নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০১ জুলাই, ২০১৯

বিচারকাজ চলছে দ্রুতগতিতে

গুলশানে জঙ্গি হামলার ৩ বছর

দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলার তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ সোমবার। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে রাজধানী গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় চালানো ভয়ানক জঙ্গি হামলার ঘটনায় করা মামলায় অভিযোগ গঠন হয় সাত মাস আগে। ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের পর ২১১ সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময় সাক্ষ্য দিয়েছেন ৬০ জন। প্রায় প্রতি তারিখে সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হচ্ছেন সাক্ষীরা। রাষ্ট্রপক্ষও আশা করছে, দ্রুত সময়ে মামলাটির নিষ্পত্তি হবে। মামলার সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলেও আশা করছে রাষ্ট্রপক্ষ।

হলি আর্টিসানের জঙ্গি হামলার ঘটনায় গুলশান থানায় যে মামলাটি করা হয়, তা ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন। বর্তমানে মামলাটির বিচারকার্য পরিচালনা করছেন বিচারক মো. মজিবুর রহমান। মামলার ২১১ সাক্ষীর মধ্যে ৬০ জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ২ জুলাই (মঙ্গলবার) দিন ধার্য রয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘হলি আর্টিসানে হামলার ঘটনায় করা মামলার বিচারের দিকে তাকিয়ে আছে সারা বিশ্ব। অভিযোগ গঠন হওয়ার সাত মাসে ২১১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬০ জন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষীরাও ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত হচ্ছেন। দ্রুত সময়ে সাক্ষীদের সাক্ষ্য শেষ করে মামলাটি নিষ্পত্তি করব। মামলার আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা করছি।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ‘হলি আর্টিসান হামলার মূল ১৩ আসামি বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছেন। এখন যে আটজন আছেন তারা ছায়া আসামি। ট্রাইব্যুনালে যে ৬০ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা কেউও আসামিদের নাম বলেননি। আশা করছি, তারা খালাস পাবেন।’

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিসানে হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তাদের হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন। পরে অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় মামলা করে পুলিশ। ২০১৮ সালের ২৩ জুলাই আটজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর। এ ছাড়া বিভিন্ন অভিযানে ১৩ জন নিহত হওয়ায় তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে আটজন বিভিন্ন অভিযানে ও পাঁচজন হলি আর্টিসানেই নিহত হন।

২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ানক জঙ্গি হামলার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। মামলার আসামিরা হলেন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র‌্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ। হলি আর্টিসানে সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’-এ নিহত পাঁচ হামলাকারী হলেন রোহান ইবনে ইমতিয়াজ, মীর সামেহ মোবাশ্বের, নিবরাস ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বল ও খায়রুল ইসলাম ওরফে পায়েল। এ ছাড়া এ মামলার আসামিদের মধ্যে বিভিন্ন ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানে নিহত আটজন হলেন তামীম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।

দেশ-বিদেশ তোলপাড় করা ঘটনার একটি ঢাকার কূটনৈতিক এলাকা গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলা। ওই হামলার পর ঘোষণা দিয়ে জঙ্গি দমনে মাঠে নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এরপর একে একে আবিষ্কৃত সব জঙ্গি আস্তানা গুঁড়িয়ে দিতে থাকে তারা। এসব অভিযানে গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড (পরিকল্পনাকারী) এবং নব্য জেএমবি নেতা তামিম চৌধুরী ও মারজানসহ মারা যায় ৩৪ জঙ্গি।

র‌্যাব ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর ঢাকার কল্যাণপুর, রূপনগর, আজিমপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও র‌্যাব। এ সময় জঙ্গিদের হামলায় চার পুলিশ সদস্য, র‌্যাবের গোয়েন্দা প্রধান ও ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য মারা গেছেন। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম সূত্র জানায়, পুরাতন জেএমবিকে নতুন করে পরিচালনায় এগিয়ে আসেন কানাডাফেরত জঙ্গি তামিম চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম মারজান। এ দুজনই মূলত গুলশান হামলার পরিকল্পনাকারী।

র‌্যাব ও পুলিশ সূত্র জানায়, গুলশান হামলার পর নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শুরু হয় জঙ্গিবিরোধী অভিযান। একের পর এক অভিযানে তছনছ হয়ে যেতে থাকে জঙ্গি আস্তানা ও জঙ্গি নেটওয়ার্ক। জঙ্গি হামলার মাস্টারমাইন্ড, অস্ত্রদাতা, অর্থদাতা, প্রশিক্ষণ-প্রশিক্ষক ও তাদের আশ্রয়দাতাদের শনাক্ত করা হয়। তদন্তে উঠে আসে নিরাপত্তার হুমকি হয়ে দাঁড়ানো উগ্রপন্থি সংগঠন নব্য জেএমবি।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
গুলশানে জঙ্গি হামলা,বিচারকাজ,আইনশৃঙ্খলা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close