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশতি ব্যক্ত করেন। এ প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদুল্লাহ খন্দকার, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ নাসিরুজ্জামানসহ সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ উপস্থিতি ছিলেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ লেকগুলো পরিস্কার করে দিলে আমরা ওষুধ ছিটাবো। তাহলে মশা মরবে। এখনই সময় একসাথে কাজ করার। আমি ১৫ মে দায়িত্ব পাবো, কিন্তু এখন থেকেই কাজ করে যাচ্ছি।

সভায় কৃষি সচিব জানান, ৩টি প্রতিষ্ঠান কীটনাশক আমদানি করে। তাদের কাছ থেকে যে কেউ কীটনাশক কিনতে পারে। তাছাড়া ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকেও সরাসরি কীটনাশক আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে।

সভায় নিম্ন বর্ণিত সিন্ধান্তসমূহ গৃহীত হয় :

(১) মশার উৎপত্তিস্থল যেমন শহরের সকল খাল, নালা, দুটি বাড়ি বাস্থাপনার মধ্যবর্তীস্থলের অপরিচ্ছনন্ন স্থান, কাঁচা বাজার, সরকারি অফিসসমূহ, সরকারি আবাসিক স্থাপনা জরুরি ভিত্তিতে পরিচ্ছন্ন করতে হবে।

(২) এডিস মশার বিস্তাররোধে অফিস ছুটিকালীন সময়ে সকল সরকারি বেসরকারি দপ্তরের টয়লেটের কমোডসমূহ অত্যাবশ্যকীয়ভাবে বন্ধ রাখতে হবে।

(৩) নির্মাণাধীন ভবন এবং যেসকল সরকারি/বেসরকারি স্থাপনা নিজ উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখবেনা, বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার অভাবে লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া যাবে সে সকল ব্যক্তি, স্থাপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে আইন অনুযায়ী পুন:পুন: জরিমানার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

(৪) প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে পরিচ্ছন্নতা অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। প্রয়োজনে প্রতি ওয়ার্ডে ৮টি সাব কমিটি গঠন করে প্রতি কমিটিতে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ২০ জন গণ্যমান্য ব্যক্তিকে অর্ন্তভূক্ত করে একটি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করতে হবে।

(৫) মশকনিধনে এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার স্বার্থে মন্ত্রণালয়, সকল সিটি কর্পোশেন, ঢাকা ওয়াসা সম্মিলিতভাবে কাজ করবে। সিটি কর্পোরেশসমূহ আগামী ৭ দিনের মধ্যে নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে দাখিল করবে।

(৬) সভায় জানানো হয় যে, ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মশক নিধন, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এ সকল প্রকল্পে প্রয়োজনীয়তা যাচাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

(৭) সম্ভাব্য ডেঙ্গু মোকাবেলায় সম্মিলিত উদ্যোগ হিসাবে এলজিআরডি মন্ত্রীর নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সকলমন্ত্রণালয়ে/বিভাগের/সংস্থার দায়িত্বশীল প্রতিনিধিগণের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী জাতীয়/স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হবে। ডেঙ্গু মোকাবেলায় প্রতিটি মন্ত্রণালয়/বিভাগের করনীয় নির্ধারণ করে মাননীয় মন্ত্রীর স্বাক্ষরে একটি আধা সরকারি পত্র প্রেরণ করা হবে।

(৮) কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একাধিক উদ্যোক্তা/আমদানীকারককে আমদানীর সুযোগ দেয়া হলে মশক নিধনে ব্যবহৃত কয়েল, এ্যারোসোলের মত বাজারে তাহা সহজলভ্য হয় তাহলে মানুষ স্ব স্ব উদ্যোগে হস্তচালীত মেশিন দিয়ে নিজস্ব আঙ্গিনার মশক নিধন করতে পারবে।

(৯) সম্মিলীত উদ্যোগের অংশ হিসাবে দুই সিটি কর্পোরেশন, সেনা এলাকা, বেসরকারী বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ একযোগে মশক নিধন অভিযান শুরু করবেন। স্থানীয় সরকার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে সময়সীমা নির্ধারণ করে দিবেন।

(১০) ঢাকা শহরের খালসমূহ/নালাসমূহ একযোগে পরিচ্ছন্নকরার স্বার্থে এবং স্থাপনাসমূহ পরিচ্ছন্ন করার স্বার্থে সভায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, গণপূর্ত বিভাগ,রাজউক, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেয়া হয়।

(১১)বর্তমানে করোনা ভাইরাস সংক্রমনের কারণে যে দীর্ঘমেয়াদী ছুটি চলমান আছে, এ সময়ের মধ্যে যেহেতু শহরে জনসাধারণ ওযানবাহনের চাপ কম আছে এ সময়টা পুরো ঢাকা শহরকে শতভাগ পরিস্কার করার সুযোগ সিটি কর্পোরেশনকে নিতে হবে।

(১২) মাননীয় মন্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের চলমান পরিচ্ছন্নতা অভিযান সরেজমিন পরিদর্শন করবেন। এর বাইরে উভয় সিটি কর্পোরেশনের ল্যান্ডফিলসহ অন্যান্য স্থাপনা ঢাকা ওয়াসা ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের ব্যাবস্থাধীন খাল/নালাসমূহ পরিচ্ছন্নতাকরন কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শন করবেন। সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর/সংস্থা সময় নির্ধারণ করে অবহিত করবেন। অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন) এ কার্যক্রম সমন্নয় করবেন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মশক নিধন,ডেঙ্গু,উদ্যোগ,স্থানীয় সরকারমন্ত্রী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close