গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

সংসদ লাইব্রেরিতে ঘুরেফিরে পরিচিত মুখ

দুষ্প্রাপ্য বইয়ের সংগ্রহশালা জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংসদ লাইব্রেরি। লক্ষাধিক বই নিয়ে গড়া এই লাইব্রেরিতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জার্নাল-সাময়িকী নিয়মিত রাখা হলেও পারতপক্ষে আইনপ্রণেতারা সে-মুখো হন না। ঘুরেফিরে আসেন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে পরিচিতরাই। অর্থাৎ বিগত সংসদগুলোতে যারা নিয়মিত ছিলেন, একাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরুর পরও তাদেরই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে, প্রথম সংসদ সদস্য হয়ে এরই মধ্যে দুবার সংসদ লাইব্রেরি ব্যবহার করেছেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য শেখ হেলালের ছেলে শেখ তন্ময়। দুষ্প্রাপ্য বাইয়ের এ জগতে এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংসদীয় কার্যক্রমের রেকর্ড খোঁজ করেন সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়। এ সময় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি জানতেও তিনি একাধিক বই সংগ্রহ করেন।

একাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু হয় ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। শপথ নেওয়া ২৯২ (বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের আটজন নির্বাচিত এখনো শপথ নেননি) এমপির মধ্যে সংসদ লাইব্রেরিতে পা পড়েছে মাত্র ২৫ জনের। তবে, সংসদীয় রীতিনীতি অনুসরণ ও জানার জন্য অনেকেই বই লাইব্রেরি থেকে সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে। এর আগে দশম সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যই একবারের জন্যও যাননি তাদের জন্য করা বিস্তৃত পরিসরের সুসজ্জিত এই গ্রন্থাগারে। আর যারা এসেছেন তাদের অনেকেই চলে গেছেন পত্রিকা পড়েই।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি যাত্রা শুরুর পর থেকে দশম সংসদ মেয়াদের আড়াই বছরে গ্রন্থাগারে গিয়েছিলেন ১১২ সংসদ সদস্য। আর একবারের জন্যও যাননি ২৩৮ জন। তবে, সংসদের মেয়াদ শেষে এ সংখ্যা কিছুটা বাড়লেও তা দেড়শোর কোটা ছাড়ায়নি।

জানা গেছে, সংসদ লাইব্রেরি-সংক্রান্ত একটি কমিটি রয়েছে। তবে, এ কমিটির সদস্যরাও লাইব্রেরির পথ মাড়ান না। এ কমিটির সভাপতি জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া। দশম জাতীয় সংসদ থেকে এ পর্যন্ত টানা দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ সংসদ লাইব্রেরি ব্যবহার নিয়ে এমপিদের অনীহার কারণে ক্ষোভও জানিয়েছিলেন।

এ প্রসঙ্গে ডেপুুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, বর্তমান সংসদের যাত্রা শুরু হয়েছে। আমি জেনেছি নবীন-প্রবীণ কয়েকজন সংসদ সদস্য লাইব্রেরি ব্যবহার করেছেন ও করছেন। আশা করি ক্রমান্বয়ে এ সংখ্যা বাড়বে। তবে, নিজেকে জানার পাশাপাশি সংসদীয় রীতিনীতি সম্পর্কে সম্যক ধারণার জন্য লাইব্রেরিওয়ার্ক করার বিকল্প নেই। কারণ আমাদের সংসদ লাইব্রেরিটি অনেক বেশি সমৃদ্ধ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দক্ষ।

গত ৩০ জানুয়ারি নতুন সংসদের যাত্রা শুরু হলেও এখন পর্যন্ত ২৫ সংসদ সদস্য এ লাইব্রেরি ব্যবহার করেছেন। এর মধ্যে একজন মন্ত্রীও রয়েছেন। তবে, তরুণ অনেক এমপি এ সংসদে থাকলেও শেখ তন্ময় ছাড়া অন্য কারো লাইব্রেরি ব্যবহারে আগ্রহ দেখা যায়নি। তারা বলছেন, সংসদের যাত্রা শুরু হয়েছে মাত্র। কিন্তু সময়ের অভাবে তারা সমৃদ্ধ ওই লাইব্রেরিতে যেতে পারেননি। তাদের মধ্যে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) খান মো. নুরুল হুদার ভাগনে নৌকার এমপি শাহাজাদা। গতকাল রোববার এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রথমবার নির্বাচিত হয়ে সংসদে আসা শাহাজাদা বলেন, সময় ও ব্যস্ততার কারণে লাইব্রেরিতে এখনো যাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে, ইচ্ছা আছে, আগামী এপ্রিল থেকে নিয়মিত লাইব্রেরিমুখী হওয়ার। তিনি একা নন, অনেকের বক্তব্য এমন।

