গাজী শাহনেওয়াজ

  ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯

রোহিঙ্গা ভোটার ইস্যুতে ইসির মাঠ কর্মকর্তাদের হয়রানি

চট্টগ্রামসহ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় দায়িত্বরত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা অযথা হয়রানির মধ্যে রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোহিঙ্গাদের ভোটার করা ইস্যুতে কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন মিথ্যা অভিযোগ এনে অযথা হয়রানি শুরু করেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এমনকি এ ঘটনায় আটকদের মুখ থেকে জোরপূর্বক কর্মকর্তাদের নাম বলাতে নানা কৌশল নিয়েছেন তদন্ত কাজে সম্পৃক্তরা। এতে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় বর্তমান কর্মরতদের পাশাপাশি ওই সময়ে যারা কর্মরত (বর্তমানে অন্য কর্মস্থলে কর্মরত) ছিলেন তাদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক।

এই পরিস্থিতিতে নিজেদের এবং ইসির সুনাম রক্ষায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) খান মো নুরুল হুদা ও সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর এবং বাংলাদেশ ইলেকশন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের দ্বারস্থ হয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এ বিষয়ে গত শনিবার নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির ২য় সভা হয়। সেখানে হয়রানির মধ্যে থাকা কর্মকর্তারা তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের মিথ্যা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে তা তুলে ধরেন। অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা তাদের বক্তব্য শোনেন এবং তাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন।

অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ইটিআইয়ের মহাপরিচালক মো. নুরুজ্জামান তালুকদার তাদের আশস্ত করে বলেন, শিগগিরই প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সব নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর স্যারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি অবহিত করা হবে।

এদিকে, রোহিঙ্গাদের ভোটার করা সংক্রান্ত তদন্তে সচিবালয় থেকে গঠিত ৩টি কমিটির কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত ইসি কর্মকর্তাদের কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে অযথা হয়রানি না করতে কর্তৃপক্ষের অনুশাসন চান তারা। এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন। তবে কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তদন্তে উঠে এলে তাকে অ্যাসোসিয়েশন থেকে কোনো ধরনের সহায়তা না করার বিষয়ে সর্তক করা হয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কমিশনের কর্মকর্তাদের সহায়তা নিয়ে—এমন কোনো অভিযোগ ইসির পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি। বরং এ কাজে ইসির কোনো কর্মকর্তা নয়; কর্মচারী ও খন্ডকালীন অফিস সহায়কদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। সেদিক থেকে ইসির কর্মকর্তাদের দিক থেকে অসহযোগিতা নয়, তাদের সহায়তায় ফাঁদ পেতে রোহিঙ্গাদের ভোটার করার সংঘবদ্ধ চক্রকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করতে পেড়েছ ইসি। এরই মধ্যে দুজন নিম্নপদে কর্মরত দুজন এ অপরাধে গ্রেফতার হয়ে জেলে আটক আছেন।

এ প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশনে মহাসচিব ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা ভোটার অন্তর্ভুক্ত সংক্রান্ত অভিযোগ রয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টায় দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য ইসির নির্দেশনায় মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু মামলাটি দায়ের হওয়ার পর কর্মকর্তাদের জড়িয়ে দু-একটি গণমাধ্যম সংবাদ ছাপছে। যদিও কর্মকর্তাদের কোনো সংশ্লেষ এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাই সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্য-প্রমাণ ছাড়া কোনো সংস্থার ফরমায়েশি কথায় গণমাধ্যমকে সংবাদ না ছাপতে অনুরোধ জানিয়েছেন ইসির এই চৌকষ কর্মকর্তা।

চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রামে জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সংস্থা থেকে তদন্তের নামে পূর্ব অনুমোদন ব্যতিত এবং অবহিত না করেই কর্মকর্তাদের অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন করছেন। এমনকি কর্মকর্তাদের পরিবারসহ বিভিন্ন বিষয়ে জবানবন্দি চাচ্ছে। যার ফলে কর্মকর্তারা মানসিক চাপ অনুভব করছেন। এতে কাজে কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।

পাবনার জেলা নির্বাচন অফিসার বলেন, বর্তমানে গ্রেফতার হওয়া কর্মচারী ও অপারেটরকে মিথ্যা তথ্য প্রদানে নানাবিধ চাপ প্রয়োগ করে মামলার কার্যক্রমকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার অপচেষ্টা চলছে। বিভিন্ন নিরপরাধ কর্মকর্তাদের নাম জড়িয়ে সাংবিধানিক সংস্থা ইসির সুনাম ক্ষুণ্নেরও চেষ্টা করা হচ্ছে, যোগ করেন ওই কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের ভোটার করার অভিযোগে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে দায়িত্ব পালনকালে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মোস্তফা ফারুককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। অফিস সহায়ক জয়নাল আবেদীনের বান্দরবনের থানচিতে বদলি করা হয়। বর্তমানে দুজন জেলে রয়েছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
হয়রানি,রোহিঙ্গা,ভোটার,ইসি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close