গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

জামায়াত ইস্যুতে ইসির জরুরি সভা আজ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন ইস্যুতে আজ রোববার জরুরি সভা ডেকেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ কার্যক্রম ভালোভাবে সম্পন্ন করতে জরুরি এই সভার আহ্বান করা হয়েছে।

ইস্যু তিনটি হচ্ছে— ব্যালট মুদ্রণের অগ্রগতি, নির্বাচনের সামগ্রিক অগ্রগতি এবং জামায়াতের প্রার্থী বহাল থাকা না থাকা-সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের পাশাপাশি সংগঠনটির রাজনৈতিক কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করে রায় রয়েছে আদালতের।

তবে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দলটির রাজনৈতিক মিত্র বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ২২ জন এবং স্বতন্ত্র আরো ৩টিসহ মোট ২৫টিতে লড়ছেন নিষিদ্ধ দলটির নেতারা।

এদিকে, ভোটের আগের সব কার্যক্রম তদারকির পাশাপাশি জামায়াত ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নিতে গতকাল শনিবার অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি সভা হয়। সভায় ব্যালট মুদ্রণ, নির্বাচনের সামগ্রিক কার্যক্রম ও জামায়াত ইস্যুতে আইনি দিকগুলো খতিয়ে দেখা হয়। আজ কমিশন সভায় তাদের মতামত তুলে ধরবেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর নতুন করে জামায়াত প্রার্থীদের বিষয়ে রিট দায়ের করায় বিপাকে পড়ে যায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আদালতের নির্দেশনা নিষ্পত্তি না হওয়ায় সংসদ নির্বাচনের অনেক কাজ আটকে রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ২০টির মতো সংসদীয় আসনের ব্যালট মুদ্রণ বন্ধ রয়েছে। কারণ আজকের মধ্যে ব্যালট মুদ্রণ শেষ করে তা মাঠপর্যায়ে পাঠানোর কথা রয়েছে; ওই ইস্যুতে তা আটকে রয়েছে।

এদিকে, এ নিয়ে সম্প্রতি হাইকোর্টেও দলটির সমর্থিত প্রার্থীতের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, মো. আলী হোসেন, মো. এমদাদুল হক ও হুমায়ুন কবির। জামায়াত নেতাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে ওই রিট আবেদন দাখিল করেন। আবেদনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), নির্বাচন কমিশন সচিবকে বিবাদী করা হয়।

আবেদনে জামায়াত নেতাদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা অবৈধ ঘোষণার প্রশ্নে রুল জারির জন্য আদালতে প্রার্থনা জানানো হয়েছে। এই রুল বিচারাধীন থাকাবস্থায় বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে ইসি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা স্থগিতের আবেদন করা হয়েছে এই রিটে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে রিটটি নিষ্পত্তির নির্দেশনা দিয়েছিলেন আদালত। আজ রোববার ওই আদেশ নিষ্পত্তির শেষ দিন। আদালতের ওই নির্দেশনার পর জামায়াত প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল নিয়ে বিএনপি ও প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়ে চলেছেন।

আওয়ামী লীগ বলছে, যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিলেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং তাদের গড়া দল বিএনপি তাদের মন্ত্রী করে রাজনীতিতে সক্রিয় করেন। দলটি জামায়াতের প্রার্থী বাতিলের জন্য কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানায়। গতকাল শনিবার জামায়াতের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে ইসিকে চিঠি দিয়েছে ‘গৌরব ৭১’ নামে একটি সংগঠন। সংগঠনের পক্ষ থেকে সিইসিকে এ চিঠি পাঠায় সংগঠনটি।

ইসির সংশ্লিষ্টরা জানান, জামায়াতের প্রার্থিতা বাতিল করা-সংক্রান্ত আদালত যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সেখানে সরাসরি নিষিদ্ধ দলটির ধানের শীষের ব্যানারে নির্বাচন করা প্রার্থীদের বিষয়ে কিছু বলেননি। তারা কমিশনকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে রুল ইস্যুটি নিষ্পত্তির নির্দেশনা দিয়েছেন।

ইসির একজন যুগ্মসচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জামায়াতের কোনো প্রার্থী নির্বাচন করছেন, এ বিষয়ে কমিশনের কাছে কোনো তথ্য নেই। বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে যারা নির্বাচন করছেন, সবাই ওই দলের প্রার্থী বলে আমি জানি। এদিকে গতকাল শনিবার বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে জামায়াতের কোনো প্রার্থী নেই, যাদের জামায়াত বলা হচ্ছে, তারা বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী।

ইসির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, কমিশন সভায় বসে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে আজ জরুরি সভা হচ্ছে। এ সভায় পুরো প্রক্রিয়াটি নিষ্পত্তি করে সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়া হবে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
জামায়াত ইসলামী,জরুরি সভা,জামায়াত,ইসি,যুদ্ধাপরাধী
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close