বদরুল আলম মজুমদার

  ২৫ মার্চ, ২০১৯

নগরীর ব্যস্ত মোড়ে নেই ফুটওভারব্রিজ

মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে তিব্বত পর্যন্ত নেই ফুটওভারব্রিজ

রাজধানীর ব্যস্ততম কয়েকটি সড়কের মধ্যে মগবাজার-এয়ারপোর্টের সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজধানীর উত্তরাংশ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ও যানবাহন এ সড়কটি ব্যবহার করে থাকে। এছাড়া রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালের অবস্থান এ সড়কে হওয়ায় যানবাহনের চাপ এ সড়কে অনেক বেশি। সড়কটির দুই পাশ দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীসহ শিল্পাঞ্চলের সাধারণ পথচারী সড়কটির দুই পাশ দিয়ে হেঁটে চলাচল করে নিয়মিতই।

ব্যস্ততম এ সড়কটির মধ্যে নাবিস্কো, তিব্বত ও লাভ রোড মোড়ে বাসস্টপেজ থাকলেও এখানে নেই কোনো ফুটওভারব্রিজ। নাবিস্কোতে একটি মাত্র জেব্রাক্রসিং থাকলেও চালকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তা ব্যবহার করতে পারছেন না সাধারণ পথচারীরা। এ অবস্থায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোনো মতে প্রতিদিনই রাস্তা পার হতে দেখা যায় মানুষকে। আর তাই এ এলাকায় রাস্তা পার হতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়েন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন পথচারী।

নাবিস্কো মোড়ের ফুটপাতের প্রতক্ষ্যদর্শী এক চায়ের দোকানদার প্রতিবেদককে বলেন, মহাখালী বাস টার্মিনাল পার হলে লাভ রোড পর্যন্ত এ সড়কটি একটু ফ্রি থাকে। আবার অপর অংশে লাভ রোড মোড় পার হলে বিমানবন্দরের দিকে আসতেও মহাখালী বাস টার্মিনাল পর্যন্তও একই অবস্থা। পুরো রাস্তার যানজট শেষে বাসগুলো এখানে এসে তাদের গতি বাড়িয়ে দেয়। তাই একটি জেব্রাক্রসিং থাকার পরও এ সুবিধা পাচ্ছেন পথচারীরা। গত দুই দিন আগেও এখানে একটি অটোরিকশাকে থাক্কা দিয়ে চলে যায় বলাকা পরিবহনের একটি বাস এবং ধাক্কা লাগে একজন পথচারীর গায়েও। বেপরোয়া গতি ও চালকেদের হেয়ালিপনার জন্য এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে এখানে একটি ফুটওভারব্রিজ হলে রাস্তা পারের ভোগান্তি কিছুটা কমতে পারে।

সড়কটি পার হওয়া হতে যাওয়া বেসরকারি একটি কোম্পানির একজন নির্বাহীও জানান একই কথা, তার মতে, সড়কটির দুই পাশ দিয়ে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, বাস, মিনিবাস, ট্রাক চলে দ্রুতগতিতে। আর এগুলোর মধ্য দিয়েই হুট করে দৌড় দিয়ে রাস্তা পার হন পথচারীরা। প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে রাস্তা পার হতে দেখা যায় নারী-পুরুষ-শিশুসহ অনেককেই। একটু অসর্তক হলেই হারাতে হতে পারে মূল্যবান জীবন। কিন্তু এসব বিষয় নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই কর্তৃপক্ষের। এমনিই চিত্রের দেখা মিলে এ রোডের অন্য মোড়েও।

রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়কগুলোর মধ্যে অন্যতম এ সড়কটি। আর এ সড়কের পাশ ঘেঁষেই গড়ে উঠেছে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি নানা শিল্প প্রতিষ্ঠান ও প্রথম শ্রেণির প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্থায়ী ক্যাম্পাস। কিন্তু রাস্তা পারাপারে ফুটওভারব্রিজ তো নেই-ই, নেই কোনো ট্রাফিক সিগনালিং ব্যবস্থাও। মোড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আর তাই বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হতে হচ্ছে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ নগরীর কর্মজীবী মানুষদের।

গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে ঘণ্টাখানেকের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতি পাঁচ মিনিটে প্রায় ৮০ থেকে ১০০ জন পথচারী পারাপার হচ্ছে। অফিস ছুটির সময় এই সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। ব্যস্ত পথচারীদের সঙ্গে কথা বললে, সবাই একটি ফুটওভারব্রিজ থাকলে ভালো হতো বলে জানায়।

নাবিস্কো মোড়ে কথা হয় শাম্মী আক্তার নামের একজন গার্মেন্ট কর্মীর সঙ্গে। তিনি তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় একটি গার্মেন্টে চাকরি করেন। নাবিস্কো মোড় দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয় তাকে। তিনি বলেন, এখানে চারদিক দিয়ে রাস্তা বন্ধ। এই মোড়ে গাড়ির চাপও অনেক বেশি, রাস্তা পারাপার হতে অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতে হয়।

তিনি বলেন, প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হচ্ছে আমাদের। একটি ফুটওভারব্রিজ থাকলে আমাদের চলাচলের জন্য সুবিধা হতো, আর শঙ্কামুক্তভাবে রাস্তা পারাপার হতে পারতাম।

একদিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন নামে কয়দিন আগে। পরে সরকার এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একটি আইনও পাস করে। নিরাপদ সড়ক ও পরিবহনের শৃঙ্খলা আনয়নের দাবি দিন দিন আরো জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছে সমাজের বিভিন্ন মহল থেকে। এ অবস্থায় রাজধনীর নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থায় আরো বেশি নজর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন পথচারীরা।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ফুটওভার ব্রিজ,ব্যস্ততম সড়ক,মহাখালী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close