জুবায়ের চৌধুরী

  ০১ মে, ২০১৯

পুলিশের ওপর হামলা : আইএসের দায় স্বীকার!

সতর্কাবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

‘শিগগিরই আসছি, ইনশাআল্লাহ’ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশকে টার্গেট করে বাংলা ভাষায় এমন হুমকির পর নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ হুমকির এক দিন পর রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে দুই জঙ্গি নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। একই দিন রাতে ঢাকার গুলিস্তানে পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় আইএসের ‘দায় স্বীকার’ নতুন করে ভাবাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। তবে এসব ঘটনায় শঙ্কিত না হলেও কঠোর সতর্ক অবস্থায় রয়েছে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

গত ২৯ এপ্রিল গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ এলাকায় কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হাতবোমা হামলার ঘটনায় দুই ট্রাফিক পুলিশ ও এক কমিউনিটি পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এর মধ্যেই আইএস এ হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে খবর দিয়েছে জঙ্গি তৎপরতাবিষয়ক খবরের মুনাফাভিত্তিক মাধ্যম সাইট ইন্টেলিজেন্স। ২০১৬ সালে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশে সংঘটিত কোনো হামলায় আইএস-এর দায় স্বীকারের খবর পাওয়া গেল।

মালয়েশীয় সংবাদমাধ্যম স্ট্রেইট টাইমসের এক প্রতিবেদনে সাইট ইন্টেলিজেন্সের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে পুলিশের ওপর হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস। ওই জঙ্গিগোষ্ঠীর দাবি, ঢাকায় তারা একদল পুলিশ সদস্যের ওপর বিস্ফোরক ডিভাইসের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। পাঁচ বছর পর আইএস প্রধান আবু বকর আল বাগদাদির নতুন একটি ভিডিওবার্তা প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঢাকায় হামলার ঘটনাটি ঘটে।

২৯ এপ্রিল রাত পৌনে ৮টার দিকে গুলিস্তানের ডন প্লাজার সামনে রাস্তায় দায়িত্ব পালনরত পুলিশ সদস্যদের ওপর ককটেল ছুড়ে মারা হয়। এতে পুলিশের তিনজন সদস্য আহত হন। হামলায় আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন ট্রাফিক কনস্টেবল নজরুল ইসলাম (৩৭), লিটন চৌধুরী (৪০) ও কমিউনিটি পুলিশ সদস্য মো. আশিক (২৫)। ঘটনাস্থলে উপস্থিত এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘একটি বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল। নিক্ষেপ করা বোমাটি হাতে তৈরি।’ ঘটনাস্থল থেকে সিআইডির ক্রাইম সিনের সদস্যরা আলামত সংগ্রহ করেছেন।

এদিকে গুলিস্তানে ককটেল বিস্ফোরণে তিন পুলিশের আহত হওয়ার ঘটনাটি কথিত ইসলামিক স্টেট গ্রুপ ঘটিয়েছে, নাকি এর পেছনে অন্য কেউ জড়িত রয়েছে; তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি সাংবাদিকদের কাছে গতকাল বলেছেন, গুলিস্তানে বিস্ফোরিত ককটেলটি বেশ শক্তিশালী ছিল। আইএস যে দাবি করেছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এর সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন, শিগগিরই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া আরো বলেছেন, সারা বিশ্বে উগ্রবাদের যে প্রভাব আছে, বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। তবে সংঘবদ্ধ বা বড় ধরনের নাশকতা করার ক্ষমতা তাদের নেই। কখনো কখনো তারা বিছিন্নভাবে এ ধরনের ঘটনা করার অপচেষ্টা করে, সেগুলো আমরা নজরদারিতে রাখছি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, অতীতে নানা জঙ্গি হামলার পেছনে আইএস দাবি করলেও বাংলাদেশে তাদের অস্তিত্বের ব্যাপারটি আগেও তারা পাননি। সেসব দাবির প্রমাণও মেলেনি। বরং স্থানীয় কিছু জিহাদি গ্রুপকে নানা সময় সক্রিয় বলে জানতে পেরেছেন। ফলে ককটেল হামলাটি আসলে কারা চালিয়েছে, তা তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা কোনো মন্তব্য করতে চান না। আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, এর সঙ্গে জঙ্গি হামলার সংশ্লিষ্টতা নেই, এটি সেখানকার স্থানীয় বিরোধের জেরে ঘটে থাকতে পারে। সেসব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর বেশি তিনি আর কিছু বলতে চাননি।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হলি আর্টিজানের ঘটনার পরে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা কিন্তু অনেকগুণ বেড়েছে। আমাদের রেগুলেশন করা, ইন্টারনেট ট্র্যাক করা, আমাদের ফোনকল ট্র্যাক করা, সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনের ওপর নজরদারি বহু গুণ বেড়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিশ্বের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে অধিকতর ধারণা নিয়ে আসছেন। সেসব অভিজ্ঞতা মাঠে কাজেও লাগাচ্ছেন।

প্রায় তিন বছর আগে প্রথমবারের মতো গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার দায় স্বীকার করেছিল আইএস। দুনিয়াজুড়ে আলোড়ন তৈরি করা ওই হামলায় ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। নিহতদের মধ্যে ৯ জন ইতালি, ৭ জন জাপানি, ৩ জন বাংলাদেশি এবং ১ জন ভারতীয় নাগরিক। এ ছাড়া জঙ্গিদের হামলায় দুই পুলিশ সদস্যও নিহত হন। সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে পাঁচ হামলাকারীও নিহত হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে আরো একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়; যাকে পরে রেস্টুরেন্টের কর্মচারী হিসেবে শনাক্ত করা হয়। হামলাকারীদের মধ্যে অনেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। এরা শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। মামলার তদন্তে ঘটনার সঙ্গে মোট ২১ জন জড়িত ছিল বলে জানতে পারে পুলিশ। এর মধ্যে ঘটনার দিন ও পরে ১৩ জনই নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী,সতর্ক,পুলিশের ওপর হামলা,আইএস
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close