হাসান ইমন

  ২১ মে, ২০১৯

লক্কড়-ঝক্কড় বাস থাকবে না

ফাইল ছবি

সড়কপথে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রতিবারের মতো এবারও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। আগামী ২৭ মে থেকে ১ হাজার ৮৯টি বিআরটিসির ঈদ স্পেশাল গাড়ি নামছে। দুর্ঘটনা রোধে ও যানজট নিরসনে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। লক্কড়-ঝক্কড় বাস চলাচল নিয়ন্ত্রণে মাঠে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। মহাসড়কের প্রবেশপথগুলো দখলমুক্ত রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের হয়রানি রোধে থাকবে ভিজিল্যান্স টিম। এছাড়া এবারও ঈদের আগের তিন দিন মহাসড়কে পণ্যবাহী ট্রাক, লরি ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ থাকবে।

প্রতিবারের মতো এবারও লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত গুনেই টিকিট নিয়েছেন ঘরমুখো যাত্রীরা। এখনো ঈদযাত্রা শুরু না হলেও ২৭ মে সোমবার থেকে শুরু হবে। স্বজনের সঙ্গে মহাআনন্দে ঈদ করতে সড়কপথে এই যাত্রা চলবে ঈদের আগের রাত পর্যন্ত। এবার সড়কপথে যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে সড়কপথে এবারও ঈদযাত্রায় চরম দুর্ভোগের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ ও যাত্রী কল্যাণে কর্মরত সংস্থাগুলো। তাদের মতে, নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রার জন্য সরকারের প্রস্তুতি পর্যাপ্ত নয়। দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে দুর্ভোগ বাড়তে পারে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, এবারের ঈদে বৃষ্টিপাত হতে পারে। সড়ক ব্যবস্থাপনায় প্রকৃতিকে বিশেষ বিবেচনায় রাখতে হবে। ঈদযাত্রা তুলনামূলক কম দুর্ভোগের করতে সড়কে সমন্বিত ব্যবস্থা খুব দরকার। যেসব রাস্তার মোড়ে যানজট হয় সেগুলোতে উন্নত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে হবে। সবাইকে শৃঙ্খলা মানতে বাধ্য করলে যানজট কমবে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়ক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিতে হবে। বিশেষ করে চালকদের বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো এবং গাড়ির অতিরিক্ত গতি ও ওভারটেকিং বন্ধ করতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী একজন চালকের এক নাগাড়ে চার ঘণ্টা গাড়ি চালানোর পর বিশ্রাম নিয়ে আবার চার ঘণ্টা গাড়ি চালানোর কথা। কিন্তু ঈদে যাত্রী বেশি থাকায় বাস মালিক ও চালকরা সে নিয়ম মানে না। নিয়মটা মানাতে হবে।

প্রতি বছর ঈদে মহাসড়কগুলোতে বেপরোয়াভাবে বাড়ে পরিবহন সংখ্যা। ভাঙাচোরা অচল গাড়ি জোড়াতালি দিয়ে নামানো হয় সড়কে। কিছু দূর চলার পর বিকল হয়ে রাস্তায় যানজট ও দুর্ভোগ অসহনীয় করে তোলেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এসব নিয়ন্ত্রণে বছর বছর সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর নানা প্রতিশ্রুতি এলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয় না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ও বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য বলছে, বর্তমানে মহাসড়কে চলাচল করছে প্রায় ১২ হাজার বাস। তবে ঈদের সময় তা বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ১৪ হাজারে।

পরিবহন ব্যবসায়ী নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ জানান, স্বাভাবিক সময়ে একমাত্র গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে যায় ১ হাজার ৪০০ দূরপাল্লার বাস। তবে ঈদের সময় এ সংখ্যা বেড়ে হয় ২ হাজার পর্যন্ত। তিনি বলেন, ‘সড়কের যে কন্ডিশন তাতে এখন যে বাস চলছে তার লোডই নিতে পারে না। এর ওপর ঈদে বাস বাড়ানো হলে এক দিনের যাত্রা দুই দিনেও শেষ করা মুশকিল হয়ে যায়।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া জানান, ২০ মে থেকে বিআরটিসির সংশ্লিষ্ট ডিপো থেকে ঈদের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হবে। আগামী ২৭ মে থেকে ‘ঈদ স্পেশাল সার্ভিস’- এর আয়োজন থাকছে। ১০ জুন পর্যন্ত ঈদ সার্ভিসের এই বাস চলাচল করবে। আর রাজধানীর মতিঝিল, জোয়ার সাহারা, কল্যাণপুর, গাবতলী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর বাস ডিপো, যাত্রাবাড়ী এবং গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ বাস ডিপো (ফুলবাড়িয়া সিবিএস-২) থেকে আগাম টিকিট বিক্রি করা হবে।

বিআরটিসির চেয়ারম্যান আরো জানান, সরকারের আমদানিকৃত নতুন ১৫০ বাসসহ এবার ১ হাজার ৮৯টি বাস ঈদ স্পেশাল সার্ভিসে ব্যবহার করা হবে। এর মধ্যে ৬৪৯টি বাস ঢাকা থেকে এবং ৩৯০টি ঢাকার বাইরে থেকে বিভিন্ন জেলায়-উপজেলায় চলাচল করবে। কোথাও কোনো বাস বিকল হলে বা দুর্ঘটনায় পড়লে সেখানে সরবরাহ করার জন্য ৫০টি বাস রিজার্ভ থাকবে বলেও জানান তিনি।

হানিফ এন্টারপ্রাইজের প্রধান কাউন্টার ম্যানেজার হুমায়ূন কবির চুন্নু জানান, মহাসড়কে তাদের বাস চলছে ৬৫০টি। প্রতিবার ঈদে এ সংখ্যা বেড়ে হয় ৮০০-র ওপরে। তবে সড়কের অবস্থা বিবেচনা করে এখন পর্যন্ত অতিরিক্ত গাড়ি নামানোর পরিকল্পনা বাদ দিয়েছে মালিকপক্ষ। তিনি বলেন, যে বাস চলছে তার টাইম শিডিউল মেইন্টেইন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ‘ঢাকা-চিটাগাং রোডে গাড়ি চলছেই না। গাড়ি নামাইয়া মালিক নতুন কইর‌্যা বিপদে পড়তে চায় না।’

গ্রিন লাইন পরিবহনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শফিউল্লাহ বলেন, ‘সড়কের পরিস্থিতি দিন দিন নাজুক হচ্ছে। এতে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছে পরিবহন খাত। ঈদে গাড়ি বাড়ানো তো দূরে থাক বরং কমানোর পরিকল্পনা আছে গ্রিন লাইনের।’

ঈদযাত্রা নিয়ে সম্প্রতি এক সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, ঈদের সাত দিন আগে মহাসড়কের সব নির্মাণকাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সড়ক-মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধে বিআরটিএর মোবাইল কোর্ট কার্যকর থাকবে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় নিয়ন্ত্রণে রাজধানীর টার্মিনালগুলোতে থাকবে ভিজিল্যান্স টিম। ঈদের আগের দিন যাত্রীদের চাপ নিয়ন্ত্রণে গার্মেন্ট কারখানাগুলো ধাপে ধাপে ছুটি দেওয়ার জন্য বিজিএমইএকে অনুরোধ করা হবে। তিনি আরো বলেন, ঈদে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে টোলপ্লাজাগুলোতে সব বুথ চালু থাকবে। ২২টি জাতীয় মহাসড়কে থ্রিহুইলার অটোরিকশা এবং সব শ্রেণির অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
সড়ক,লক্কড়-ঝক্কড় বাস,ঈদযাত্রা
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close