reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ০১ মে, ২০১৯

মহান মে দিবস আজ

পহেলা মে, শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের রক্তঝরা সংগ্রামের গৌরবময় এক ঐতিহাসিক দিন। অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের আত্মত্যাগের স্মরণে ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে দিনটিকে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই মহান মে দিবস পালিত হয়। পালিত হয় বাংলাদেশেও।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে প্রথমবারের মতো মে দিবস পালিত হয়। ওই বছরই সদ্য স্বাধীন দেশে পহেলা মে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে প্রতি বছরই পহেলা মে সরকারি ছুটি থাকে। নানা স্লোগান আর শ্রম অধিকার রক্ষার নানা কথায় উদযাপিত হয় মহান মে দিবস। অথচ অনেক শ্রমিকের কাছে এখনো মে দিবস মানে দলে দলে মাথায় লাল কাপড় বেঁধে গাড়ির শ্রমিকদের মিছিল করা আর সংগঠকদের দেওয়া নাশতা খাওয়া। ইটভাটা শ্রমিকদের টানা ষোলো ঘণ্টা কাজ করতে হয়। নেই কোনো নিয়োগপত্র, কোনো কর্মঘণ্টা, কোনো সাপ্তাহিক ছুটি, শ্রমিক রেজিস্ট্রার, নেই ছুটির বহি, নেই ব্যক্তিগত নিরাপত্তা উপকরণ। শ্রম অধিকার সম্পর্কে এ রকম অন্ধকারে রয়েছেন হবিগঞ্জের বিভিন্ন ইটভাটায় কাজ করা শ্রমিকরা।

ইটভাটার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। কিন্তু যাদের জন্য এইদিন পালন, তারা কি জানেন এর ইতিহাস কিংবা প্রয়োজনীয়তা? নাকি দিন শেষে সেই তিমিরেই অবস্থান?

বছর ঘুরে আবারও খেটে খাওয়া মানুষের স্বপ্ন সার্থকতার দিন মহান মে দিবস এসেছে। তবে আর দশ-পাঁচটা দিবসের মতো আপামর বাঙালির জীবনে এ নিয়ে তেমন কোনো উচ্ছ্বাস নেই। থাকার কথাও নয়। এখানে মে দিবস আসে নেহায়েত ৩০ এপ্রিলের পরদিন ১ মে, সেই হিসেবে।

ওইদিন সরকারি ছুটি থাকে বলে মধ্যবিত্ত বাঙালিরা বউ বাচ্চা নিয়ে একটু ঘুরতে বেরোয়। কিন্তু শ্রমিকরা জানেন না, এই দিনটা শুধুই তাদের জন্য। তাদের ও কাজকে সম্মান করার জন্য এই দিনের আয়োজন। অথচ তাদের নেই ছুটি, এ দিনেও তাদের ছুটতে হয় কাজে। মাথায় তুলতে হয় কাঁচা-পাকা ইট। কাজ করতে হয় বিরামহীন।

অন্যান্য বছরের মতো এবারও এই দিনটিতে সরকারপ্রধান, মন্ত্রিবর্গ, রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধান বিরোধী দলসহ বিরোধী বা সহমতের দলগুলো বাণী দেবে। খুব সকালে পরিবহন শ্রমিকরা মাথায় লালপট্টি বেঁধে বিনা ভাড়ার বাসে-ট্রাকে মিছিল করে হইহুল্লোড় করবেন।

নেতা-নেত্রীরা এখানে-ওখানে ভাষণ দেবেন। মিডিয়ায় দিনভর আরোপিত শ্রমিক দরদি কাসুন্দি বেটে দর্শককে খাওয়ানো হবে। টেলিভিশনগুলোর টকশোয় ভরবে শ্রমিকের অধিকার নিয়ে নানা কাহিনি। পত্রিকায় প্রথম পাতার কোনায় এক ইটভাঙা শ্রমিকের বা নারীশ্রমিকের ছবি ছেপে ক্যাপশন লিখবে, ‘আজ ঐতিহাসিক মে দিবস’! ‘আজও কি শ্রমিকের মুক্তি এসেছে?’ এবং রাত ফুরোলেই ওই মহান মে দিবসের যবনিকা টেনে দেওয়া হবে?

কিন্তু যে শিশু শ্রমিকটি প্রচন্ড রোদে অগণিত ঘণ্টা ধরে গাধার খাটুনি খেটে চলেছে, খুব ভোরে উঠে যার দিন শুরু, আবার রাতে সবার খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে যার ঘুমোনোর সময়, তার জন্য কোনো আট ঘণ্টার মহান মে দিবস নেই। সে জানেও না আট ঘণ্টা মানে কত ঘণ্টা?

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
মে দিবস,পহেলা মে,শ্রমিক
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close