গাজী শাহনেওয়াজ

  ০১ জানুয়ারি, ২০১৯

স্বস্তিতে নির্বাচন কমিশন

ভোট পড়েছে ৮০ শতাংশ

স্বস্তি ফিরেছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। সহিসংতামুক্ত একাদশ জাতীয় নির্বাচন হওয়ায়, এ স্বস্তি এখন সাংবিধানিক সংস্থা এ নির্বাচনে। কারণ সব দল এবং পক্ষ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় উদ্বেগ ছিল ইসির। ক্ষমতায় যাওয়ার প্রতিযোগিতায় সব দল ও জোট ভোটে জয় পেতে মরিয়া না হওয়ায় কম হয়েছে সহিংসতা। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা এবং কড়া নজরদারিও ছিল চোখে পড়ার মতো।

এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনের সংহিসতায় নির্বাচনের কর্মকর্তাসহ অনেকের প্রাণহানি হয়েছিল। অথচ ওই নির্বাচনে ভোট বর্জন করে নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপি, তাদের মিত্র জামায়াতসহ অনেক রাজনৈতিক দল। অনেক প্রাণহানির ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছিল সাবেক কাজী রকিবউদ্দীনের কমিশন। গত দশম জাতীয় নির্বাচনে শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয় নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি সরকার থেকে। এর আগে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনসার সদস্যসহ অনেকে নির্বাচনের সহিংসতাসহ দায়িত্ব পালনকালে নিহত হয়েছিলেন। এবার নির্বাচনে ভোটের আগে পরে মাত্র ১৪ জন নির্বাচনের সহিংসতায় নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ ভোট হলেও কিছু জায়গায় সহিংসতায় ১৪ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে, যা দুঃখজনক। রোববার দেশের ২৯৯ আসনে ৪০ হাজারের বেশি কেন্দ্রে ভোট চলাকালে সহিংসতা ও অনিয়মের কারণে ১৬টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়। এর ফলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের ফল আটকে যায়।

এদিকে, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হওয়ায় ভোটের শতাংশেও প্রভাব পড়েছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে এবারের নির্বাচনে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৮৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের ইতিহাসে সেটাই সর্বোচ্চ। এবার সারা দেশে ভোটার ছিল ১০ কোটি ৪০ লাখের বেশি। সে হিসেবে ৮০ শতাংশ ভোটের হার ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

আর স্বাধীনতার সপক্ষের দল ক্ষমতায় যাওয়ার পথে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ইসির কিছুটা হলেও উদ্বেগ-সংশয় কমিয়ে এনেছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কারণ বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে কমিশনের নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে দফায় দফায় বিতর্ক অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল কে এম নুরুল হুদার কমিশন। সরকারের উন্নয়ন ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের বিজয়ে ও স্বস্তিতে মেয়াদের বাকি সময় কাটবে নির্বিঘ্নে। কারণ আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আসন শতাধিক বা তার বেশি হলে সরকার চাপে পড়ে যেত। এতে চাপে থাকত কমিশন। নির্বাচনের ফল অনুকূল থাকায় দুই পক্ষই থাকবে ফুরফুরে মেজাজে।

একক সংখ্যাগরিষ্ঠত সত্ত্বেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের স্বস্তি এনেছে নির্বাচনে সুপার ক্ষমতাধর দুই দেশ ভারত ও চীন সমর্থন জানানোয়। তবে, আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। নির্বাচনে সহিংসতায় নিহত, বলপ্রয়োগসহ আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে সংস্থাটি। গতকাল এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহিংসতা, বলপ্রয়োগসহ নির্বাচনী আচরণবিধির বহুমুখী লঙ্ঘনের যেসব অভিযোগের কারণে নির্বাচন ও তার ফলাফল প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, তার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের ওপর ভিত্তি করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

একই ধরনের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক পরিচালক মিনাক্ষী গাঙ্গুলি। তিনি এক টুইটবার্তায় বলেন, বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।

এত কিছুর পর ভারত, চীনসহ অনেক দেশ এরই মধ্যে এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে নির্বাচনের নিরঙ্কুশ বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানানোয় স্বস্তি ফেরে আগেই। এদিকে, নির্বাচনের ফল নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে চলেছে। বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট ফল প্রত্যাখ্যান করে পুনঃতফসিলের দাবি জানালেও তা সরাসরি নাকচ করেছে নির্বাচন কমিশন। আর আওয়ামী লীগ ঐক্যফ্রন্টকে রায় মেনে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। আওয়ামী লীগ বলছে, জনগণের দেওয়া রায় তারা (বিএনপি) প্রত্যাখ্যান করতে পারে না।

উল্লেখ্য, নবম জাতীয় নির্বাচনের পর টানা তিন মেয়াদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ। গণতান্ত্রিক যেকোনো রাষ্ট্রে টানা তিনবার বিজয় এবং সরকার পরিচালনার ইতিহাসে বাংলাদেশে নজির সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে নবম সংসদে এককভাবে দুই-তৃতীয়াংশ আসন লাভ করে, দশম সংসদের চিত্র ছিল প্রায় একই। আর সদ্য একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ২৬০ আসনে প্রার্থী দিয়ে ২৫৯টিতে জয়ী হয়েছে, যা বিরল।

কোন নির্বাচনে কত ভোট পড়েছে : বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম সংসদ নির্বাচনে। এই নির্বাচনে ৮৭ শতাংশ ভোট পড়ে। অন্যদিকে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে। এতে ভোট পড়ে ২৬.৫ শতাংশ। এ ছাড়াও, প্রথম সংসদ ৫৪.৯ শতাংশ, দ্বিতীয় সংসদ ৫১.৩ শতাংশ, তৃতীয় সংসদ ৬১.৩ শতাংশ, চতুর্থ সংসদ ৫২.৫ শতাংশ, পঞ্চম সংসদ ৫৫.৪ শতাংশ। অন্যদিকে, সপ্তম সংসদে ৭৫.৪৯ শতাংশ, অষ্টম সংসদে ৭৫ শতাংশ এবং দশম সংসদে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের কত শতাংশ ভোট পড়েছে তা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়নি। তবে, এবার ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে বলে জানা গেছে।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ইসি,নির্বাচন কমিশন,স্বস্তি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close