গাজী শাহনেওয়াজ

  ০৩ নভেম্বর, ২০১৯

রাষ্ট্রীয় পরিচয়পত্র পাবে শিক্ষার্থীরা

স্কুলের শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রাষ্ট্রীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অংশ হিসেবে এ তথ্য সংগ্রহের দিকে এগোচ্ছে ইসি। কোন বয়স থেকে ছাত্রছাত্রীদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে, এ বিষয়ে একটা খসড়া তৈরি করেছে ইসি।

ওই খসড়ায় ১০ বছরের বেশি বয়সিদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে, সে বিষয়ে ইসির কমিশনের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা আছে। এর আগে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগে—এ ব্যাপারে একটা সভা হয়। ওই সভাতে ১০ বছরের বেশি বয়সিদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্টরা আরো বলছেন, নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে, কাজটি চলতি মাস অর্থাৎ নভেম্বর থেকে শুরু করার ব্যাপারে। ইসির সারা দেশে ১০টি আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস রয়েছে। ওইসব অফিস অঞ্চলের একটি শহরকেন্দ্রিক স্কুল ও অন্যটি মফস্বলের স্কুলকে বেছে নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে তথ্য সংগ্রহ শুরু হবে। এই তথ্য সংগ্রহের সফলতার ওপরে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে কমিশন।

সূত্র বলছে, এর আগে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন সাংবিধানিক এ সংস্থার সংশ্লিষ্টরা। কারণ এই পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগের তথ্য আগেই নেওয়া আছে। সেখানের সংরক্ষিত তথ্য ভান্ডার ইসির এই প্রক্রিয়ার কাজের ক্ষেত্রের পরিধি কমাতে কিছুটা সহায়ক হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহের পর কার্যক্রম গ্রহলে যন্ত্রপাতি কেনার উদ্যোগ নেবে ইসি।

ইসির যুগ্ম সচিব এবং নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন) মো. আবদুল বাতেন বলেন, স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের আমরা তথ্য সংগ্রহ করার বিষয়ে একটা উদ্যোগ শুরু করেছি। লক্ষ্য একটাই—বাংলাদেশি পরিচয়ে সব নাগরিকের একটি নির্ভুল তথ্যসংবলিত পরিচয়পত্র দেওয়া। এটা ১০ বছর বয়সিদের দেওয়া সম্ভব হলে তাদের স্কুলে ভর্তি থেকে শুরু করে দৈনন্দিন অনেক কাজ করা সহজ হয়ে যাবে। নিজ পরিচয়ে প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারবে; যার জন্য অভিভাবকদের উপস্থিত হওয়ার দরকার পড়বে না। আর প্রয়োজনীয় তথ্য পেলে ১২বয়সের বেশি নাগরিকদের নিবন্ধন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, এসব শিক্ষার্থীরা ১৮ বছর হলেই তাদের নতুন করে ভোটার হওয়া লাগবে না; ওই পরিচয়েই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। দক্ষতার সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের কার্যক্রম পরিচালনা করা কমিশনের চৌকস এই কর্মকর্তা আরো বলেন, অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক চাকরির সুবাধে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত থাকতে হয়। অনেকে কর্মরত আছেন বিদেশে। স্কুল শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র দেওয়া সম্ভব হলে মা-বাবার অনুপস্থিতিতে দ্রুত প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করতে পারবে। তাই এই উদ্যোগটি বাস্তবায়ন হলে ইতিবাচক ফল পাবে দেশের শিক্ষার্থীরা, যোগ করেন এনআইডি উইংয়ের পরিচালক অপারেশন।

এনআইডির কর্মকর্তারা জানান, কমিশনের সিদ্ধান্ত রয়েছে সব নাগরিককে ভোটার জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার। এরই মধ্যে ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সিদের আগাম তথ্য সংগ্রহ করেছে ইসি। ধাপে ধাপে এ কাজটি করার চিন্তা থাকলেও সুদূরপ্রসারী চিন্তার কথা ভেবে হঠাৎ মাঝ বয়সিদের বদলে ১০ বছর বা তার বেশি বয়সিদের তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে কমিশন। কারণ এই বয়সিদের মধ্যে বেশির ভাগ প্রাথমিক পর্যায়ে থেকে নিম্নমাধ্যমিকে ভর্তি হয়। এ বয়সে শিশুদের ঝড়ে পড়ার হারও কমেছে।

কারণ স্কুল পর্যায়ে সরকার ভাতাসহ নানা ধরনের সুবিধা চালু করাই শিক্ষার্থীরা স্কুলমুখী এখন। তাই পিএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে সব শিশুর নিজ নাম, বয়স ও মা-বাবার নাম নিবন্ধন করতে হয়। এ তথ্যটি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের কাছে সংরক্ষিত থাকে। একইভাবে পিএসসি পাস করার পর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় পাস করা শিক্ষার্থীরা। সেখানে জেএসসি অর্থাৎ নিম্নমাধ্যমিকের তথ্য থাকে। দুটি তথ্য একত্রিত করে কারা পাস করেছে কিংবা ফেল করে তার একটি ডেটা ওই দফতর থেকে ইসি সংগ্রহ করে নিতে পারবে। এতে ইসির কাজের পরিধি অনেকটা কমে আসবে।

এসব শিক্ষার্থীর বাইরে কারা রয়েছে তথ্য সংগ্রহে বের হলে সহজে পেয়ে যাবে ইসি। এভাবে পর্যায়ক্রমে সব নাগরিকের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে ইসির তথ্য-ভান্ডারে। তখন রোহিঙ্গা এবং বাঙালি নয় এমন নাগরিকরা বাংলাদেশি পরিচয়ে বিদেশে কিংবা দেশে অপরাধ করলে চিহ্নিত করা সহজ হবে বলে মনে করছেন ইসি সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, ভোটার তালিকা হালনাগাদের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ১মার্চ প্রকাশের কথা চিন্তা করছে কমিশন। কারণ নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এ সময়ের মধ্যে বেশিরভাগ নির্বাচন সম্পন্ন হয়। যুগ যুগ ধরে ভোটার তালিকা জানুয়ারি প্রকাশ, দাবি-আপত্তি ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের কারণে নির্বাচন করাতে জটিলতা তৈরি হয়। এমনকি ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন জানুয়ারিতে করার চিন্তা থেকেও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা পহেলা মার্চ প্রকাশের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত বিষয়ে সভা করে সুষ্ঠু সমাধানে পৌছতে চায় ইসি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
রাষ্ট্রীয় পরিচয়পত্র,শিক্ষার্থী,নির্বাচন কমিশন,ইসি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close