গাজী শাহনেওয়াজ

  ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮

জামায়াতসহ ৩ ইস্যুতে ইসির জরুরি সভা রোববার

## ২০টি সংসদীয় আসনে ব্যালট মুদ্রুণ বন্ধ ## নির্বাচনের সামগ্রীক আগ্রগতি নিয়ে হবে আলোচনা

আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনের অগ্রাধিকার তিন ইস্যুতে রোববার বিকালে জরুরি সভা ডেকেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ কার্যক্রম ভালোভাবে সম্পন্ন করতে তড়িৎ এই সভা আহবান করা হয়েছে। ইস্যু তিনটি হচ্ছে, -ব্যালট মুদ্রুণের অগ্রগতি, নির্বাচনের সামগ্রীক অগ্রগতি এবং জামায়াতের প্রার্থী বহাল থাকা না থাকা সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ।

যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিলের পাশাপাশি সংগঠনটির রাজনৈতিক কার্যক্রমও নিষিদ্ধ করে রায় রয়েছে আদালতের। কিন্তু একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলটির রাজনৈতিক মিত্র বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে দলটির নেতাকর্মীরা। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ২২ জন এবং স্বতন্ত্র আরো ৩টিসহ মোট ২৫টিতে লড়ছেন নিষিদ্ধ দলটির নেতারা।

এদিকে, ভোটের আগের সকল কার্যক্রম তদারিক পাশাপাশি জামায়াত ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নিতে শনিবার অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ব্যালট মুদ্রণ, নির্বাচনের সামগ্রীক কার্যক্রম ও জামায়ত ইস্যুতে আইনি দিকগুলো খতিয়ে দেখা হয়। রোববার কমিশন সভায় তাদের মতামত তুলে ধরবেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর নতুন করে জামায়াত প্রার্থীদের বিষয়ে রিট দায়ের করায় বিপাকে পড়ে যায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আদালতের নির্দেশনা নিষ্পত্তি না হওয়ায় সংসদ নির্বাচনের অনেক কাজ আটকে রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ২০টির মত সংসদীয় আসনের ব্যালট মুদ্রুণ বন্ধ রয়েছে। কারণ রোববারের মধ্যে ব্যালট মুদ্রুণ শেষ করে তা মাঠ পর্যায়ে পাঠানোর কথা রয়েছে; ওই ইস্যুতে তা আটকে রয়েছে।

এদিকে, এ নিয়ে সম্প্রতি হাইকোর্টেও দলটির সমর্থিত প্রার্থীতের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপূরী, মো. আলী হোসেন, মো. এমদাদুল হক ও হুমায়ুন কবির। জামায়াত নেতাদের নির্বাচনে অংশগ্রহনের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে ওই রিট আবেদন দাখিল করেন। আবেদনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), নির্বাচন কমিশন সচিবকে বিবাদী করা হয়।

আবেদনে জামায়াত নেতাদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা অবৈধ ঘোষণার প্রশ্নে রুল জারির জন্য আদালতে প্রার্থনা জানানো হয়েছে। এই রুল বিচারাধীন থাকাবস্থায় বৈধ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে ইসি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা স্থগিতের আবেদন করা হয়েছে এই রিটে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে রিটটি নিস্পত্তির নির্দেশনা দিয়েছিল আদালত। রোববার ওই আদেশ নিস্পত্তির শেষ দিন। এর আগে আদালত তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে কি পারবে না সেটা দেখার দায়িত্ব ইসির।

আদালতের ওই নির্দেশনার পর জামায়াত প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল নিয়ে বিএনপি ও প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। বিএনপি বলছে, জামায়াতের কাউকে তারা মনোনয়ন দেননি; যাদেরকে প্রার্থী করা হয়েছে সবাই বিএনপির প্রার্থী।

আর আওয়ামী লীগ বলছে, যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং তাদের গড়া দল বিএনপি তাদের মন্ত্রী করে রাজনীতিতে সক্রিয় করেন। দলটি জামায়াতের প্রার্থী বাতিলের জন্য কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানায়। শনিবার জামায়াতের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে ইসিকে চিঠি দিয়েছে ‘গৌরব ৭১’ নামে একটি সংগঠন। সংগঠনের পক্ষ থেকে সিইসিকে এ চিঠি পাঠায়।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহিন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সংবিধানের সঙ্গে জামায়াতের দলীয় গঠনতন্ত্র সাংঘর্ষিক হওয়ায় হাইকোর্ট দলটির নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল করেছে। এ ছাড়া একাত্তরের ভূমিকার জন্য দলটিকে ‘ক্রিমিনাল দল’ আখ্যায়িত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জানিয়েছে। এই দলটির শীর্ষ পদে স্বাধীনতা বিরোধীদের থাকা উচিত নয়।

