বদরুল আলম মজুমদার

  ০২ নভেম্বর, ২০১৯

প্রথম দিনে প্রয়োগ হয়নি নতুন সড়ক আইন

এক বছর আগে নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রণীত হলেও পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বাধার মুখে তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। অবশেষে গতকাল শুক্রবার থেকে কার্যকর হলো ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’। গতকাল আইন প্রয়োগের প্রথম দিনে কোথাও এই আইনে সাজা দেওয়ার কথাও জানা যায়নি। তবে নতুন আইন কার্যকর হলেও পুরাতন আইনেই জরিমানা বা মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রাফিক সূত্র।

জানা গেছে, আইনটি সম্পর্কে খোদ প্রয়োগকারী সংস্থা, জনসাধারণ ও পরিবহন চালক-হেলপার কিংবা পথচারীর পর্যাপ্ত ধারণা নেই। আইন নিয়ে পর্যাপ্ত প্রচার-প্রচারণাও হয়নি। তাই পর্যায়ক্রমে সহনীয় মাত্রায় আইনটি প্রয়োগ করা হবে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ বলছে, নতুন সড়ক পরিবহন আইন গতকাল থেকে কার্যকর হলেও প্রয়োগ হবে পুরাতন আইনই। পর্যায়ক্রমে সহনীয় মাত্রায় নতুন আইনটি প্রয়োগ শুরু হবে। তার আগে প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের আইনটি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা ও বিশেষ করে যাদের জন্য আইন অর্থাৎ পথচারী, চালক ও হেলপারদের মোটিভেশন করা হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক দেশের তুলনায় আইনটি বেশ কঠিন। তাই এটি প্রয়োগের আগে উচিত ছিল সড়ক ও পরিবহন অবকাঠামো ঢেলে সাজানো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ অক্টোবর আইনটি কার্যকরের তারিখ ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে সরকার। নতুন আইনে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত রাজধানীর শেরেবাংলানগর, বিজয় সরণি, তেজগাঁও এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পথচারীরা ফুটপাত ও সড়কে হাঁটছেন, সড়কে যানবাহন চলাচল করছে আগের মতোই। যদিও ছুটির দিন হওয়ায় সড়কে যানবাহনের চাপ কম। মাঠ পর্যায়ের ট্রাফিক কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন আইন আজ থেকে কার্যকর হলেও প্রয়োগ করা হচ্ছে না। প্রয়োগ হচ্ছে পুরাতন আইন।

বিজয় সরণি এলাকার দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট মো. শফিউল্লাহ এই প্রতিবেদককে বলেন, নতুন আইনটি প্রয়োগের আগে এ সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছি, আইনের কোন ধারায় কোন অপরাধে কী শাস্তি বা জরিমানা হতে পারে। অর্থাৎ মোটিভেশনাল কার্যক্রম চালাচ্ছি। যাতে আইনটি সম্পর্কে কারো নেতিবাচক কিংবা জানতেন না এমন অজুহাত তৈরি না হয়। অচিরেই আইনটির প্রয়োগ শুরু করা হবে। তবে নতুন আইন একেবারে চাপিয়ে দেওয়া হবে না। পর্যায়ক্রমে আইনটি সহনীয় মাত্রায় প্রয়োগ হবে। আপাতত কাজ চলবে পুরোনো আইনে। আইনটি যুগোপযোগী কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনটি অবশ্যই যুগোপযোগী। আইনটি বাস্তবায়ন হলে অবশ্যই সড়কে আগের তুলনায় গতি বাড়বে, শৃঙ্খলা ফিরবে।

বিজয় সরণি এলাকায় কথা হয় এক মোটরসাইকেল চালকের সঙ্গে। তিনি বলেন, নতুন আইনটি খুব ভালো শুনেছি। আইনটি প্রয়োগ হলে জীবনের নিরাপত্তা বাড়বে, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে। তবে কিছুক্ষেত্রে আইনটি বেশি কঠোর উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো কারণে আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও যদি কাছে না থাকার কারণে জেল বা জরিমানা গুনতে হয় তাহলে তা হবে দুঃখজনক। এক্ষেত্রে ডিজিটালাইজড করা কিংবা কনসিডারের বিকল্প পন্থা থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