তবে, বিদায়ী সংসদের মন্ত্রী ছিলেন এমন কয়েকজনকে এখানে এসে বই সংগ্রহ ও লাইব্রেরি ব্যবহার করেছেন বলে তথ্য মিলেছে। তাদের মধ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী, শিক্ষা উপমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী ও শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু রয়েছেন। আর নিয়মিত লাইব্রেরি ব্যবহার করা এমপিদের মধ্যে আবদুল মজিদ খান, রুস্তুম আলী ফরাজী, পঞ্চানন বিশ্বাস, ইসরাফিল আলম, শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও হাবিবে মিল্লাত।

নিয়মিত লাইব্রেরি কেন ব্যবহার করেন জানতে চাইলে গতকাল জাতীয় পার্টির এমপি ব্যরিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, বিশ্বের যতগুলো গ্রন্থাগার আছে, তার মধ্যে আমাদের সংসদ গ্রন্থাগারটি অনেক বেশি সমৃদ্ধ। সংসদীয় রীতিনীতি, কার্যপ্রণালি বিধি, বিশেষ করে জার্নালগুলো খুবই উপকারী।

তিনি বলেন, সোমবার (আজ) একটি সফরে আমরা চীনে যাচ্ছি। এ-সংক্রান্ত তথ্য জানতে লাইব্রেরিতে গিয়ে জার্নাল ঘেঁটে কিছু তথ্য জানতে পারলাম, যা সফরের কাজে উপকারে আসবে। তবে, সংসদ লাইব্রেরি শুধু সমৃদ্ধ তা নয়, এখানের স্টাফরা খুবই দক্ষ ও অভিজ্ঞ, যোগ করেন জাপার এই নবীন এমপি।

এ ছাড়া সংসদ লাইব্রেরিতে এরই মধ্যে যারা এসেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন অসীম কুমার উকিল, বদরুদেদাজা মো. ফরহাদ হোসেন, শাজাহান খান, আলী আশরাফ, মুনছুর রহমান, জহিরুল ইসলাম, এম এ মতিন, শাহেদুজ্জামান, নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, শাহে আলম, এনামুল হক, রণজিত কুমার বর্মণ, আহসানুল ইসলাম টিটু ও মইনউদ্দীন খান বাদল।

লাইব্রেরি-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন জার্নাল, আইন, অধ্যাদেশ, ঘোষণা, সামরিক বিধি, সরকারি গেজেট, সংসদের বিতর্ক, অ্যাটলাস, মানচিত্র, গবেষণাপত্র, আউট অব প্রিন্ট বহু দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থসহ এ লাইব্রেরির বইসংখ্যা ৮৬ হাজারের অধিক। এখনো পর্যন্ত যারা এখানে এসেছেন, তাদের বেশির ভাগই সংসদীয় কার্যপ্রণালি বিধি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আন্তর্জাতিক জার্নাল এবং পত্রিকায় প্রকাশিত আলোচিত খবরের প্রতি বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন এই আইনপ্রণেতারা। তা ছাড়া বিভিন্ন ডিবেট সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন কেউ কেউ। তবে, যেসব তথ্য তারা জানতে চান সেগুলোর ফটোকপি করে সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া কিছু তথ্য গুগলে সার্চ দিয়ে এমপিদের চাহিদা পূরণ করেন বলে জানান।

লাইব্রেরি ব্যবহারের নিয়মনীতি সম্পর্কে জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা বলেন, ব্যবহারের কয়েক ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমান এমপিরা লাইব্রেরি ব্যবহারের পাশাপাশি বই ইস্যু করে বাসায় নিয়ে চর্চা করতে পারেন। আর পুরনো এমপিরা শুধু লাইব্রেরি ব্যবহার করতে পারলেও কোনো বই এখান থেকে অন্যত্রে নিয়ে যেতে পারেন না। সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বই ইস্যু করে নিতে পারলেও তা দ্রুতই জমা দিতে হয়। এর বাইরে গবেষণার কাজে লাইব্রেরি কেউ ব্যবহার করতে চাইলে লিখিতভাবে জানাতে হয়। কর্তৃপক্ষের সম্মতিতে তারা লাইব্রেরি ব্যবহার করলেও বই নিয়ে যেতে পারেন না।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পরিচিত মুখ,সংসদ লাইব্রেরি,লাইব্রেরি,দুষ্প্রাপ্য বই
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close