ইসির সংশ্লিষ্টরা জানান, জামায়াতের প্রার্থিতা বাতিল করা সংক্রান্ত আদালত যে নিদের্শনা দিয়েছে সেখানে সরাসরি নিষিদ্ধ দলটির ধানের শীষের ব্যানারে নির্বাচন করা প্রার্থীদের বিষয়ে কিছূ বলেননি। তারা কমিশনকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে রুল ইস্যুটি নিষ্পত্তির নিদের্শনা দিয়েছে। তবে, বিধি অনুযায়ী কমিশনের করণীয় কিছু নেই। তবে, এ কারণে অনেক সংসদীয় আসনের ব্যালট মুদ্রুণ বন্ধ রাখা হয়েছে। সোমবারের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পতি না করা হলে ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের ভোটগ্রহণ কার্যক্রম সুষ্ঠূভাবে সম্পন্ন করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। তাই কমিশন রোববার জরুরি সভা ডেকেছে। মূলত ওই ৩টি ইস্যুতে সমাধান দেখতে চাইছে কমিশন।

ইসির একজন যুগ্ম-সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জামায়াতের কোনও প্রার্থী নির্বাচন করছে এটা কমিশনের কাছে কোনও তথ্য নেই। আমরা বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে যারা নির্বাচন করছে সবাই ওই দলের প্রার্থী বলে জানি। জামায়াত পরিচয়ে ধানের শীষের কোনও প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হলে ওই প্রতীকের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। কারণ ধানের শীষ ইসির কাছে বৈধ প্রতীক।

ইসির একাধিক কর্মকর্তারা বলেন, এ সময় এসে জামায়াতের প্রার্থীদের প্রার্থিতা অবৈধ ঘোষণা করলে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া ভেস্তে যেতে পারে। তাই কমিশন সভায় বসে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে রোববার জরুরি সভা তলব করেছে। এ সভায় পুরো প্রক্রিয়াটি নিষ্পত্তি করে সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জামায়াতের ২২ জন নেতা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এরা হলেন, ঢাকা-১৫ আসনে ডা. শফিকুর রহমান, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে রফিকুল ইসলাম খান, খুলনা-৬ আসনে আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা-১১ আসনে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, খুলনা-৫ আসনে মিয়া গোলাম পারোয়ার, কক্সাবাজার-২ আসনে হামিদুর রহমান আযাদ, পাবনা-৩ আনোয়ারুল ইসলাম, পাবনা-৫ আসনে ইকবাল হোসাইন, যশোর-২ আসনে আবু সাঈদ মো. শাহাদাত হোসাইন, ঠাকুরগাঁও-২ আসনে আবদুল হাকিম, দিনাজপুর-১ আসনে আবু হানিফ, দিনাজপুর-৬ আসনে আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-৩ আসনে আজিজুল ইসলাম, গাইবান্ধা-১ আসনে মাজেদুর রহমান, সাতক্ষীরা-২ আসনে মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৪ আসনে গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ আসনে শামীম সাঈদী, নীলফামারী-২ আসনে মো. মনিরুজ্জামান, ঝিনাইদহ-৩ মতিয়ার রহমান, বাগেরহাট-৩ আসনে ওয়াদুল শেখ, বাগেরহাট-৪ আসনে আব্দুল আলীম ও চট্টগ্রাম-১৫ আসনে শামসুল ইসলাম।

উল্লেখ্য, জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে ২০০৯ সালে রিট হয়। ওই রিটের ওপর জারিকৃত রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০১৩ সালে হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করে।

হাইকোর্টের ওই রায়ে বলা হয়, রাজনৈতিক দল হিসেবে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি (১)(বি)(২) এবং ৯০সি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও সংবিধানপরিপন্থী। এই রায় এখনো বহাল আছে। তিনি বলেন, যেহেতু জামায়াতের নিবন্ধন নেই সেহেতু ওই দলের কোন নেতা নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করতে পারছেন না। যেহেতু নিজস্ব প্রতীকে পারছেন না সেহেতু অন্য কোন দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহনের সুযোগ নেই।

পিডিএসও/রিহাব

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ইসি,জরুরি সভা,জামায়াতসহ,৩ ইস্যু
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close