নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯

জানা যাবে ১১০০০ নাম

আজ রাজাকারের তালিকা প্রকাশ

মুক্তিযুদ্ধের ৪৯ বছর পর প্রথমবার প্রকাশ হচ্ছে রাজাকারের তালিকা। প্রথম ধাপের এই তালিকায় রয়েছে ১১ হাজার রাজাকারের নাম। যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা ও ধর্ষণ-লুটপাটের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত। রোববার এ তালিকা প্রকাশ করবে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। আজ দুপুরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রায় ১১ হাজার রাজাকারের নাম ও পরিচয় প্রকাশ করা হবে। পর্যায়ক্রমে অন্য ঘাতক বাহিনীর সদস্যদের তালিকাও প্রকাশ করা হবে।

একাত্তরে স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের চাওয়া যখন সারা বাংলার মানুষের। তখন নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে গুলি ও নির্যাতন শুরু করে পাকিস্তানি বাহিনী। তাদের মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে রাজাকার, শান্তি কমিটি, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরা। এসব বাহিনীর সদস্যরা সাধারণ বাঙালি ও মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয়। চালায় নৃশংস গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে এরই মধ্যে রাজাকারদের শীর্ষ নেতা গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, কাদের মোল্লা ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা হয়েছে। কিন্তু রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর আরো অনেকের নাম বর্তমান প্রজন্মের অজানা।

এবার তাদের তালিকা প্রকাশ করতে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়। একাত্তরের রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে যারা ভাতা নিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় তাদের তথ্য সংগ্রহ করেছে। প্রথম ধাপে প্রকাশ হচ্ছে সেরকম ১১ হাজারের নাম। এরপর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নথিভুক্ত রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ হবে।

তালিকা প্রকাশের পর শুরু হবে এই রাজাকারদের বিচার। তবে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মামলা করতে হবে ভুক্তভোগী কোনো পরিবারকে। স্বাধীনতা বিরোধিতাকারী রাজাকারদের নাম, পরিচয় ও ভূমিকা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানানো এবং বিচারের মুখোমুখি করাই উদ্দেশ্য বলে জানান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী রাজাকারদের নাম, পরিচয় ও ভূমিকা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানানোর জন্যই তালিকা প্রকাশ করা হবে। আশা করছি, ১১ থেকে ১২ হাজার রাজাকারের নাম ও তথ্যাদি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা যাবে। পর্যায়ক্রমে অন্য রাজাকারদের নামও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

অবরুদ্ধ বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াইরত মুক্তিবাহিনীকে প্রতিরোধ করতে একাত্তরের মে মাসে খুলনার খানজাহান আলী রোডে জামায়াতে ইসলামী পূর্ব পাকিস্তান শাখার সহকারী আমির মাওলানা এ কে এম ইউসুফের নেতৃত্বে ৯৬ জনকে নিয়ে প্রথম রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়। এদের একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ছিল। তখন রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে তারা ভাতা পেত। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর নিজামী-মুজাহিদরা সেই তালিকা সরিয়ে ফেলে। তবে সব সরাতে পারেনি। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে তালিকা তৈরি করেছে। তিনি বলেন, তালিকাটি প্রতিটি জেলায় জেলায় পাঠানো হবে। প্রতিটি জেলার একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাজাকারদের নাম, পরিচয় এবং একাত্তরে তার কুকর্ম উল্লেখ থাকবে; যেন নতুন প্রজন্ম তাদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করতে পারে।

রাজাকারের তথ্য সংগ্রহের উৎস প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, একাত্তরের রাজাকার বাহিনীর সদস্য হিসেবে যারা ভাতা নিয়েছেন বা যাদের নামে অস্ত্র এসেছে, তাদের নাম-পরিচয়, ভূমিকাসহ তথ্যাদি স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ছিল। সেগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সংগ্রহ করা হয়েছে। এটি নতুন কোনো তালিকা নয়।

রাজাকার বাহিনীর তালিকা প্রকাশকে স্বাগত জানান ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, রাজাকারসহ ঘাতক বাহিনীর তালিকা প্রণয়ন ও প্রকাশের জন্য ১৯৮৫ সাল থেকে দাবি জানিয়ে আসছি। দেরিতে হলেও সেই দাবি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এটি অত্যন্ত ইতিবাচক। তবে এখানে থেমে থাকলে হবে না। এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।

ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ডা. এম এ হাসান বলেন, রাজাকারদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ তাদেরই ছিল। তারা অনেক আগেই এই তালিকা তৈরি করেন। সরকার নতুন করে তালিকাটি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে, এটি প্রশংসাযোগ্য। তার মতে, পিস কমিটির সদস্যসহ আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যদের তালিকাও প্রকাশ করা উচিত।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মানবতাবিরোধী অপরাধ,মুক্তিযুদ্ধ,রাজাকার
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close