নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

খালে পড়ে শিশুমৃত্যু বাড়ছে রাজধানীতে

ময়লা-আবর্জনায় ভরা খালের পাড়ে নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস

রাজধানীর মরা খালে পড়ে প্রায়ই ঘটছে শিশুমৃত্যুর ঘটনা। গত পাঁচ বছরে এমন ঘটনা অন্তত ২০টি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ময়লা-আবর্জনায় ভরে যাওয়া খালের পাড়ে গড়ে উঠছে নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস। আর সেখানে খেলতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে শিশুরা।

রাজধানীর খিলগাঁও বাসাবোর মাণ্ডা খাল দেখতে অনেকটা ডোবার মতো। কয়েক দশক আগেও এই খালে মাছ ধরতেন স্থানীয়রা। গোসলও করতেন অনেকে। কিন্তু খাল ভরাট করে অবৈধভাবে দোকানপাট, বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছেন প্রভাবশালীরা। আবর্জনায় ভরে গিয়ে এখন বদ্ধ জলাশয় এটি। ১০ থেকে ১৫ বছর আগেও খালটির প্রস্থ ছিল অন্তত ৫০ ফুট। এখন টিকে আছে ১৫ ফুটের নালা হয়ে। কোথাও তা আরো কমে ৫ থেকে ৭ ফুটের বেশি হবে না।

একই চিত্র রাজধানীর রায়েরবাজার-মোহাম্মদপুর এলাকার রামচন্দ্রপুর খাল। ময়লা-আবর্জনার গন্ধে এলাকাবাসীর নাভিশ্বাস। স্থানীয় লোকজনের অসচেতনতা আর ওয়াসার নিষ্ক্রিয়তায় খালটির পানি চলে থেমে থেমে, কোথাও পানি আটকে যায় মাটি আর আবর্জনার ভাগাড়ে। গত ৫ বছরে অন্তত ১০টি শিশু এই খালে পড়েছে। ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনাও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দখল দূষণে শীর্ণ রাজধানীর খালগুলো দিন দিন অরক্ষিত হয়ে পড়ছে। ড্রেনের মতো বয়ে চলা এসব খাল একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ করছে, আবার এর ভেতরে পড়ে প্রাণহানির ঘটনাও কম ঘটছে না।

অনেক হাঁকডাক করা হলেও রাজধানীর খালগুলো উদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। আবার এটি রক্ষণাবেক্ষণের কোনো প্রচেষ্টাও চোখে পড়ে না। ঢাকার দূষিত বর্জ্য এই খালগুলো দিয়ে প্রবাহিত হয়। অথচ চারদিকে নদীবেষ্টিত ঢাকার একসময়ের ঐতিহ্য ছিল এই খালগুলো। ভরাট বন্ধ এবং দখল হয়ে যাওয়ায় ইতিহাসের স্মৃতি-বিস্মৃতির অতল গভীরে চলে গেছে খালগুলো।

সম্প্রতি এই খালের মধ্যে ডুবে শিশুমৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। দখল হয়ে যাওয়া খালগুলোর পাশে বেশির ভাগ নিম্ন আয়ের মানুষের বসতি তৈরি করা হয়েছে। এ কারণে বেখেয়ালে শিশুরা যখন খালের মধ্যে ডুবে যায়, তখন উদ্ধার করাও কষ্টকর হয়ে পড়ে। পাশাপাশি দূষিত বর্জ্যরে কারণে পরিবেশের বিপর্যয় সৃষ্টি করছে খালগুলো। সরকারের বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়হীনতার কারণে রক্ষণাবেক্ষণসহ হারিয়ে যাওয়া খালগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না।

তারা বলেন, রাজধানীর পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য অর্থনৈতিক কর্মকা-ের স্বার্থে নদীর মতো খালগুলো বাঁচানোর সময় এসেছে এখন। খাল রক্ষা এবং উদ্ধার করা না গেলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে ঢাকায় পরিবেশের বিপর্যয় ঘটতে পারে।

পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং পরিবেশবিদ প্রকৌশলী আবদুস সোবহান বলেন, রাজধানীর খাল উদ্ধার করা না গেলে আগামীতে আরো বিপর্যয় ঘটবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং অর্থনীতির স্বার্থেই ঢাকার খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণ এবং উদ্ধার করা খুবই জরুরি। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন ঝুঁকি মোকাবিলায় খাল উদ্ধার করতে হবে। আগে বর্ষায় প্রায় প্রতিদিন বৃষ্টিপাত হতো। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তিন দিনের বৃষ্টি হয় তিন ঘণ্টায়। খাল না থাকলে এত কম সময়ে এই অধিক বৃষ্টির পানি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। এ কারণে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার পরিমাণ বেড়েই চলেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একসময় নদীর মতোই রাজধানীর ভেতর দিয়ে খালগুলো প্রবাহিত হতো। একটি খালের সঙ্গে অন্য খালের সংযোগ থাকায় কোথাও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতা দেখা যায়নি। কিন্তু এখন রাজধানীর ভেতরে আর খাল খুঁজে পাওয়া যায় না। যেগুলো আছে তা ড্রেনের মতো চলছে বর্জ্য-আবর্জনায় পরিপূর্ণ। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতা হিসাব বিবেচনায় এগুলো আর খাল বলা যায় না। বর্জ্যে ভরে থাকার কারণে এসব খাল দিয়ে পানি আর প্রবাহিত হতে পারে না।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
খালে পড়ে মৃত্যু,শিশুমৃত্যু,ময়লা-আবর্জনা,রাজধানীর খাল
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close