হাসান ইমন

  ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

ডিএনসিসি উপনির্বাচন

৩ দিন পরই ভোট, প্রচারণা ঢিমেতালে

আর মাত্র তিন দিন পরই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উপনির্বাচন। নির্বাচনী বিধিমালা অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের ২৪ ঘণ্টা আগে থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা। সে হিসেবে ঘনিয়ে আসছে প্রচারণার শেষ সময়। ঠিক এমন সময়ের প্রচারণায় মেয়র প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বিএনপির প্রার্থী না থাকায় অনেকটা ঢিমেতালে চলছে প্রচারণা।

জানা গেছে, মেয়র প্রার্থীরা ছাড়াও দলীয় নেতাকর্মীরা নগরীতে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনী এলাকার সব এলাকায় যাচ্ছেন ভোট প্রার্থনা করতে। বাদ পড়া এলাকা ক্রমান্বয়ে কভার করছেন তারা। মান-অভিমান ভুলে তাদের সঙ্গে প্রচারণায় যোগ দিচ্ছেন মনোনয়নবঞ্চিতরাও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে জোর প্রচারণা।

দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে এবার মোট মেয়র প্রার্থী পাঁচজন। আওয়ামী লীগ থেকে আতিকুল ইসলাম, জাতীয় পার্টি থেকে শাফিন আহমেদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি থেকে আনিসুর রহমান দেওয়ান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টির শাহীন খান ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুর রহিম।

এই পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন আতিকুল ইসলাম। স্থগিত হওয়ার আগেও তিনি দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। মূলত তখন থেকেই মাঠে রয়েছেন আতিকুল। জাতীয় নির্বাচনের সময় দলসমর্থিত প্রার্থীদের সঙ্গে মাঠে কাজ করেছেন তিনি। ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিতে আসা আতিকুল দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে তুলে ধরছেন সরকারের সফলতা। মেয়র নির্বাচিত হলে জনগণকে দিচ্ছেন উন্নয়নের ও সেবার প্রতিশ্রুতি। প্রতিদিনই চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থান। সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে ভোট চাওয়ার পাশাপাশি যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন সভা-সমাবেশে।

সরেজমিনে গিয়ে ঢাকা উত্তরের বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চারদিকে শুধুই মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামের ব্যানার-পোস্টার। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আতিকুল ইসলাম উত্তরের ভোটারদের সঙ্গে নিয়মিত মতবিনিময় করছেন। সভা-সমাবেশেও অংশ নিচ্ছেন। প্রায় আতিকুল ইসলামের নির্বাচনী বহরের গাড়িগুলোই দৃশ্যমান হচ্ছে। তার পথসভা ও গণসংযোগে সাধারণ মানুষকেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিতে দেখা গেছে।

এদিকে জাতীয় পার্টি থেকে মেয়র প্রার্থী ব্যান্ডশিল্পী শাফিন আহমেদের নির্বাচনী প্রচারণার তেমনটা চোখে না পড়লেও মানিকদী, মাটিকাটা, ইসিবি চত্বর, গুলশানে তার নির্বাচনী পোস্টার দেখা গেছে। অন্য তিন প্রার্থীর তেমন কোনো প্রচারণা দেখা যায়নি।

ভোটের প্রচারণা নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা মার্কা দিয়ে ঢাকা উত্তরের জনগণের সেবা করার জন্য মনোনীত করেছেন। তাই আমি জনগণের কাছে যাচ্ছি। মেয়র নির্বাচিত হলে একটি সুস্থ, সচল, আধুনিক ঢাকা নগরবাসীকে উপহার দিতে আমার পরিকল্পনাগুলো তাদের সামনে তুলে ধরছি। আশা করি, আগামী ২৮ তারিখ জনগণ ভোট দিয়ে আমাকে মেয়র নির্বাচিত করে তাদের সেবা করার সুযোগ করে দেবেন।’

জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাফিন আহমেদ বলেন, অন্যদের কথা বলতে পারব না। তবে আমি আমার নির্বাচনি প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি পুরোদমে। আমরা শেষ দিন পর্যন্ত নির্বাচনে থাকব।

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমার মতো একজন প্রার্থী থাকায় মানুষ ভোট নিয়ে আগ্রহ পাচ্ছে। আমি রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষ নই। শিল্পী জগতের মানুষ। তাই আমি যখন পথে নামি তখন মানুষ আমাকে নিয়ে আগ্রহ দেখায়।

প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক পার্টির শাহীন খান বলেন, আমি তো ব্যাপকভাবে নির্বাচনী প্রচার করছি। বিশাল গাড়িবহর নিয়ে র‌্যালি করেছি। কিন্তু মানুষের নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি না। ডিএনসিসি ২১ নম্বর ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা হায়দার হোসেন বলেন, প্রচারণা বাড়ছে। সারাদিন মাইক বাজছে। প্রার্থীরা এসে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। আমরা শুধু শুনে যাচ্ছি। তবে আমাদের কাছে যাকে যোগ্য মনে হবে, যিনি এলাকার জন্য কাজ করবেন, তাকেই ভোট দেব।

মিরপুরের বাসিন্দা ফখরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে তেমন প্রচারণা চোখে পড়েনি। তবে কয়েকজন প্রার্থীর পোস্টার দেখেছি। এলাকায় মিছিল মিটিংও চোখে পড়েনি। নির্বাচনে বিরোধী দল বিএনপি নেই, তাই কোনো লড়াই হচ্ছে না। ফলে প্রার্থীদেরও তৎপরতা কম। ভোটারদেরও আগ্রহ কম।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে মেয়র পদ শূন্য হয়। নির্বাচন কমিশন গত বছরের ২৬ জানুয়ারি মেয়র পদে উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। কিন্তু তার আগেই ওই বছরের ১৪ জানুয়ারি মেয়র পদে উপনির্বাচন ছয় মাসের জন্য স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট।

গত ১৬ জানুয়ারি হাইকোর্ট জানান, ডিএনসিসি উপনির্বাচনে আর কোনো বাধা নেই। এরপর নির্বাচন কমিশন ২৮ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের দিন ঠিক করে। একই সঙ্গে দুই সিটি করপোরেশনের ২৮টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের নির্বাচন হবে। উত্তরের ১৪ এবং দক্ষিণের ১৪টি ওয়ার্ড। সীমানা জটিলতার কারণে আগে ওই ওয়ার্ডগুলোতে নির্বাচন হয়নি।

জানা যায়, প্রথমবার উপনির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল। কিন্তু ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি ও বাম গণতান্ত্রিক জোট।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
প্রচারণা,ডিএনসিসি উপনির্বাচন,ভোট
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close