নিজস্ব প্রতিবেদক

  ৩১ মার্চ, ২০২০

করোনা ঝুঁকি নিয়েই সড়কে বাড়ছে মানুষ-যানবাহন

কারো বাসার খাবার ফুরিয়েছে, কারো ফুরিয়েছে ওষুধ; আবার কারো খাবার-দাবার ও টাকাও ফুরিয়েছে। কারো গ্রামে টাকা পাঠাতে হবে, হাতে এক টাকাও নেই। কিংবা কারো বিশেষ প্রয়োজন পড়েছে। এ রকম শত প্রয়োজনে মানুষ রাস্তায় বের হতে শুরু করেছে। কেউ উপার্জনে, কেউ কেনাকাটায়, কেউ অন্য কোনো প্রয়োজনে ছুটছেন। তবে রাস্তায় সবচেয়ে বেশি বেরিয়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ।

এদিকে রাজধানীর সড়কগুলোতে গত কয়েক দিনের তুলনায় পরিবহন বেড়ে গেছে। করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে ১০ দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশনা দিলেও পঞ্চম দিনেই অনেকে নিজ নিজ প্রয়োজনে ব্যক্তিগত পরিবহন নিয়ে বেরিয়ে গেছে। রাস্তায় বেড়ে গেছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল এবং প্যাডেলচালিত রিকশা। সেসব বাহনে চড়ে গন্তব্যে ছুটছে লোকজন। যদিও বেশির ভাগ লোকের মুখেই মাস্ক দেখা গেছে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। লোকজনকে ঘরে রাখার জন্য যখন স্কুল-কলেজ বন্ধ দেওয়া হলো, সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলো, গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করা হলো— তখন রাস্তায় লোকজনের উপস্থিতি বেড়ে গেলে করোনা ঝুঁকি বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কারওয়ান বাজারে দেখা যায়, স্বাভাবিক সময়ের মতো কাঁচাবাজারের দোকান বসেছে। মানুষও কেনাকাটা করছে হরদম। শাকসবজির দামও তুলনামূলক কম। করোনার কারণে যে শারীরিক দূরুত্ব থাকা প্রয়োজন, তা নেই। ২০ থেকে ২১ মাস বয়সি বাচ্চাকে নিয়ে কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারে এসেছেন মো. আবদুল বারেক। তিনি রিকশা চালান, স্ত্রী অন্যের বাসায় কাজ করেন। তিনি কাজে গেছেন। করোনার কারণে তিনি রিকশা নিয়ে বের হন না। কিন্তু খাবার ফুরিয়ে যাওয়া ও স্ত্রীর কাজে যাওয়ায়, ছোট বাবুকে নিয়ে বাজার করতে যাচ্ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘কারওয়ান বাজারে কাঁচাবাজার করতে যামু। ৫ থেকে ৬ দিন ধরে বাইরে বের হই না। বাজার ফুরাইয়া গেছে, বাজার করমু। বাবুকে ঘরে থাইয়া আইতে হারি না। ওর মা কাজে গেছে।’

কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর ও হাতিরঝিল এলাকায় দেখা যায়, রাইডশেয়ারিং বন্ধ থাকলেও অনেকেই মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়েছেন ভাড়া মারতে। রিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি, পিকআপসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলছে।

এছাড়া কারওয়ান বাজার এলাকায় পোশাক পরিহিত তিনজন ট্রাফিক পুলিশ এবং হাতিরঝিল এলাকায় রাস্তায় নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক বাতিলগুলো কাজ করছিল।

নগরীর গাবতলী, শ্যামলী, আসাদগেট, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য দিনের চেয়ে রোববার সরকারি ছুটির পঞ্চম দিনে রাস্তায় ব্যক্তিগত পরিবহনের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। বিশেষ ছুটির মধ্যেও জীবিকা অর্জনের জন্য মানুষ ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বা পায়ে হেঁটে বেরিয়েছে। তবে করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদে থাকতে কারো কারো মুখে মাস্ক পরা দেখা গেছে। গণপরিবহন না পেয়ে অনেককে হেঁটেই গন্তব্যে ছুটতে দেখা যায়।

এছাড়া বেশ কয়েকটি বাসস্ট্যান্ডে দেখা যায়, যাত্রীর অপেক্ষায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, রিকশা ও প্রাইভেট কার দাঁড়িয়ে রয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষ ভাড়ায় এসব পরিবহনে নিজের গন্তব্যে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য, চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে বৈশ্বিক মহামারিতে পরিণত করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে গত ২৬ মার্চ থেকে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গণপরিবহনও। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের এ ভাইরাসকে ঠেকাতে দেশবাসীকে ছুটির এ সময়ে ঘরে অবস্থানের পরামর্শ দিয়েছে সরকার। সেজন্য রাস্তায় র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি তৎপর সশস্ত্রবাহিনীও।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
করোনা ঝুঁকি,সড়ক,যানবাহন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close