reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ৩১ জানুয়ারি, ২০১৯

দুদকের প্রতিবেদন

স্বাস্থ্যের ১১ খাতে দুর্নীতি বেশি হয়

স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটা, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসাসেবায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহার, ওষুধ সরবরাহসহ ১১ খাতে দুর্নীতি বেশি হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে ২৫ দফা সুপারিশও করেছে সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের হাতে তুলে দেন দুদকের কমিশনার (অনুসন্ধান) মোজাম্মেল হক খান। দুদকের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রাতিষ্ঠানিক দল পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনটি তৈরি করে।

দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, এ প্রতিবেদনের আলোকে মন্ত্রণালয় যদি ব্যবস্থা গ্রহণ নেয় তাহলে দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি উল্লেখ করা হয়েছে। তাই প্রতিবেদনটি বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হবে।

দুদকের প্রতিবেদনে দুর্নীতির ১১টি উৎসের কথা তুলে ধরা হয়েছে। সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ অনুসারে স্বাস্থ্য খাতের নিয়োগ-বদলি ও পদোন্নতিতে দুর্নীতি ও অনিয়ম রয়েছে। ডাক্তাররা সাধারণত প্রত্যন্ত এলাকায় থাকতে চান না। সরকারি হাসপাতালে নিয়োগ-বদলি, পদোন্নতি ও প্রশিক্ষণার্থী বাছাইয়ে কোনো নীতিমালা মানা হয় না। এ ছাড়া স্বার্থান্বেষী মহল এসব কাজে টাকা আদায় করে।

দুদকের মতে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের আওতাধীন বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকের কর্মচারীরা একই কর্মস্থলে দীর্ঘদিন কর্মরত থাকার সুবাদে স্থানীয় দালালদের সমন্বয়ে সংঘবদ্ধ একটি চক্রে পরিণত হয়। সাধারণ রোগী বা তাদের স্বজনদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের কাছ থেকে বেআইনিভাবে অতিরিক্ত অর্থ নেয়। সরকারি হাসপাতালের নির্ধারিত ফি ও সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে ঝামেলা এড়িয়ে দ্রুত সেবা পাওয়ার আশায় রোগীরা অর্থের বিনিময়ে হাসপাতালের কর্মচারী বা দালালদের শরণাপন্ন হয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের ক্রয় কমিটিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নিরপেক্ষ ও দক্ষ কর্মকর্তা সংযুক্ত না থাকায় অতি সহজেই সরকারি টাকা আত্মসাতের সুযোগ তৈরি হয়। ক্রয় কমিটির কার্যক্রমে সরকারের যথাযথ নজরদারি না থাকায় ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অন্য পণ্য কেনাকাটায় দুর্নীতি হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোতে টাকা আত্মসাতের উদ্দেশে অনেক অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি কেনা হয়। এ ক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আঁতাত করে সরকারি টাকা ভাগ-বাটোয়ারা হওয়ার অভিযোগ রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জাম চালানোর জন্য দক্ষ জনবল নিয়োগ না দিয়েই যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়। এগুলো দীর্ঘকাল অব্যবহৃত থেকে নষ্ট হয়ে যায়। কোথাও কোথাও যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও মেরামত দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে সরবরাহ বা মেরামত করা হয় না, বরং সমপরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে একটি সংঘবদ্ধ দালাল চক্র সক্রিয় থাকে। এদের কাজ হলো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা অসহায় গরিব রোগীদের উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। বিনিময়ে ওইসব হাসপাতাল থেকে তারা একটি কমিশন পেয়ে থাকে। ফলে গরিব রোগী কম মূল্যে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। যথাযথ নজরদারি না থাকায় হাসপাতালগুলোতে সরকার নির্ধারিত ওষুধ থাকা সত্ত্বেও রোগীদের দেওয়া হয় না। এসব ওষুধ কালোবাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়, কিন্তু রেজিস্ট্রারে হিসাব মিলিয়ে রাখা হয়।

দুদক আরও বলছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে মেধা যাচাই না করে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করানোর অভিযোগও রয়েছে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
দুদক,স্বাস্থ্য খাত,দুর্নীতি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close