হাসান ইমন

  ০৪ মে, ২০১৯

এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ড

অস্থায়ী অফিসে কার্যক্রম চালাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা

রাজধানীর বনানীতে ফারুক রূপায়ণ (এফআর) টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বনানীর বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ীভাবে অফিস ভাড়া নিয়ে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। আবার অনেকে ভাড়ায় অফিস স্পেস না পেয়ে তাদের কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রেখেছেন। বর্তমানে এই অস্থায়ী অফিস কিংবা স্থায়ী অফিসেও ব্যবসায়ীরা আগুনের আতঙ্কে ভুগছেন।

জানা যায়, ভবনটিতে ছোট-বড় অন্তত ২০ থেকে ২৫টি প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি অফিসের ঠিকানা তাদের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া গেছে। এফআর টাওয়ারে যেসব অফিস রয়েছে বলে জানা গেছে, কিন্ডার ক্যাফে অ্যান্ড বেকারি (দ্বিতীয়তলা), আইএফআইসি ব্যাংক (দ্বিতীয়তলা), ভিভিড হলিডে লিমিটেড (দ্বিতীয়তলা), (৩জি) বুস্টার জুস, (৫জি) কিনড্রেড ক্যাফ, (তৃতীয়তলা) রোজ ডেল, (চতুর্থতলা) ভিডিও গ্লোবাল, (পঞ্চমতলা) আমরা নেটওয়ার্ক লিমিটেড, স্পেক্ট্রা (অষ্টমতলা), বাটার দ্য অয়েল ক্যাফ (৯-১০ ফাস্ট), এম্পায়ার গ্রুপ (৯তলা), আমরা টেকনোলোজিস (১০তলা), ইএউআর সার্ভিস (১১তলা), বোম বার্গার (১২ থেকে ১৩ ফাস্ট), (১৪ এবি) এফআর প্রোপার্টিজ লিমিটেড, মিকা সিকিউরিটিজ (১৬তলা), আমরা আউটসোর্সিং ও এ জেড বিজনেস লিমিটেড (১৯তলা), দ্য অয়েভ (২০তলা), হাব বনানী রেস্টুরেন্ট (দ্বিতীয়তলা), ম্যাগনিটো ডিজিটাল (২০তলা), কাসেম ফুড প্রোডাক্টস (২২তলা), কাসেম ড্রাইসেল (২১, ২২, ২৩তলা)।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বনানীর এফআর টাওয়ারের ৮, ৯ ও ১০তলার অফিসগুলো পুড়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া এর ওপরে ও নিচের তলাগুলোর কিছু অংশ পুড়লেও পানি ও আগুনে মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। কোনো মালামালই সরিয়ে নিতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের কিছু অংশ অস্থায়ীভাবে অফিস নিলেও কিছু অংশ নিতে পারেননি। একইসঙ্গে তারা স্থায়ীভাবে অফিস নেওয়ার চেষ্টা চালালেও অগ্নিনিরোধক ভবন পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে যদি আগুনে সব পুরে যায় তাহলে নতুন করে আবার ব্যবসা শুরু করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য পাননি বলে জানান তারা।

এইউআর সার্ভিস লিমিটেডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স্বপন বলেন, আমাদের অফিস ১১তলায়। আগুনে ১ কোটি ২০ লাখ বা তারও অধিক টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া আগুনে ও পানি কারণে গুরুত্বপূর্ণ মালামাল ও ফাইল নষ্ট হয়ে গেছে। সরকার বা কারো কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি তারা। তিনি আরো বলেন, বনানীর ১৭ রোডের ১৫ নম্বর ভবনে অস্থায়ী অফিস নেওয়া হয়েছে। তবে স্থায়ীভাবে অফিস স্থানান্তরের জন্য ভবন খোঁজা হচ্ছে।

আমরা নেটওয়ার্কস লিমিটেডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, আমাদের অফিস ছিল ৯তলায়। আগুনে বেশি ক্ষতি হয়েছে এই তলারই। ফলে অফিসের মালামালগুলোর মধ্যে কিছুই পাওয়া যায়নি। কম্পিউটার থেকে শুরু করে এসি পর্যন্ত সবই পুড়ে গেছে। তবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেটা না বলতে পারলেও কয়েক কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে জানান তিনি। এছাড়া আগুনে আমাদের দুজন সহকর্মী মারা গেছেন। আরো ১০ জনের মতো আহত হয়েছেন। তবে কোম্পানির পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে কিছু আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, অস্থায়ীভাবে ১৭ নম্বর রোডের ২০ নম্বর ভবনে যাওয়া হলেও স্থায়ীভাবে যাওয়ার জন্য ভবন খোঁজা হচ্ছে। তবে অগ্নিনিরোধক ভবন পাওয়া যাচ্ছে না। এবারের মতো যদি আবার আগুনে পুড়ে তাহলে কোম্পানি বন্ধ হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

এ জেড বিজনেস লিমিটেডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরাফাত বলেন, তাদের কোম্পানি নতুন করে অফিস নেননি। তবে ভবন খোঁজা হচ্ছে। বাটার দি অয়েল ক্যাফের সার্ভিস ম্যানেজার অনিক বলেন, কোম্পানি নতুন করে অফিস নেননি। অগ্নিনিরোধক ভবন পাওয়া গেলে অফিস নেবেন তারা।

প্রসঙ্গত, বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের পাশের ১৭ নম্বর সড়কের এফআর টাওয়ারে গত ২৮ মার্চ দুপুর পৌনে ১টার দিকে আগুন লাগে। এতে ২৫ জন নিহত ও ৭৩ জন আহত হন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ ঘটনায় ভবনের অধিকাংশ ফ্লোর পুড়লেও ৮, ৯ ও ১০তলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনার পরই পরিদর্শনে এসে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী জানিয়েছেন ভবনটি ব্যবহারের উপযোগী নয়।

কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, দুর্ঘটনায় এফআর টাওয়ার কিছুটা হেলে পড়েছে। ভবনের ভেতরের কলাম ও সø্যাব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটি ঠিক করতে অন্তত পাঁচ মাস লাগবে। এছাড়া ভবনে জরুরি নির্গমন পথ ছিল খুবই অপ্রশস্ত। কেবল একটি ফ্লোরে ফায়ার ডোর ছিল। আরো বেশকিছু জায়গায় ত্রুটি রয়েছে। এগুলো সংশোধন ছাড়া ভবনটি ব্যবহার করা যাবে না।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অস্থায়ী অফিস,এফআর টাওয়ার,অগ্নিকাণ্ড
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close