নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ অক্টোবর, ২০১৯

সেমিনারে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে আলাদা বিভাগ হচ্ছে

দেশে মশাবাহিত রোগের সংক্রামক বেশি। মানুষ ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া এবং ম্যালেরিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মশার কারণে। এডিশ মশা নিয়ন্ত্রণে আসলেও সামনে আসছে কিউলেক্স মশা- বললেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

তিনি আরও বলেন, এসব মশা নিয়ন্ত্রণে এবং স্বাস্থ্যগত সমসাময়িক সমস্যাগুলোর সমাধানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আলাদা একটি বিভাগ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে একজন অতিরিক্ত সচিবকে দায়িত্ব দিয়ে এই বিভাগের কাজ কি হবে সেগুলোর খসড়ার কাজ চলছে।

শনিবার রাজধানীর বিআইআইএসএস অডিটরিয়ামে সেন্টার ফর গভার্নেস স্টাডি (সিজিএস) আয়োজিত ‘ভেক্টর প্রবলেম ইন বাংলাদেশ: এন ইনটেগরেটেড ম্যানেজমেন্ট এপ্রোস’ সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভাগ করার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, মশাবাহিত রোগগুলি শুধু শহরে নয়, গ্রামেও হয়। আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গ্রাম পর্যায়ে সমস্যা সমাধানে পৌঁছাতে পারে না। একমাত্র স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় শহর, নগর, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে কাজ করে থাকে। সেজন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, মশাবাহিত রোগের সমস্যা সমাধানে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। সচেতনতা বাড়াতে হলে পাঠ্যবইয়ে এই বিষয়গুলি অর্ন্তভূক্ত করতে হবে। আমাদের গরুর রচনা পড়ালে চলবে না। সড়কে চলাচল ও মশাবাহিত রোগসহ জনসচেতনতা মূলক নানা বিষয় জাতীয় শিক্ষা বোর্ডের সিলেবাসে অর্ন্তভূক্ত করতে হবে। তাহলে শিশুরা ছোট থেকে বিষয়গুলি সম্পর্কে সচেতন হবে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, আমাদের আয় বেড়েছে। আর সে অনুযায়ী মানুষ খরচ করছে বেশি। তাই আমাদের ওয়েস্টও বেড়েছে। এসব ওয়েস্ট (বর্জ্য) কাজে লাগাতে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাচ্ছি। তাই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন একটি প্রস্তবনা দিয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ চলছে।

সবাইকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার আহবানও জানান তিনি।

সিজিএস এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এন্টোমলজিস্ট ও সিজিএস এর ভাইস চেয়ারম্যান ডা. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হোসেন।

সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ডা. কামরুল হাসান খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদিয়া আহমদ, অধ্যাপক ড. কবীরুল বাশার ও সহযোগী অধ্যাপক ড. তাহমিনা আক্তার লিপি, জোলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক খান হাবিবুর রহমান খান, আইসিডিডিআরবি বিজ্ঞানী সাইফুল আলম সুজন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কনসালটেন্ট খন্দকার নুরই জান্নাত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমটলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মিনহাজ রহমান চৌধুরী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জি এম সাইফুর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শরীফ আহমেদ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মমিনুর রহমান মমিনসহ বিশেষজ্ঞরা।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হোসেন বলেন, মশাবাহিত রোগের সমস্যা সমাধানে একটি সমন্বিত প্রতিষ্ঠান করতে হবে। যে প্রতিষ্ঠানে সমস্যাগুলি নিয়ে গবেষণা করা হবে। গবেষণার মাধ্যমে সমস্যাগুলির সমাধান বের করা হবে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের নিজেদের করতে হবে। আমরা যদি আগে থেকে সচেতন হতাম, বাসা-বাড়ি পরিষ্কার রাখতাম তাহলে ডেঙ্গুর এ প্রকোপ দেখা দিতনা। সুতারাং আমরা নিজেরা পরিষ্কার থাকি এবং বাসা-বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার রাখি।

সাবেক উপাচার্য ডা. কামরুল ইসলাম বলেন, মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেওয়ার কারণ হচ্ছে, আমরা কেউই আগে থেকে সচেতন ছিলাম না, আমাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল, মশার ওষুধ ছিটানো হয়নি, ভেজাল ওষুধ ছিল ও ডেঙ্গু নিয়ে সংস্থাগুলি এক এক রকম তথ্য দিয়েছে। সমাধানের পথ হিসেবে তিনি বলেন, বাসা-বাড়ির আঙিনা সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে, পলিসি মেকিংয়ে আরো জোরালো প্রদক্ষেপ নিতে হবে এবং এসব বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের আরো ভূমিকা নিতে হবে।

অধ্যাপক ড. কবীরুল বাশার বলেন, ভবিষ্যতে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা শহরের মতো গ্রামেও বাড়বে। এরজন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এখনই উদ্যেগ নিতে হবে। এছাড়া জিকা ভাইরাসের জন্য সরকারকে আরো সচেতন হতে হবে।

পিডিএসও/রি.মা

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
স্থানীয় সরকার মন্ত্রী,তাজুল ইসলাম,মশাবাহিত রোগ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close