কাইয়ুম আহমেদ

  ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮

নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ভোটের মাঠ

নানা শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে দুয়ারে দাঁড়িয়ে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। দেশের নাগরিকদের ক্ষমতা প্রয়োগের দিন আগামীকাল। এদিন দেশের সাড়ে ১০ কোটি ভোটার যাদের পক্ষে রায় দেবেন, আগামী পাঁচ বছর তাদের হাতেই থাকবে বাংলাদেশের শাসনদণ্ড। এদিকে এই মাহেন্দ্রক্ষণ যেন নির্বিঘ্ন ও শঙ্কামুক্ত হয়, সে লক্ষ্যে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে সারাদেশ।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালিয়েছেন নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্র থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনার নিরাপত্তায়ও এসেছে বাড়তি তৎপরতা। এত সব ব্যবস্থার নেওয়ার মধ্যে নির্বাচন উৎসবমুখর হবে এবং আতঙ্কের কিছু নেই বলে জানিয়েছেন এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজনকারী সংস্থার নির্বাচন কমিশনের প্রধান সিইসি কে এম নুরুল হুদা।

তিনি বলেছেন, ব্যাপকসংখ্যক ও সর্বাধিক প্রার্থী এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। উৎসবমুখর ভোট হবে, এটাই আশা। গতকাল শুক্রবার সকালে নির্বাচন ভবনে ফল ঘোষণা কেন্দ্র ও গণমাধ্যম বুথ পরিদর্শন করতে গেলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)।

নির্বাচন নিয়ে আতঙ্ক রয়েছে বিএনপি ও বিরোধী পক্ষের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, অবশ্যই ভুল প্রমাণ হবে। আমরা প্রস্তুত, ভোটররা সবাই উৎসবমুখর এবং আনন্দঘন পরিবেশেই ভোট দেবেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের প্রচারণা শুক্রবার সকাল আটটা থেকে বন্ধ হয়ে গেছে। এখন যারা প্রার্থী ও প্রার্থীর সমর্থক সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যার যার অবস্থান থেকে নির্বাচনে অংশ নেবেন। কাউকে কোনো রকমে কেউ যেন বাধা দিতে না পারেন। যার যার ভোট যেন তিনি দিতে পারেন। সবকিছু ঠিক থাকলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা করছেন ভোটাররাও।

যে ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে : নির্বাচন অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষভাবে করতে দেশের ৩০০ নির্বাচনী আসনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা কী হবে, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ৩০০ আসনকে মেট্রোপলিটন এলাকা, মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে এবং বিশেষ এলাকা (পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল, হাওর ইত্যাদি) এই তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেকটি এলাকার ভোটকেন্দ্রগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে; সাধারণ এবং গুরুত্বপূর্ণ। এলাকাভেদে মোতায়েন করা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা একেক রকম। নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে দেশের ৫০০র বেশি উপজেলায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বর্ডার গার্ড সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের কর্মপন্থা নির্ধারণ করবেন। এ ছাড়া যে ৬টি আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণ করা হবে, সেসব আসনের ভোটকেন্দ্রগুলোতে কারিগরি সহায়তায় নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র বা গোলাবারুদ বহন করতে পারবেন না। অধিকাংশ উপজেলায় সেনাবাহিনীর সদস্য ছাড়াও উপকূলীয় জেলাসমূহে নৌবাহিনী এবং সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বর্ডার গার্ডের সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়া বর্ডার গার্ড, কোস্টগার্ড, আর্মড পুলিশ এবং আনসার সদস্যরা মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। অর্থাৎ রিটার্নিং অফিসারের চাহিদার ভিত্তিতে তারা পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনীসহ অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা করবেন।

আজিজুল হাকিম (মানিকগঞ্জ) জানান, মানিকগঞ্জে বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহনে তল্লাশি চালিয়েছে সেনাবাহিনী। গতকাল বিকেলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে ইস্ট বেঙ্গল ১৫ রেজিমেন্টের সদস্যরা তল্লাশি অভিযান চালান। এবার জেলার তিনটি নির্বাচনী এলাকায় ৪ শতাধিক সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

কে এম রুবেল (ফরিদপুর) জানান, জেলার বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি চালিয়েছেন সেনা সদস্যরা। গতকাল বিকেল সাড়ে ৫টায় শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে ৯ পদাতিক ডিভিশনের ক্যাপ্টন রাকিবের নেতৃত্বে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় রাস্তায় চলাচলরত প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের কাগজপত্র ও মানবদেহ পরীক্ষা করে দেখেন তারা।

জাহাঙ্গীর হোসেন (পটুয়াখালী) জানান, জেলার বিভিন্ন স্থানে র‌্যাবের বিশেষ টহল জোরদার করা হয়েছে। যেকোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে সাদা পোশাকেও বিভিন্ন স্থানে র‌্যাব সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন।

র‌্যাব-৮-এর পটুয়াখালী ক্যাম্প কমান্ডার মেজর ইশতিয়াক আহমেদ জানান, নির্বাচনে যেকোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

ভোলা প্রতিনিধি জানান, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। গতকাল সকালে জেলার বিভিন্ন এলাকায় নৌবাহিনী এবং র‌্যাব-৮-এর সদস্যরা শহরে টহল দিয়েছেন। জেলায় নৌবাহিনীর ৭০০ সদস্য, ৮ প্লাটুন (১৯৬ জন) বিজিবি, ১৮ প্লাটুন কোস্টগার্ড সদস্য পৌঁছেছেন। পাশাপাশি ১ হাজার ৭০০ পুলিশ এবং ১৫৬০ জন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়াও ২ জন অফিসারের নেতৃত্বে র‌্যাবের ৮টি টিমের ৮০ জন সদস্য ভোলার ৪টি নির্বাচনী আসনে সার্বক্ষণিক টহল দেবেন।

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে তল্লাশি চালাচ্ছেন সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের সদস্যরা। গতকাল জেলার বিভিন্ন এলাকার আবাসিক হোটেল ও যানবাহনে তল্লাশি শুরু হয়েছে। হবিগঞ্জে ২ ব্যাটালিয়নের প্রায় ৭০০ সেনাসদস্য মোতায়েন রয়েছেন। ৩৬০ পদাতিক ব্রিগেডের অধীনে দায়িত্ব পালন করছেন একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা।

র‌্যাব-৯ হবিগঞ্জের দায়িত্বরত কর্মকর্তা এএসপি উবাইন জানান, র‌্যাব অভিযানে নামার পর থেকে জনমনে স্বস্তি দেখা দিয়েছে। কোনো শঙ্কা নেই।

নাটোর প্রতিনিধি জানান, র‌্যাব-৫-এর সদস্যরা বিকেলে শহরের মাদরাসা মোড় এলাকায় মহড়া দিয়েছেন। সিপিসি-২ ক্যাম্পের কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার যায়েদ শাহরিয়ার ও স্কট কমান্ডার আজমল হোসেনের নেতৃত্বে শতাধিক র‌্যাব সদস্য শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বাইপাস হয়ে দত্তপাড়া, হয়বতপুর, আহম্মেদপুর, বনপাড়া বাইপাস ঘুরে পুনরায় ক্যাম্পে ফিরে আসেন। এ সময় তারা জনগণকে নির্বিঘ্নে ও স্বস্তিতে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ভোটের মাঠ,নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা,নির্বাচন,আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close