হাসান ইমন

  ১০ অক্টোবর, ২০১৯

পদ্মা যশলদিয়া থেকে প্রতিদিন আসবে ৪৫ কোটি লিটার পানি

ভূগর্ভের পানির ওপর চাপ কমাতে ভূ-উপরিস্থ উৎস হতে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই পানি সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য পদ্মা যশলদিয়া পানি শোধানাগার (ফেজ-১) প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ঢাকা ওয়াসা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকাল ১০টায় সোনারগাঁও হোটেল থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।

রাজধানীতে এখন প্রায় ২ কোটি মানুষের বসবাস। তাদের পানির চাহিদা রয়েছে দৈনিক ২৩৫ কোটি লিটার। এর মধ্যে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে এখন ৭৮ শতাংশ জোগান দেওয়া হচ্ছে। বাকি ২২ শতাংশ আসছে ভূ-উপরিস্থ পানি শোধন প্রকল্প থেকে। কর্মসংস্থানের আশায় ঢাকায় প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার মানুষ যোগ হওয়ায় পানির চাহিদা বাড়ছে। এতে সুপেয় পানির সংকটও বাড়ছে। ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে পদ্মা পানি শোধনাগার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর প্রকল্পটি সরকারের ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটিতে (সিসিজিপি) পাস হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে ২৯০ মিলিয়ন ডলার (৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা) ব্যয় ধরা হয়েছিল। এ প্রকল্পের আওতায় পদ্মা নদীর পানি সংগ্রহ ও শোধন করতে পদ্মার তীরবর্তী মাওয়া এলাকায় এক কিলোমিটারের মধ্যে পানির পাওয়ার পাম্প বসানো, অশোধিত পানি সংগ্রহ, পানির ট্রিটম্যান্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়। এরপর সংগৃহীত পানি ১৪ কিলোমিটার দূরবর্তী স্থানে নিয়ে এসে কেরানীগঞ্জের আবদুল্লাহপুরে স্থাপিত ‘বোস্টার পাম্প’ স্টেশনে দ্বিতীয় দফায় শোধন করে আবারো ৮ কিলোমিটার দূরে এসে পরিশোধিত পানি মিটফোর্ডের ‘ইনজেকশন পয়েন্ট’ দিয়ে ঢাকায় আসবে; অর্থাৎ পদ্মা থেকে পানি সংগ্রহ করার পর মোট ৩৩ কিলোমিটার দূরত্ব ঘুরে আটটি পয়েন্টে শোধন হওয়ার পর সুপেয় পানি পাবে ঢাকার নগরবাসী। জিটুজি প্রকল্পের আওতায় এ প্রকল্পের সম্পূর্ণ আর্থিক ব্যয় বহন করেছে এক্সিম ব্যাংক অব চায়না। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান (সিএএমসিই) ‘কেমসি’। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ শেষ করে ৩ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পটি ওয়াসার কাছে হস্তান্তর করেছে চীনা ঠিকাদারি ওই প্রতিষ্ঠান। এ প্রকল্প থেকে প্রতিদিন ৪৫০ মিলিয়ন (৪৫ কোটি) লিটার পানি আসবে ঢাকায়।

আরো জানা যায়, পদ্মা-যশলদিয়া প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো রাজধানীর পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা। এসব এলাকার জন্য মিটফোর্ড থেকে বেড়িবাঁধ ধরে হাজারীবাগ, লালবাগ হয়ে শ্যামলী পর্যন্ত বেড়িবাঁধের পাশে ও ভেতরের অলিগলিতে ৪০ কিলোমিটার সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন নির্মাণ করে পানি সরবরাহ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে গাবতলী ও মিরপুর-১ নম্বর সেকশনেও এই পানি নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। এ ছাড়া মিটফোর্ড, লালবাগ, হাজারীবাগ, রায়েরবাজার, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী আগারগাঁওসহ আশপাশের এলাকার মানুষ এ সুযোগ পাবে। সব মিলিয়ে নগরীর প্রায় ৪০ লাখ মানুষের পানির চাহিদা মেটাবে পদ্মা-জশলদিয়া পানি শোধনাগার।

এ প্রসঙ্গে গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকল্প পরিদর্শন করে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, এ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এ প্রকল্প থেকে ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা যাবে। তবে এখন চালু হওয়ার পর এর ৫০ শতাংশ পানি সরবরাহ করা যাবে। কিছু লাইনের কাজ চলমান রয়েছে, এর সব কাজ শেষ হলে পুরোপুরি পানি সরবরাহ করা যাবে।

তিনি আরো বলেন, পানিতে দুর্গন্ধ হবে না। এটা নিরাপদ হিসেবে খেতে পারবেন সবাই। তবে যে বাসায় যাবে তাদের পানি রাখার নিচের ও ওপরের ট্যাঙ্কি কতটা পরিষ্কার তার ওপর নির্ভর করছে তারা সরাসরি খেতে পারবেন কি না। আমাদের দিক থেকে শতভাগ পিওর পানি সরবরাহ করা হবে।

এ প্রকল্প পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, ভূগর্ভের পানির ওপর চাপ কমাতে সরকার পদ্মা যশলদিয়া পানি শোধানাগার প্রকল্পটি গ্রহণ করে। যা চলতি বছরের ৩১ জানুযারিতে কাজ শেষ হয়। কিছু দিন আগে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী প্রকল্পটি পরিদর্শনে যান এবং ১ অক্টোবর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে পানি সরবরাহ শুরু হয়।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রকল্প,পদ্মা যশলদিয়া,পানি,ঢাকা ওয়াসা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close