অ্যাপসভিত্তিক মোটরসাইকেল চালান মেহেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এ আইন প্রয়োগ হলে কোনো চালক আর গাড়ি চালাতে চাইবে না। কারণ একজন পথচারী যদি তার নিজের দোষে যানবাহনের নিচে পড়ে যান, হঠাৎ দৌড় দেওয়ার ফলে দুর্ঘটনার শিকার হন তাহলে এর দায় তো ওই পরিবহন চালকের হতে পারে না। এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই সংশোধনী জরুরি। তাছাড়া যারা গরিব চালক বা হেলপার তাদের ক্ষেত্রে তো জরিমানা কিংবা জেল উভয়টাই বেশি। পথচারীদের জন্য এ আইনটা বেশি প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। তবে অপরাধী হলে আইন প্রয়োগে কোনো সমস্যা নেই বলে মনে করেন তিনি।

মাসুম নামে এক কাভার্ডভ্যান চালক নতুন আইন সম্পর্কে বলেন, এ ব্যাপারে তার কোনো ধারণা নেই। তিনি বলেন, আমি ৩০ বছর ধরে ড্রাইভিং করি। মূর্খ মানুষ, আইন-কানুন সম্পর্কে ধারণা কম, আইন যা-ই হোক, আমাদের জন্য ভালো হলে সমস্যা নেই।

পাঠাও চালক সুমন খান বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা, হেলমেট না থাকার সুযোগ তো পুলিশ নিতেই পারে। তাছাড়া পুলিশ যখন তখন বিনা ওয়ারেন্টে অ্যারেস্ট করার কথা শুনছি। তাহলে তো আইনটা বেশি কঠোর। নতুন আইন করবেন কিন্তু নতুন সড়ক করবেন না, সড়ক কিংবা পারিপার্শ্বিক সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ ও নতুনত্ব আনতে হবে। তাহলেই এ আইনটি সফল হতে পারে নতুবা এমন আইন আমাদের জন্য নয়।

এদিকে মোটরযান মালিক, শ্রমিক, পথচারীসহ সব অংশীজনকে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ এর একাদশ অধ্যায়ে বর্ণিত অপরাধ, বিচার ও দন্ডের বিষয়গুলো জেনে তা মেনে চলার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে বিআরটিএ। নতুন আইন কার্যকর হলেও যথাযথ প্রয়োগ হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে বিআরটিএ’র পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মো. মাহবুব-ই-রববানী বলেন, নতুন এ আইন একেবারে চাপিয়ে দেওয়া হবে না। কারণ আগের আইনের সঙ্গে নতুন আইনের অনেক পার্থক্য রয়েছে। হঠাৎ করে নতুন আইন চাপিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি করা যাবে না, যাতে গাড়ি-ঘোড়া চলাচল বন্ধ হয়ে জনভোগান্তি তৈরি হয়। তবে পর্যায়ক্রমে সহনীয় মাত্রায় প্রয়োগ করা হবে। আপাতত কাজ চলবে পুরোনো আইনে।

‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’ সংগঠনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, নতুন এ আইনের বিষয়গুলো প্রচার ছাড়া বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। প্রচার করতে হবে। ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। তবেই সফলতা আসবে।

বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, আইনের বিধিগুলো কী, নতুন আইনে জরিমানা কী ধরনের, কী ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে সেগুলো সম্পর্কে আগে ধারণা রাখতে হবে। তাছাড়া কমন স্পেসগুলো খুঁজে বের করা, কোথায় কোথায় বেশি ভুলত্রুটি চালক ও পথচারীরা করেন তা খুঁজে বের করতে হবে। কোন আইনটা বেশি প্রয়োগ হতে পারে তা শনাক্ত করে সরকারের স্টেকহোল্ডারদের শেয়ার করা উচিত।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নিরাপদ সড়ক,সড়ক আইন,নিরাপদ সড়ক আন্দোলন,সড়ক পরিবহন আইন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close