প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

কেন পিছিয়ে গেল বসন্ত

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ঘটনার দিন ও বিশেষ দিবসগুলো গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য বাংলা ক্যালেন্ডার পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে এই পরিবর্তন কেবল বাংলাদেশের জন্যই করা হয়েছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যেখানে বাংলা একটি অন্যতম সরকারি ভাষা, সেখানে এই পরিবর্তন করা হয়নি। এ কারণে পয়লা বসন্তের মতো দিনটি যেখানে প্রতি বছর ১৩ ফেব্রুয়ারিতে পালন করা হতো, ২০২০ সাল থেকে দিনটি চলে গেল ১৪ ফেব্রুয়ারিতে।

বাংলাদেশে নতুন বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী এখন থেকে বাংলা বছরের প্রথম ছয় মাস ৩১ দিনে হবে। এর আগে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র—বছরের প্রথম এই পাঁচ মাস ৩১ দিন গণনা করা হতো। এখন ফাল্গুন মাস ছাড়া অন্য পাঁচ মাস ৩০ দিনে হবে। ফাল্গুন মাস হবে ২৯ দিনের, কেবল লিপইয়ারের বছর ফাল্গুন ৩০ দিনের মাস হবে।

বাংলা একাডেমির পরিচালক মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চের মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দিবসসমূহ বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী যে দিনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেই দিনে পালন করা হবে।

যেমন ২১ ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ঘটনা ঘটেছিল বাংলা আটই ফাল্গুনে। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই ২১ ফেব্রুয়ারি গিয়ে পড়ে নয়ই ফাল্গুনে, যা নিয়ে বিভিন্ন সময় লেখক, কবি, সাহিত্যিকসহ অনেকে আপত্তি জানিয়েছিলেন।

মোবারক হোসেন আরো বলেন, একইভাবে বাংলাদেশের বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালের ওই দিনটি ছিল পয়লা পৌষ, কিন্তু বাংলা পঞ্জিকায় দিনটি পড়ত ২ পৌষ। আবার রবীন্দ্রজয়ন্তী ও নজরুলজয়ন্তী এবং তাদের মৃত্যুদিনও বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী যে দিনে হয়েছিল, তার সঙ্গে গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির দিন মেলে না। কিন্তু নতুন নিয়মে দুই বর্ষপঞ্জির মধ্যে দিন গণনার সমন্বয় করা হয়েছে।

বাংলা একাডেমির গবেষণা, সংকলন এবং অভিধান ও বিশ্বকোষ বিভাগের পরিচালক মোবারক হোসেন বলেন, এই পরিবর্তন মূলত চলতি ১৪২৬ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন থেকে চালু হয়েছে। আগের নিয়ম অনুযায়ী যেহেতু প্রথম পাঁচ মাস ৩১ দিনেই হয়ে থাকে, সে কারণে আশ্বিন মাস পর্যন্ত পরিবর্তন টের পাওয়া যায়নি। নতুন ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গত মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো ৩১ দিনের আশ্বিন মাস পালন করা হয়েছে।

কবে সংস্কার শুরু?

বাংলাদেশে এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বর্ষপঞ্জি সংস্কার করা হলো। এই পরিবর্তনের জন্য ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি সংস্থাটির তৎকালীন মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। সেই কমিটিতে ড. অজয় রায়, জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ সদস্য ছিলেন। বর্তমানে ওই কমিটির সদস্য শামসুজ্জামান খান বলেন, বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কারের কাজ প্রথম শুরু হয়েছিল ভারতে ১৯৫২ সালে। বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা, যিনি বাংলাদেশেরই সন্তান, তাকে প্রধান করে ভারতের সরকার একটি পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি করেছিল।

‘তার আগে কেবল চান্দ্র হিসাব ধরে বাংলা বর্ষপঞ্জি করা হতো, যার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছিল না। মেঘনাদ সাহার ওই কমিটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের আলোকে বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কারের সুপারিশ করেন এবং তা গৃহীত হয়। পরে ১৯৫৬ সালে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বর্ষপঞ্জি সংস্কারের কিছু সুপারিশ সরকারের কাছে করেন। নতুন বর্ষপঞ্জি তারই আলোকে করা হয়েছে।

বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জিও অনেক বার পরিবর্তন হয়েছে, অনেক বছর ধরে সংস্কার হয়েছে। ইটালিতে পোপের করা গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির সংস্কার ক্যাথলিক প্রটেস্টান্ট দ্বন্দ্বের কারণে ইংল্যান্ড গ্রহণ করেছিল ৭৫ বছর পর। এমনকি হিজরি সনেরও নানা সময়ে সংস্কার করা হয়েছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
বর্ষপঞ্জি,পহেলা ফাল্গুন,বাংলা একাডেমি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close