জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংক্রান্ত যাবতীয় সেবা গত ১০ জানুয়ারি থেকে বন্ধ। ১১ দিন পার হলেও কবে শুরু হবে, তার সুনির্দিষ্ট কোনো ইঙ্গিত নেই। এতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

অথচ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি জানানোর প্রয়োজনই মনে করেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিনা নোটিসে ইসি প্রায় ১১ কোটি নাগরিকের তথ্য সম্বলিত সার্ভারে ত্রুটির কথা বলে সেবা বন্ধ রেখেছে।

এতে করে মাঠপর্যায়ের অফিসসহ আগারগাঁওয়ের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে বিভিন্ন স্থান থেকে সেবা নিতে আসা নাগরিকেরা পড়ছেন ভোগান্তিতে।

ইসি সূত্র জানায়, সারা দেশে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার মানুষ এনআইডি সেবা নিয়ে থাকেন। গত ১০ জানুয়ারি সার্ভারের কাজ চলছে উল্লেখ করে সেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয় ইসির ইন্টারনাল ওয়েবসাইটে। তবে সেখানেও কবে থেকে এ-সংক্রান্ত কার্যক্রম চালু হবে তা উল্লেখ নেই।

আগারগাঁওয়ের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) ভবনে এনআইডি সংক্রান্ত সেবা দেয়া হয়। সেখানে সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে সেবা নিতে আসা নাগরিকদের ভিড়। সেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা। নির্বাচন কমিশনের এমন আচরণে অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেন।

সার্ভার বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘এটা নিয়ে কোনো কথা বলতে পারব না। কারণ, আমার কাছে আপডেট তথ্য নেই।’

তিনি বলেন, ‘সার্ভার টেকনিক্যাল বিষয়। ইচ্ছে করলে কেউ ডাউনও করতে পারেন, ইচ্ছা করলে কেউ আপও করতে পারেন। তারাই ভাল বলতে পারবেন।’

প্রথমে কথা বলে রাজি না হলেও পরে কমিশনের অনুমতি নিয়ে ইসির যুগ্ম-সচিব ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) মো. আবদুল বাতেন বলেন, ‘আমাদের সার্ভারে প্রায় ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটারের তথ্য রয়েছে। নির্বাচন হয়ে গেল, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, নতুন যারা ভোটার হচ্ছেন, তাদের কাজ করা, তারপর মাইগ্রেশন হচ্ছে, সেগুলোর কাজ করা। সবগুলোই কিন্তু এই সার্ভারের মাধ্যমে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘সার্ভারে আমাদের কয়েকটি সার্ভিস প্রয়োজন হয়। একটি হলো ওরাকল সার্ভিস, যেটি আমেরিকা থেকে আমরা সার্ভিস নেয়। তারপর বিপিএন, এএফআইএস আছে। ওরাকল থেকে যে সার্ভিস আমরা নিচ্ছি, এ সার্ভিসে কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। আমাদের একটি রিকভারি সার্ভারও আছে। ওরাকলে সমস্যা দেখা দিলে ওই সার্ভারেও কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। ওরাকলে সমস্যা দেখা দিলে নির্বাচন কমিশনের যে টেকনিক্যাল টিম আছে, তারা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর প্রায় ১০৩টি কোম্পানি এর মধ্যে ডেলকো কোম্পানি আছে, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও আছে। এসব সেবা চালু রাখতে আমরা সক্ষম হয়েছি।’

‘এর মধ্যে শুধুমাত্র নতুন ভোটার হওয়া, বায়োমেট্রিক এটি এখনো আমরা আপ করতে পারিনি। আর আমাদের মাঠপর্যায়ে উপজেলা বা থানা যে সার্ভিসটি আছে এটি আমরা আপ করতে পারিনি। আমাদের টেকনিক্যাল টিম যেটি জানিয়েছে আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে এটি আপ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। আর এটি হলে আগের মতোই সব সার্ভিস পাওয়া যাবে,’ যোগ করেন আবদুল বাতেন।

এনআইডি সেবা যে বন্ধ রয়েছে, নাগরিকদের ভোগান্তি কমাতে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো প্রয়োজন ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সার্ভিসে সমস্যা হচ্ছে, এটা কিন্তু আমরা ঘোষণা দিয়েছি। উপজেলা বা ইলেকশন কমিশনের ইটিআই ভবনে এ বিষয়ে নোটিস করা আছে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘যারা সার্ভিসটা নিতে আসবেন, তাদের জানানোর জন্যই অফিসগুলোয় নোটিস দেয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কিন্তু আপডেট করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটার এবং যারা মারা গেছেন, তাদের তথ্য ডিলিট করা হলেও সেই তথ্য কিন্তু আমাদের কাছে আছে। এগুলোসহ প্রায় ১১ কোটি ভোটারের ডেটা কিন্তু এই সার্ভারে। যখন আপ করছি তখন মনে করেন ৭০ ভাগ আপ হওয়ার পর ইরর দেখাচ্ছে। এটি হলে আবার নতুন করে আপ করতে হয়। এজন্য আমরা সঠিক সময়টা বলতে পারছিলাম না যে আগামীকালই আপ হয়ে যাবে।’

সমস্যার কারণ জানতে চাইলে আবদুল বাতেন বলেন, ‘সার্ভারের মেয়াদের একটা বিষয় ছিল। প্রতিনিয়ত আমাদের ভোটার হচ্ছে, কারেকশন হচ্ছে। বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক কারণে হতে এতো বেশি মাইগ্রেশন হচ্ছে। এজন্য ডেটা সার্ভারের স্পেসেও প্রভাব পড়ছে। এজন্য আমরা আরেকটি প্রজেক্ট নেয়ার কথা ভাবছি। যেটাতে ডেটার জন্য স্পেস বাড়ানো হবে এবং আমাদের যে সার্ভিসগুলো আছে সেগুলো আপডেট করা হবে। ওখানে সার্ভার কেনার এবং আপডেটের বিষয়ও আছে। এটি সম্পন্ন হলে আমরা আরও অনেক বেশি নিরবিচ্ছিন্ন সার্ভিস দিতে পারব বলে আশা করি।’

এক মাসের মধ্যে প্রজেক্ট প্রপোজাল যাবে। বাকিটা সরকারের উপর নির্ভর করবে বলেও জানান তিনি।

এতে কত টাকা লাগতে পারে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে মার্কেট ভেল্যু বেড়ে গেছে। তারপর আমাদের স্পেস বাড়বে। এটি এখনো ঠিক করা হয়নি। হলে আপনাদেরকে জানানো হবে।’

পিডিএসও/রি.মা