গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

লক্ষ্য ঝামেলা এড়ানো

দুবাই-সিঙ্গাপুরের বাঙালিরা হচ্ছেন প্রবাসী ভোটার

প্রবাসী বাঙালিদের ভোটার করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রাথমিকভাবে পরিচ্ছন্ন দুই দেশ—আরব আমিরাতের দুবাই ও সিঙ্গাপুরকে বেছে নিয়েছে। এই দুই দেশে সুস্পষ্টভাবে জানা আছে বাংলাদেশির সংখ্যা কত এবং তারা কম-বেশি উচ্চশিক্ষিত। সবচেয়ে বড় কথা, এখানে বাঙালি পরিচয়ে ভিন্নদেশি তথা রোহিঙ্গা বা অন্য কোনো নাগরিক নেই। প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোটার করতে দীর্ঘদিন ধরেই সচেষ্ট ছিল কমিশন। নানা ধরনের প্রস্তাবও তৈরি করা হয়। কিন্তু এসব প্রস্তাবে ভোটার করার ক্ষেত্রে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ কিংবা সমস্যা তৈরি হতে পারে তার সুস্পষ্ট কারণ ও ব্যাখ্যা ছিল না। ফলে সেগুলো ধরে ভোটার করার কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়াতে সাহস দেখায়নি সাংবিধানিক সংস্থা-ইসি।

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীর মতামত এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনু বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম ও এনআইডির পরিচালক (অপারেশন) মো. আবদুল বাতেনের প্রচেষ্টায় সমস্যা চিহ্নিত করা হয়। পরে কমিশন তাদের প্রস্তাবটি গ্রহণ করে প্রবাসী বাঙালিদের ভোটার করায় চূড়ান্ত সম্মতি দিয়েছে।

এর আগে বাঙালি অধ্যুষিত সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, আরব-আমিরাত ও কুয়েত—এসব দেশকে নির্বাচন করে ভোটার করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়া হয়। অন্য দেশ থেকে জনবহুল ও বাঙালি পরিচয়ে রোহিঙ্গার সংখ্যা বেশি হওয়ায় সিদ্ধান্ত বদলায় ইসি।

নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, সিঙ্গাপুর ও দুবাইয়ে বসবাসরত বাঙালিদের নিরবচ্ছিন্ন ভোটার করতে সেখানকার বাংলাদেশি দূতাবাসগুলো দেশটির সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে দুতিয়ালির কাজ করবে। দেশ দুটির কোথায় ভোটার নিবন্ধন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে, নাগরিকদের ভোটার করার সময় চোখের আইরিশ ও ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না তাও খতিয়ে দেখছে ইসি। একই সঙ্গে কাজটি নির্বিঘেœ করতে টেকনিক্যাল নন টেকিনিক্যাল টিম গঠন করে সেখানের বাঙালিদের ভোটার করা হবে। আর সংশ্লিষ্ট দেশে থাকা বাঙালি ভোটারদের তথ্য সংগ্রহের পর দেশেও যাচাই হবে তার তথ্যের সঠিকতা। দুবাই ও সিঙ্গাপুর দিয়ে ভোটার করার কার্যক্রম হাতে নিলেও এই কার্যক্রমকে পরীক্ষামূলক অর্থাৎ পাইলট প্রকল্প বলছে কমিশন।

জানতে চাইলে কমিশনের যুগ্ম সচিব এবং এনআইডির পরিচালক (অপারেশন) মো. আবদুল বাতেন বলেন, প্রবাসীদের ভোটার করার প্রচেষ্টা নতুন কিছু নয়। সাবেক শামসুল হুদা কমিশন এই উদ্যোগের গোড়াপত্তন করলেও নানা জটিলতায় সফল হননি। পরবর্তী সময়ে রকিব উদ্দিন কমিশনের সময়ে এসে পুরো কার্যক্রমটি থমকে ছিল। এবার খান মো. নুরুল হুদা কমিশন দায়িত্ব নিয়ে প্রবাসীদের ভোটার করতে যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যার মধ্যে স্টেকহোন্ডারদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী দূতাবাসের প্রতিনিধি ঢাকায় কমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে অংশ নেন। সফল ওই সেমিনারের মাধ্যমে ভোটার করার জটিলতা অনেকাংশে কেটে যায়।

তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে সৌদিসহ কয়েকটি দেশ দিয়ে ভোটার করার উদ্যোগ নেয়া হলেও সফলতা নিয়ে সংশয় থাকায় এই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনা হয়। অভিযোগ রয়েছে, শুধু সৌদিতে আড়াই লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। তাই কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে দুবাই ও সিঙ্গাপুরকে বেছে নেওয়া হয়েছে। চলতি ফেব্রুয়ারি অথবা আগামী মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে টিম পাঠিয়ে ভোটার কার্যক্রম শুরু করা হবে, প্রবাসী ভোটার কাজের সঙ্গে যুক্ত এই কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রবাসীদের ভোটার করা একটি চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে কমিশন। তাদের নানা বৈঠকে এসব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ উঠে এসেছে। কারণ ভোটার করার উদ্যোগের সঙ্গে সফলতা-ব্যর্থতা সম্পৃক্ত। দেশের বাইরে থাকা নাগরিকদের ভোটার করার ক্ষেত্রে সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা (কানেকটিভিটি) কি হবে কিংবা তথ্য সংগ্রহকারী নাগরিকদের সব তথ্য ডিভিডিতে করে দেশে যাচাই করা কিংবা বাংলাদেশের সঙ্গে ভিপিএনের মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন করে তাদের ভোটার করা হবে—এগুলোর সমস্যা খতিয়ে দেখছে কমিশন।

কমিশন আশা করছে, সিঙ্গাপুর ও দুবাই কম জনবহুল রাষ্ট্র হওয়ায় কিছুটা সুবিধা মিলবে ইসির এই উদ্যোগের। কারণ অবৈধ বসতি কম, শিক্ষিত-সচেতন জনগোষ্ঠী এবং বাঙালি পরিচয়ে রোহিঙ্গা নেই। এই দুটি দেশকে নির্বাচন করায় ওই তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে না কমিশনকে। ফলে প্রথম পাইলট প্রকল্পে সফলতা আসতে পারে এমন অভিব্যক্তি কমিশন সংশ্লিষ্টদের।

১৯৯৮ সালে দেশের উচ্চ আদালত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার সংবিধান স্বীকৃত বলে ঘোষণা দেন। দীর্ঘ ১৯ বছরেও সেই ঘোষণা বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। বিশ্বের ১৫৭টি দেশে কোটির ওপরে প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। বর্তমান কমিশনের এই উদ্যোগে তাদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের অবসান হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা। এর আগে ১/১১ ড. শামসুল হুদা কমিশনের দুজন কমিশনার এ বিয়য়ে অভিজ্ঞতা নিতে যুক্তরাজ্য সফর করেছিলেন। এর পেছনে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় হয়েছিল। এ নিয়ে সে সময় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন সাবেক কমিশনাররা। প্রবাসীদের ভোটার করার সব জটিলতা শেষে এখন স্বপ্নপূরণ হতে যাচ্ছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ঝামেলা,প্রবাসী ভোটার,দুবাই-সিঙ্গাপুরের বাঙালি,নির্বাচন কমিশন,ইসি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close